Advertisment

অভিমানেই নচিকেতাকে গানে জবাব দিয়েছি: ডা: অনির্বাণ দত্ত

'ও ডাক্তারে'র জবাবে 'আমি ডাক্তার'। ১৬ বছর পর। ঠিক যেন সময়ের অপেক্ষা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ডা: অনির্বাণ দত্ত

'ও ডাক্তারে'র জবাবে 'আমি ডাক্তার'। ১৬ বছর পর। ঠিক যেন সময়ের অপেক্ষা। করোনা আতঙ্কে কাঁপছে সারা বিশ্ব। ভারত তথা বাংলাও এর বাইরে নয়। এখানেও করোনা মোকাবিলায় চলছে লকডাউন। লড়াইয়ের ময়দানে আছেন অনেকেই কিন্তু চিকিৎসক, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীরা রয়েছেন সামনের সারিতে। একেবারে মুখোমুখি। এই পরিস্থিতিতে গানের জবাব গানেই দিলেন এক তরুণ চিকিৎসক, ডা: অনির্বাণ দত্ত। সেই গান নিমিষেই ভাইরাল সোশাল মিডিয়ায়। কিন্তু কেন এমন গান করলেন ওই চিকিৎসক? কী জবাব দিতে চাইলেন নচিকেতাকে? তিনি কী চাইছেন? ডা: অনির্বাণ দত্ত একান্ত সাক্ষাৎকারে নানা প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দিলেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে।

Advertisment

নিচকেতার ‘ও ডাক্তার’ গানের স্মৃতিটা কেমন?  

আমি ২০০৪ সালে ডাক্তারী পড়তে ঢুকি। আমি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র। ট্রেনে যাতায়াত করতাম। ট্রেনে শুনতাম, 'তুমি মেডিক্যালের ছাত্র'। কথায় একটা 'রেসপেক্ট' ছিল। ২০১০ সালে পড়াশুনা শেষ করে যখন  ফিরছি। তখন লোকে বলত, 'ও ডাক্তার গানটা শুনেছেন'। না, মন থেকে ওই গান মেনে নিতে পারিনি।

গানে কতটা সত্য আছে?

ওই গান শোনার পর যে অসৎ তাঁর গায়ে লাগবে না। সে জানে আমি অন্যায় করছি। যে যাই বলুক আমার গায়ে লাগবে না। আমি কমিশন খাচ্ছি বা যে অসৎ কাজই করছি, আমি আমার কাজটা করে নেব। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে আজ অবধি নিজের পেনটাও নিজেই কিনে থাকি। আমার মনে হয়েছিল, খুবই জেনারেলাইজেশন হচ্ছে। সেটা খুব খারাপ।

প্রতিবাদের গানের ভাষা তাহলে কী হওয়া উচিত? 

পৃথিবীতে বহু প্রতিবাদী গান লেখা হয়েছে। প্রতিবাদী গান লেখার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে। অজস্র গান যুদ্ধ থামিয়ে দিয়েছে। তবে প্রত্যেকটা গানের প্রতিবাদের ভাষাটা ভদ্র।

'ও ডাক্তার' গানটা চিকিৎসক জগতকে কতটা প্রভাবিত করেছিল বলে মনে হয়?

গানে গানে গোটা ক্লাসটাকে জেনারেলাইজড করে দেওয়া হয়েছিল। 'ও ডাক্তার' গানের জন্য আমাদের পুরো জেনারেশনের ডাক্তাররা মানসিক ভাবে ভীষণ রকম এফেক্টেড হয়েছে। জেনারেলাইজড করে দেওয়া উচিত নয়। তাহলে ‘ও ডাক্তার’ না বলে ‘কিছু ডাক্তার’ বলা উচিত ছিল।

নিচকেতার গান কেমন লাগে?

দেখুন, আমি নিজে নচিকেতা চক্রবর্তীর বড় ফ্যান। এরকম নয় যে, আমি নচিকেতার তীব্র বিরোধী। এখনও তাঁর গান শুনতে ভালবাসি। এটা মনের অভিমান থেকে প্রত্যুত্তর দেওয়া। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও কথা বলতে চাই না। ওনার গান শুনেই বড় হয়েছি। এই যে সরকারি কর্মচারী সবাই কাজ করে না। প্রতিবাদটা উনি ওনার জায়গা থেকে লিখেছেন। একজন শিল্পীর পুরোপুরি স্বাধীনতা আছে। আবার সেটা গানে গানে ভদ্রভাবে জবাব দেওয়ার স্বাধীনতাও আমার আছে।

আপনার গানের কোনও বিরোধিতা হয়নি?

বিগত সাত দিনে সোশাল মিডিয়া মারফত অনেকেই আমার বিরুদ্ধে হুমকি পোস্ট করেছে। এটা তো গ্রহণযোগ্য নয়। একজন তো বলেই দিল, সে বিদেশ থেকে এসে আমাকে পিটিয়ে যাবে। বন্ধুবান্ধবরা রিপোর্ট করেছে। অনেকে আমাকে সাইবার ক্রাইমে যেতে বলেছিল। আমি যাইনি। গানটা আমি রেকর্ড করেছিলাম। গানটা ভাইরাল হয়েছে। সময়ের সঙ্গে তা চলেও যাবে।

দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে আপনার মতাতমত?

আমার গানে জিডিপির কত শতাংশ খরচ হচ্ছে, ক্যানসারের ওষুধের দাম বেড়ে যাচ্ছে, এসব বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য পরিষেবা শুধু ডাক্তারের ওপর নির্ভর করে না। নির্ভর করে সরকারি নীতি, পরিকাঠামো বা অন্যান্য বিষয়ের উপর। এই জায়গাতেই আমার প্রতিবাদ। আজ আমরা বা আমাদের সংগঠন থেকেও বারে বারে বলেছি স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ ৩ শতাংশ করা হোক। শ্রীনাথ রেড্ডি কমিশন স্বাস্থ্য খাতে টাকা বাড়ানোর কথা বলেছে। অথচ আমাদের স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ মাত্র এক শতাংশ। বেসরকারি ক্ষেত্রে সাড়ে তিন শতাংশ। সরকার যদি মনে করে স্বাস্থ্য খাতে চার থেকে সাড়ে চার শতাংশ বাজেট বরাদ্দ করবে, তাহলে মানুষকে অন্য কোথাও যেতে হবে না। নিজেদের পয়সাও খরচ করতে হবে না। একথা আগামী দিনেও বলে যাব।

গান শুনে মনে হচ্ছে ছোট থেকই গান-বাজনার চর্চা ছিল?

হঠাত করে এই গানটা করে দিলাম এমনটা কিন্তু নয়। আমি ডাক্তারির পাশাপাশি গান-বাজনার চর্চা করি। আমার কলেজ লাইফে ব্যান্ড ছিল। ২০১০ সালে গান রিলিজ হয়েছে। সেই গান রেডিও মির্চিতে টানা তিন মাস প্রাইম টাইমে ছিল। আমি নিজের অ্যালবাম করেছি। তারপরে ২০১৪ সালে দাদাগিরিতে অডিশনে গিয়েছিলাম। সেখানে দাদাগিরি নিয়ে একটা গান করেছিলাম। সেখানে 'দাদা'(সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়) ওই গানের প্রশংসা করেছেন। ২০১৪ সালে দাদাগিরির পুরো এপিসোডে আমার গান বাজিয়েছে। আমার বাড়িতে গান-বাজনার পরিবেশ ছিল।

নচিকেতাকে নিয়ে এখন কী মূল্যায়ন?

শিল্পী তো। আমি ২০২০তে দাঁড়িয়েও বলতে পারি তিনটে বাঙালী গায়কের নাম বলতে গেলে নচিকেতার নাম আসবে। এটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

এই সময়ে চিকিতসক হিসাবে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?

আমি নিজে পর পর দু’সপ্তাহই ফিভার ক্লিনিক করেছি। এখন আমার বাচ্ছাও দিদিমার কাছে থাকছে। এক মাস পেরিয়ে গেল ছেলে একা রয়েছে। আমার স্ত্রীও চিকিত্সক। প্রত্যেক স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ কর্মী সবারই এক অবস্থা।

অনির্বাণের ভাবনা কী?

আমার ভাবনা সারা ভারতে আর্থ-সামাজিক অবস্থায় অনবরত চেষ্টা চলছে যাতে মধ্যবিত্তের সঙ্গে নিম্নবিত্তকে লড়িয়ে দেওয়া যায়। লোকে শুধু ডাক্তারকে নয় শিক্ষক, ব্যাঙ্ককর্মী, সাংবাদিক, পুলিশকেও গালাগালি দিচ্ছে। অথচ সমাজে মূলত এই লোকগুলো সার্ভিস প্রোভাইডার। এই পরিস্থিতিতে সবাই কাজ করছে। প্রতিটি পেশাকে মানুষের কাছে জনশত্রু বানিয়ে দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার।

চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে গান মেলে?

ক্লাসিক্যাল গান শিখেছি চার বছর। আমি সারাদিনে আধঘণ্টা গানের চর্চা করি। দেখুন, সমাজ নিয়ে গান লিখি না। আমার গানে অনুভূতির প্রবণতা বেশি। অজস্র গান লিখেছি। এই গানটার মত জনপ্রিয়তা আমি পাইনি। এত মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছে, আমার এটা খুব ভাল লেগেছে। সব থেকে বড় কথা এখনও টুকটাক গান লিখি। গান লেখাও চলবে।

সিডির জগতে 'ও ডাক্তার' গেয়েছিলেন যুব সমাজের হার্টথ্রব নচিকেতা। তখন সেই গান সুপার-ডুপার হিট হয়েছিল। মুখে মুখে ফিরেছিল 'ও ডাক্তার'। এবার তার জবাব 'আমি ডাক্তার' হয়ে করোনা আবহে সোশাল মিডিয়ায় হইচই বাধিয়ে দিল। এবারও অনেকের মুখে মুখে ফিরছে আমি ডাক্তার। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক অনির্বাণ দত্তের মুখে যেন তৃপ্তির হাসি।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

West Bengal
Advertisment