খুন, নাকি আত্মহত্যা। পুলিশের দাবি ময়দাতদন্তের পর রহস্য সরিয়ে ক্রমশ ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে বিষয়টি। চিকিৎসক প্রজ্ঞাদীপা হালদারের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর সঙ্গী সেনাবাহিনীর চিকিৎসক কৌশিক সর্বাধিকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার সকালে বারাকপুরের ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে পুলিশ কৌশিককে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। এদিন ব্যারাকপুর আদালত কৌশিকের ১০ দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেছে। চিকিৎসক প্রজ্ঞাদীপা হালদারের মৃত্যুর ঘটনায় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই এই পদক্ষেপ করে পুলিশ। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রজ্ঞাদীপার শরীরে অসংখ্য আঘাতের দাগ রয়েছে। ওই আঘাতগুলি মৃত্যুর আগেই তৈরি হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে ওই চিকিৎসকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারকে আত্মহত্যা বলে মনে করেছিল পুলিশ। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং সুইসাইড নোট পাওয়ার পরেই পুলিশ অনেকটাই নিশ্চিত হয় যে, এই মৃত্যুর ঘটনায় প্ররোচনা রয়েছে।
গত সোমবার প্রজ্ঞাদীপার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় বারাকপুর সেনা ছাউনির অফিসার্স কোয়ার্টার্স ম্যান্ডেলা হাউসের ২০ নম্বর ফ্ল্যাটের একটি ঘর থেকে। ওই ঘর থেকেই একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাতে লেখা, ‘যে প্রহরের দাগ নিয়ে চলে গেলাম/ এর শোধ কেউ নেব/ আমার মৃত্যুর জন্য কৌশিক দায়ী।’ সেনাবাহিনীর ওই চিকিৎসকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল প্রজ্ঞাদীপার। তাঁর সঙ্গেই তিনি থাকতেন। কৌশিক লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদার। এদিকে, চিকিৎসক হলেও লেখালেখির শখ ছিল প্রজ্ঞাদীপার। তিনি প্রতিদিনই সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু না কিছু পোস্ট করতেন।
অনেকেই তার লেখা পছন্দ করতেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা কম ছিল না। তবে কী কারণে আত্মহত্যা বা এই মৃত্যু তা এখনও জানতে পারিনি পুলিশ। এরপরেই পুলিশ কৌশিককে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তারপরে এদিন তাঁকে গ্রেফতার করেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ জানিয়েছে, যে ঘরে মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে, সেই ঘরের জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল। বিছানার পাশের টেবিলে হুইস্কির বোতল পাওয়া গিয়েছে। তাতেই একাধিক প্রশ্ন উকি মারে তদন্তকারীদের মনে। যদিও সেনাবাহিনীর ওই পদস্থ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার পরেই ইস্টার্ন কমান্ড চুপ রয়েছে। তবে এ বিষয়ে দ্রুত কোনও পদক্ষেপ করতে চাইছেন না বারাকপুরের পুলিশ কমিশনার রাজোরিয়া তিনি বলেন, ‘গোটা ঘরের ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে। ফেসবুকে অনেক কিছুই লেখা যায়। তবে এটা খুব স্পর্শকাতর বিষয় তাই কোনওরকম তড়িঘড়ি করা যাবে না। এটি আত্মহত্যা না খুন তা তদন্ত সাপেক্ষ। তবে ময়না তদন্তের রিপোর্ট দেখে মনে হচ্ছে আত্মহত্যায় প্ররোচনা রয়েছে।’ এদিকে, মৃতার এক আত্মীয় থানায় অভিযোগ জানিয়ে তিনি বিচার চেয়েছেন।