রাজ্যে করোনার প্রকোপ দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। ৩ হাজারের গন্ডি পার করে এখন ৪ হাজারও পেরিয়েছে। একদিকে রাজনৈতিক জমায়েত, বাজার-হাট, আনন্দ উৎসবের ভিড়-ভাট্টা তো রয়েছে। একইসঙ্গে মাস্ক ছাড়া একশ্রেণী যে ভাবে ঘুরছে মনে হবে যেন করোনা বলে কিছু নেই। এদিকে উদ্বেগ বাড়ছে চিকিৎসক মহলে। রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৫৭ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। এই তালিকায় স্বাস্থ্য দফতরের অধিকর্তা থেকে অন্য চিকিৎসকরাও রয়েছেন। প্রবীণ চিকিৎসকদের পাশাপাশি তরুণ চিকিৎসকরাও কোভিড-১৯-এর বলি হয়েছেন। স্বাস্থ্য কর্মীদের আক্রান্তদের সংখ্যাও বাড়ছে দিনের পর দিন। চিকিৎসক মহলের দাবি, স্বাস্থ্যকর্মীরা পরিশ্রান্ত হয়ে যাচ্ছেন। অথচ সরকার ও সাধারণ মানুষের একাংশের জন্য করোনার বিরুদ্ধে লড়াই বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। কোভিড আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকদের মৃত্যু হলেও সরকারি সাহায্যও মিলছে না। বলা হচ্ছে তাঁরা কোভিড ডিউটিতে ছিলেন না।
অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স-এর সাধারণ সম্পাদক ডা. মানস গুমটা বলেন, "আমরা ক্লান্ত, অবসন্ন। ইতিমধ্যে প্রায় ৫৭ জন চিকিৎসকের কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে ক্রমশ স্বাস্থ্য কর্মীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। কী করে আমরা লড়ব? কাদের নিয়ে লড়ব? তার মাঝে উৎসবকে যেভাবে উৎসাহিত করা হল। পুজো নিশ্চয় হবে, তার ওপর নিয়ন্ত্রণে করার চেষ্টা হল না। হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত। সরকার ও মানুষের এসব বোঝা দরকার। মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকলে আমাদেরও খারাপ লাগবে। বেদনাদায়ক পরিস্থিতি হবে। আমরা হয়ত চিকিৎসা করতে পারব না। সব রাজনৈতিক দলের কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল। তারা অনুষ্ঠান বন্ধ করছে না।"
মানসবাবুর দাবি, "কোভিড আক্রান্ত চিকিৎসকরা সরকারি সাহায্য পাচ্ছে না। সরকার বলছে কোভিড চিকিৎসায় যুক্ত না থাকলে সাহায্য দেওয়া হবে না। গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়ে গিয়েছে, ওপিডি থেকেও রোগ ছড়াতে পারে। এমনকী কোভিড যোদ্ধা হিসেবে ১ লক্ষ টাকাও পাচ্ছেন না। আমরা এবিষয়ে মুখ্য়মন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। শুধু চিকিৎসকরা নয় সমস্ত স্বাস্থ্য কর্মীদের এই সাহায্য পাওয়া উচিত।
চিকিৎসকদের একটা অংশ মনে করেন করোনার গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়ে গেলেও সচেতনতার বড্ড অভাব। যার ফল মারাত্মক হতে পারে বলে মনে করছে চিকিৎসক মহল। বিশিষ্ট চিকিৎসক সৌমেন দাস বলেন, 'চিকিৎসকদের ওপর চাপ রয়েছে। সরকার বা মানুষের কাছ থেকে সহযোগিতা মিলছে না। এটা একটা বড় অসুবিধা।
হাইকোর্ট রায় দিয়েছে তাতে পুজো মন্ডপে ভিড় আটকাবে কিন্তু বাকি ক্ষেত্রগুলিতে কী হবে? ডাক্তার শুধু নয় স্বাস্থ্য কর্মীরা সকলেই অসুবিধার মধ্যে পড়েছে। আমরা একেবারেই সচেতন নই। পুজোর অনুদানের টাকা অনেকভাবেই ব্যবহার করা যেত। লোকজনকে বেরনোর ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এর ফল কিন্তু মারাত্মক হবে।"
করোনার বিরুদ্ধে কত দিন লড়াই চলবে তা কেই বলতে পারে না। এখনও পর্যন্ত ভ্যাকসিন আবিস্কার হয়নি। অথচ এরাজ্যে ক্রমশ বাড়ছে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা। ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর ফোরামের পক্ষে ডা. পুন্যব্রত গুণ বলেন, "করোনা সংক্রমণ এখানে ৭ মাস হয়ে গেল। চিকিৎসা কর্মীরা সকলেই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। তবে আমরা জানি না আর কত দিন লড়াই করতে হবে। নিকট ভবিষ্যতে লড়াই ছেড়ে দেওয়ার জায়গা নেই। পুজোর আগে ও পরে জনসমাগম হওয়ার সম্ভবানা হওয়াটা একেবারেই ঠিক নয়। এরকম হলে কেরালার মতই অবস্থা হবে এই রাজ্যে।"
দুর্গাপুজোয় হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার পক্ষে আদালতে পিটিশন দেয় ডক্টর ফোরাম। রাজনৈতিক দলগুলির জমায়েতেও রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করেন পুন্যব্রত গুণ।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন