রোগী মৃত্যু বা চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগকে কেন্দ্র করে রাজ্যের সরকারি হাসপাতলে চিকিৎসক-রোগীর পরিবারের মধ্যে বচসা-বিবাদ থেকে সংঘর্ষ নতুন কোনও ঘটনা নয়। বাঁকুড়া সম্মেলনী মেডিক্যাল কলেজ থেকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ বা এসএসকেএম, সর্বত্র এই ঘটনা রোজকার হয়ে দাড়িয়েছে। খুব বেশি হলে প্রতিবাদে জুনিয়র চিকিৎসকরা ধর্মঘট করেন, যার ফলে চিকিৎসা পরিষেবা শিকেয় উঠে যায়।
গতকাল নীলরতন সরকার হাসপাতালে তৃণমূলপন্থী প্রোগ্রেসিভ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের এক সভায় রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা (প্রশাসন) ডাঃ অজয় চক্রবর্তী স্পষ্ট জানালেন, রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা "আতঙ্কের মধ্যে" রয়েছে। রোগীর পরিবারের লোকজন নিয়মিত মারধর করছেন চিকিৎসকদের। তবে এবার এ ব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন- চার বছরের শিশুর গলা থেকে বেরোল সাইকেলের স্পোক, নীলরতনে সফল অস্ত্রোপচার
এই সম্মলনে অন্যান্যদের মধ্যে হাজির ছিলেন সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায় ও সেচ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। সংগঠন ৫৩ জন চিকিৎসককে 'চিকিৎসা রত্ন' পুরস্কারে সম্মানিত করে। এছাড়া সম্মান জানানো হয় সাতজন স্বাস্থ্য সেবিকা, ন'জন স্বাস্থ্যসাথী, ও পাঁচজন স্বাস্থ্য সহায়ককে।
এরপরেই ডাঃ চক্রবর্তী বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্বীকার করেন, রাজ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আতঙ্কে ভুগছে। তিনি বলেন, "রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। চিকিৎসকদের ওপর রোজ যেভাবে আক্রমন হচ্ছে, তাতে তাঁরা ভয় পেতে বাধ্য। এমনকী সরকারি চাকরি করার জন্য পর্যন্ত চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে না। এক্ষেত্রেও রোজই কাউন্সেলিং হচ্ছে।" পরে তাঁকে জিজ্ঞাসা করে হলে তিনি বলেন, "কেউ আক্রমণ করলে ভয় পাব না?"
আরও পড়ুন- অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় অনুমতি না মেলায় বিধানসভা বয়কট করল বাম-কংগ্রেস
ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে কী পদক্ষেপ নেবে স্বাস্থ্য দপ্তর? ডাঃ চক্রবর্তী বলেন, "এসবের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে কলকাতায় কয়েকটি হাসপাতালে পুলিশকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। গ্রামীণ হাসপাতালের ক্ষেত্রেও পুলিশ দেওয়া হবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে না হলেও ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র পর্যন্ত পুলিশ পোস্টিং করা হবে। এর ফলে ভরসা পাবেন চিকিৎসকরা। পাশাপাশি এই ধরনের ঘটনা ঘটলে পুলিশকে বলা হবে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নিতে।"
এদিনের অনুষ্ঠানের কথিত উদ্দেশ্য ছিল অ্যাসোসিয়েশনের বিজয়া সম্মলন এবং মিলন উৎসব। সংগঠনের নেতাদের মুখ দেখাতে চিকিৎসক, নার্স, কর্মীসহ অনেকেই যোগ দিয়েছিলেন। অভিযোগ উঠেছে, তার ফলে কিছু সময়ের জন্য এনআরএস হাসপাতালের কাজ কার্যত বন্ধ ছিল। কারণ কেউ কেউ মনে করছেন তৃণমূলপন্থী ওই সংগঠনের সভায় হাজিরা না দিলে কাজের ক্ষেত্রে "অসুবিধে" হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যেত। যদিও হাসপাতালের সুপার সৌরভ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, "কোনও সমস্যা হয়নি। শিফটিং ডিউটি ছিল, তারপর গিয়েছিলেন সবাই।"
আরও পড়ুন- এনআরসি নিয়ে এবার এবিভিপির কলকাতা চলো ৩০ নভেম্বর
পরিশেষে অনুষ্ঠান সম্পর্কে কিছু কথা। এই সম্মলনে আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ডাঃ নির্মল মাজিকেই নানা সংগঠনের তরফ থেকে ফুলের তোড়া দিয়ে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। মঞ্চে বসে নির্মলবাবু নিজেই তাঁর বিভিন্ন সংগঠনের পদে থাকার কথা ঘোষককে বলে চলেছেন। ঘোষকও তা শুনে মাইকে পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছেন। তবে এখানেই শেষ নয়। বক্তব্য রাখছিলেন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। হঠাৎ মঞ্চে আগমন ঘটে চিকিৎসক বাসুদেব মুখোপাধ্যায়ের। ঘোষক মন্ত্রীর বক্তব্য থামিয়ে দিয়ে ওই চিকিৎসক-অভিনেতাকে স্বাগত জানান। তারপর তাঁকে সম্বর্ধনার পালা চলে। সৌমেনবাবু আবার মাইক্রোফোন হাতে নেন। এমন ভাবে দু'তিনবার চেষ্টা করেন কিছু বলার। তারপরে অনুষ্ঠানের বহর দেখে হাল ছেড়ে দেন। বিহ্বল মুখে বহুক্ষণ দাঁড়িয়ে বসে পড়েন চেয়ারে।