দুর্গাপুজোর মুখ সারমেয়, পোষ্য-বান্ধব পুজোমণ্ডপে বিরাট চমক! মহালয়ার সন্ধ্যায় ইতিহাসের সাক্ষী থাকল খাস কলকাতা। পুজো উদ্বোধনে প্রধান অতিথি হিসেবে দেখা গেল মলি, ক্যামফর, লিজা, ও ডিঙ্কি কে। কিন্তু কারা এরা? সকলেই কলকাতা পুলিশের ডগ স্কোয়াড-এর সদস্য। কলকাতার প্রথম পোষ্য বান্ধব দুর্গাপুজোর উদ্বোধন বলে কথা। জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হয়ে গেল কলকাতার সেরা থিমের পুজো উদ্বোধন। সৌজন্যে বিধান সরণি অ্যাটলাস ক্লাব। এই প্রথম কোনও দুর্গাপুজোয় অংশগ্রহণ করল কলকাতা পুলিশের ডগ স্কোয়াডের সদস্যরা। আর তাকে ঘিরেই চরম উন্মাদনা।
সেই পুরাণ-মহাকাব্যে তাদের কথা উঠে এসেছে বার বার। মহাপ্রস্থানের পথে শেষপর্যন্ত যুধিষ্ঠিরের সঙ্গী ছিল সেই। আর তাদের-ই কি না দূর-ছাই করা! তারাও তো পরিবারের সদস্য। মানুষের সব থেকে কাছের সুখে-দুঃখের সঙ্গী তারা, গল্প-সিনেমাতেও তার উদাহরণ রয়েছে বার বার। সেই সারমেয়রা কেন ব্রাত্য হবে দেবীর পুজোয়। সেই ভাবনা থেকেই এবার কলকাতার দুর্গাপুজোয় থিম ভাবনায় চারপেয়ে, মানুষের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সঙ্গী। দুর্গাপুজোর পুজোর মুখ এই সারমেয়ই। পোষ্য-বান্ধব মণ্ডপ এবারের দুর্গাপুজোয় নতুন চমক। ভাবনায় কলকাতার বিধান সরণির অ্যাটলাস ক্লাব।
পুজোতে যখন পাড়ার সবাই আনন্দে সকলে মেতে ওঠেন, তখন তারা কেন ব্রাত্য থাকবে! পুজোর সময় বহু মানুষের যাতায়াতে যাতে সমস্যা না হয় সে কারণে তাদের সরতে হয়। কিন্তু উত্তর কলকাতার বিধান সরণির অ্যাটলাস ক্লাবের থিম ভাবনায় বড় চমক এই পথকুকুরই। ৩৯ বছরের পুজোয় এবার তাদের থিম- ‘অনন্ত আশ্রয়’।
আরও পড়ুন : < প্রতিপদে পুজো শুরু মহিষাদল রাজবাড়িতে, জৌলুস কমলেও অটুট পুরনো রীতি-রেওয়াজ >
সম্প্রতি নয়ডার এক দম্পতি শিরোনামে আসেন তাঁদের পোষ্য সারমেয়কে নিয়ে কেদারনাথ দর্শনে গিয়ে। যার জেরে পবিত্র তীর্থস্থানের পবিত্রতা নষ্ট হয়েছে বলে বিস্তর অভিযোগ ওঠে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরালও সেই ঘটনা। সেই থেকেই এমন ভাবনা মাথায় আসে থিমশিল্পী সায়ক রাজের। তাঁর কথায়, “মহাদেব বা পশুপতির মন্দিরে যদি কোনও পশু হাজির হয় তাহলে তাতে আপত্তি কোথায়? পুরাণ থেকে মহাকাব্য, এমনকী বামা খ্যাপা থেকে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনেও সারমেয়র উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে। তাহলে দুর্গাপুজোয় কেন ব্রাত্য থাকবে ওরা?”
শিল্পী জানিয়েছেন, “থিম ভাবনায় কুকুরের উপস্থিতিও থাকছে। পোষ্য-বান্ধব মণ্ডপ তৈরি করা হচ্ছে। মাতৃরূপে দেখা যাবে দেবী দুর্গাকে। আর মায়ের কাছে থাকবে একটি মা কুকুর। সে নিজের সন্তানদের নিরাপত্তা প্রার্থনা করছে। অনন্ত আশ্রয় সেই ভাবনার-ই রূপ।”
এছাড়াও পুজোর থিমেই শুধু সারমেয় থাকছে তা নয়। প্রকৃত অর্থে পোষ্য-বান্ধব মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে যাঁরা পোষ্য নিয়ে ঠাকুর দেখতে আসবেন তাঁদের সুবিধার্থে। প্রতিপদ থেকে তৃতীয় পর্যন্ত মণ্ডপে যাঁরা পোষ্য নিয়ে আসবেন তাঁদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। আর পুজোর দিনগুলোতে আসতে চান, তাঁদের জন্য থাকছে হেল্পলাইন নম্বর। ১৫ মিনিট আগে পুজো পরিদর্শনের জন্য ফোন করলেই হবে। মণ্ডপে থাকবেন পশু চিকিৎসক থেকে ট্রেনাররা। সবদিক দিয়ে পোষ্যদের জন্যই থিম এবং মণ্ডপের পরিকল্পনা করেছেন সায়ক রাজ।
আর গতকাল সন্ধ্যায় পোষ্য-বান্ধব পুজোমণ্ডপের উদ্বোধন ঘিরেও ছিল চমকের ছড়াছড়ি। পুজোমন্ডপের উদ্বোধনে সটান হাজির মলি, ক্যামফর, লিজা, ও ডিঙ্কি। আর তাদের কীর্তি নজর কাড়ল সেখানে হাজির সকলের। কলকাতা পুলিশের ডগ স্কোয়াডকেদিয়ে পুজো উদ্বোধন এই প্রথম এমনটাই দাবি করেছে কলকাতা পুলিশ। আর নিজেদের ভাবনা কে বাস্তবায়িত করতে পেরে বেজায় খুশি ক্লাব ।