Burdwan Drunk Teacher: শিক্ষকের আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে সুরার নেশায় মজে গিয়েছেন শিক্ষক জয়রাম কুমার সিং! তবে তিনি বোধহর মামুলি সুরা-ভক্ত হতে চাননি। সম্ভবত তাঁর স্বপ্ন ছিল একজন প্রসিদ্ধ সুরা-ভক্ত হিসাবেই নিজেকে ছাত্র সমাজের কাছে তুলে ধরা। সেই কাজে জয়রামবাবু একশো শতাংশ সফল। শনিবারের বারবেলায় সেই নিদর্শনই দেখা গেল। একেবারে স্কুলের গেটের সামনে শিক্ষকের মাতলামি দেখল বর্ধমান শহরের শিবকুমার হরিজন বিদ্যালয়ের খুদে পড়ুয়ারা। লজ্জায় মুখ লুকোলেন ওই স্কুলের অন্য়ান্য শিক্ষক শিক্ষিকারা। নিন্দার ঝড় সর্বত্র।
বর্ধমানে জেলাশাসকের অফিস ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ অফিস থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে অবস্থিত শিবকুমার হরিজন বিদ্যালয়। প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পঠনপাঠনের ব্যবস্থা রয়েছে এই স্কুলে। জয়রাম কুমার সিং এই স্কুলেরই প্রাথমিক বিভাগের হিন্দি ভাষার শিক্ষক। সেই শিক্ষকই এদিন মদ্যপ অবস্থায় গড়াগড়ি খেলেন স্কুলের গেটের সামনে। যা দেখে চোখ ছানাবড়া পড়ুয়াদের। ক্ষোভে ফেটে পড়লেন অভিভাবকরা।
বিদ্যালয়ের প্রাথমিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অশোককুমার মালিক বলেন, 'আমাদের স্কুলের হিন্দি সাবজেক্টের শিক্ষক জয়রাম কুমার সিং দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন। এই প্রথম অপ্রকৃতস্থ অবস্থায় তিনি এমন করলেন তা নয়। উনি কয়েক বছর ধরে মাঝেমধ্যেই এমন অপ্রকৃতস্থ অবস্থায় স্কুলে আসছেন। ওনাকে নিয়ে আমরা অন্য শিক্ষকরা খুব অসম্মানিত হচ্ছি। এই বিষয়ে আগেও প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দাখিল হয়েছিল। সেবার জয়রাম ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে নেওয়ায় চেয়ারম্যান মার্জনা করেছিলেন। তার পরেও জয়রাম শোধরাননি। এদিন তিনি আরও জঘন্য কাণ্ড ঘটালেন। তাই এদিনের ঘটনা সবিস্তারে আমি লিখিতভাবে চেয়ারম্যাকে জানাচ্ছি। পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ ও স্কুলের মর্যাদার কথা ভেবে চেয়ারম্যান এ বিষয়ে যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবেন।'
এ নিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মধুসূদন ভট্টাচার্য্যকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, 'যা শুনছি তা কখনও কাম্য নয়। তবে সবিস্তার এখনও জানতে পারিনি। খোঁজ নিয়ে দেখছি।'
বিদ্যালয়ের অপর শিক্ষক দেবলীনা চট্টোপাধ্যয়ের কথায়, 'জয়রাম সিং এর কীর্তিকলাপে আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। ওনার জন্যে শিক্ষক হিসাবে আমরাও লজ্জিত। আমাদের শিক্ষক পেশাটাও অসন্মানিত হচ্ছে।'
শিবকুমার হরিজন স্কুলের শিক্ষক জয়রাম কুমার সিং এর কীর্তির কথা শুনে এদিন স্তম্ভিত হয়ে যান পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত শিক্ষক সুজিত চট্টোপাধ্যায়। জেলার আউশগ্রামের বাসিন্দা সুজিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'একে সামাজিক অবক্ষয়ের বহিঃপ্রকাশ বলতে হবে। যে অবক্ষয় দেশের ভবিষ্যৎ গড়ার এই কারিগরকেও গ্রাস করেছে। তাই এটা বলতেই হচ্ছে, শিক্ষক জয়রাম বাবুরই আদর্শ শিক্ষক হওয়ার শিক্ষা নেওয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে। নয়তো ছাত্র সমাজ এমন শিক্ষকদের ক্ষমা করবে না।'
শিক্ষক জয়রাম সিং-কে এদিন স্কুলের গেটের সামনে মাতলামি করতে দেখে স্কুলের অভিভাবক ও অভিভাবিকারও ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারাশঙ্কর রায়, সোমনাথ মণ্ডল-সহ আরও অনেক অভিভাবক এদিন স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে শিক্ষক জয়রাম সিং-এর শাস্তি দাবি করেছেন।