পাঁচ জন অভিযুক্ত ছাড়া পায় কী করে? কেন এগোল না তদন্ত? এনআরএস ডাক্তার নিগ্রহকাণ্ডে সোমবার পাঁচ অভিযুক্তের জামিন মেলার পর ক্ষোভে ফুঁসতে ফুঁসতে এই প্রশ্নগুলিই তুলছেন আন্দোলনকারী ডাক্তাররা। মঙ্গলবার স্বাস্থ্যভবনের বৈঠকে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের তোপের মুখেও পড়তে হয়েছে স্বাস্থ্য কর্তা ও পুলিশকে। আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন না তুললেও পুলিশের গাফিলতি নিয়ে ইতিমধ্যে সরব হয়েছেন প্রতিবাদী ডাক্তাররা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৭ জুন এনআরএসকাণ্ডের তদন্তে গতির আনার নির্দেশ দিলেও কেন সেই তদন্ত এগোল না, মূলত এই প্রশ্নেই সরব হয়েছেন ডাক্তাররা। ১৫ দিনের মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা না নেওয়া হলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ডাঃ অর্চিষ্মান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি পুনরায় দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে মঙ্গলবার। সূত্রের খবর, বৈঠকে পুলিশের পক্ষ থেকে জানান হয়েছে, পাঁচ অভিযুক্তকে ছেড়ে দিলেও তদন্ত জারি রয়েছে। দোষীরা অবশ্যই শাস্তি পাবে।
আরও পড়ুন: মমতা-জুনিয়র ডাক্তার বৈঠক ইতিবাচক, একনজরে এনআরএস কাণ্ড
মঙ্গলবারের বৈঠকে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রশ্নের মুখে পুলিশও কোনও সুদত্তর দিতে পারেনি বলে জানিয়েছেন বৈঠকে উপস্থিত ডাঃ অর্চিষ্মান বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, জামিনের বিরোধিতা করে কি আদালত অবমাননা করছেন না জুনিয়র ডাক্তাররা? এর উত্তরে ডাঃ অর্চিষ্মান বন্দ্যোপাধ্যায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন, "যারা মূল দোষী, তারা এখনও অধরা। সে জায়গায় কিছু নির্দোষ মানুষকে ধরে নিলে কখনই তদন্ত এগোবে না। খুব স্বাভাবিক বিষয়, আদালত যদি দেখে তদন্তে কোনও অগ্রগতি নেই এবং উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তাহলে আদালত অভিযুক্তকে জামিন দিতে বাধ্য "।
অন্যদিকে, মহম্মদ শাইদের পরিবারের সদস্য আবদুল্লা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন, "১০ তারিখ পুলিশ যদি আমাদের তৎপরতায় ঝামেলা না থামাত, তাহলে আরও বড় ঘটনা ঘটে যেত। তবে যে পাঁচ জনকে পুলিশ আটক করেছিল তাঁদের আমরা চিনতাম না। তাঁরা আমাদের পরিবারের সদস্য নয়। আমরা পাঁচজনের মুক্তিতে খুশি হলেও, এই একচোখা মনোভাবে হতাশ"।
আরও পড়ুন:কলকাতায় ফের অঙ্গ প্রতিস্থাপন, জোকার মহিলার ৫ অঙ্গদান
সূত্রের খবর, মঙ্গলবারের বৈঠকে জুনিয়র ডাক্তারদের সম্পূর্ণ সমর্থন করেন রাজ্যের মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র। তিনি বলেন, তদন্ত না এগোনোয় পাঁচ অভিযুক্ত ছাড়া পেয়ে যায়, এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে ডাক্তার নিগ্রহের ক্ষেত্রে স্পর্ধা ক্রমশ বেড়ে যাবে। শীঘ্রই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খ চার্জশিট তৈরি করতে হবে। তাই তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আমর মনে হয়, আন্দোলনকারীদের চাপেই পুলিশ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছিল"।
ডাঃ অর্চিষ্মান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ১০ জুনের আগে জমে থাকা ৬২ টি ডাক্তার নিগ্রহের ঘটনার তালিকা তুলে দেওয়া হয়েছে পুলিশের হাতে। বৈঠকে বলা হয়, পুলিশ বহুবার জানিয়েছে যে ডাক্তার নিগ্রহের কোনো রিপোর্ট খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁরা, তাই আমরা নিজেদের দায়িত্বে পুলিশের কাজে সাহায্য করার জন্য এই তালিকা তৈরি করেছি। এই তালিকা তুলে দেওয়া হয়েছে বৈঠকে উপস্থিত ডিসি কমব্যাট নভিন্দর সিং-এর হাতে।