Advertisment

দুয়ারে ছাতু! বঙ্গের তাক লাগানো প্রকল্প অনুকরণে ব্যবসায় বাজিমাত যোগী রাজ্যের যুবকের

চন্দন এখন তৃণমূলের নয়নের মণি।

author-image
Rajit Das
New Update
duare sattu in burdwan town chandan lal srivastav , দুয়ারে ছাতু চন্দনলাল শ্রীবাস্তব বর্ধমান

চন্দনলাল শ্রীবাস্তবের অভিনব প্রয়াস।

প্রতিযোগিতার যুগে নিজের ব্যবসাকে টিকিয়ে রেখে লাভের মুখ দেখাটা এখন সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জের। তাই যুগের সঙ্গে তালমিলিয়ে অনেক ব্যবসায়ী এখন কৌশলে তাঁদের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনছেন। যেমনটা এনেছেন ব্যবসায়ী চন্দনলাল শ্রীবাস্তব। তিনি দুয়ারে রেশন প্রকল্পের জনপ্রিয়তা দেখে সেটাকেই কৌশলে অনুকরণ করেন। নিজের মোটর বাইকে ব্যবসার সমস্ত পসরা চাপিয়ে নিয়ে সটান পৌঁছে যাচ্ছেন শহর বর্ধমানের বাসিন্দাদের দুয়ারে। আর ব্যবসার এই কৌশলগত পরিবর্তন এনেই চন্দনলাল কেল্লাফতে করে ফেলেছেন। তাঁকে দেখেই বর্ধমানের অনেক ব্যবসায়ী এখন নিজেদের ব্যবসায়ার কৌশল বদলানোর পরিকল্পনা আঁটছেন।

Advertisment

যোগী রাজ্য উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা চন্দনলাল শ্রীবাস্তব। সেখানে তাঁদের পরিবারের সবাই ছোলার ছাতু বিক্রি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে ছাতু বিক্রির ব্যবসা করে মুনাফার মুখ দেখতে না পেয়ে চন্দনলাল বিহারের ভোজপুরে গিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু সেখানেও ব্যবসায়ীক শ্রীবৃদ্ধি ঘটাতে না পেরে মাস দুই আগে চন্দনলাল শহর বর্ধমানে চলে আসেন।

বর্ধমানে এসেই তিনি এই রাজ্যের 'দুয়ারে রেশন' ব্যবস্থার জনপ্রিয়তা স্বচক্ষে দেখেন। বিষটা মনে লাগতেই একই অনুকরণে ছোলার ছাতু বিক্রি শুরু করার পন্থা নিয়ে নেন চন্দনলাল। দোকান খুলে ব্যবসা করার ভাবনা জলাঞ্জলি দিয়ে তিনি নিজের মোটর বাইকের সিটের পিছনের অংশে ডিজেল চালিত ছোট একটি জেনারেটর ও ছোট পেষাই মেশিন ভাল করে বসিয়ে বেঁধে নেন। বাইকেই চাপিয়ে নেন ছোলা ভাজা ভর্তি বস্তা। এছাড়াও বাইকেই রাখেন ছোট একটি ওজন মাপার যন্ত্র। এখানেই শেষ নয়। চন্দনলাল তাঁর বাইকে বিশেষ সাউণ্ড সিস্টেমের ব্যবস্তাও রেখেছেন। তাতে অনর্গল বেজে চলে চন্দনলালের ছাতুর গুন কীর্তন ও বাড়ির দুয়ারে দাঁড়িয়ে হাতে গরম ছোলার ছাতু তৈরি করে দেবার বিজ্ঞাপন। ওই বাইকে চেপে শহর বর্ধমানের অলি গলি ঘুরে লোকের বাড়ির একেবারে দুয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে খরিদ্দারের চাহিদা মত ছোলা পেষাই মেশিনে ভাঙিয়ে ছাতু তৈরি করে দিয়ে টাকা নিচ্ছেন চন্দনলাল। তাঁর এই দুয়ারে ছাতু ব্যবসা বর্ধমান শহরবাসী মহলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

চন্দনলাল জানান, 'বর্ধমানে ব্যবসা ভালো চলায় পরিবারের ১২ জন সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে তিনি এখন বর্ধমান শহরের ডিভিসি মোড় এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকছেন। পরিবারের সবার অন্নের সংস্থান তাকেই করতে হয়। চন্দনলালের কথায়, উত্তরপ্রদেশে তাঁর ছাতু ব্যবসা ভালো চলছিল না। অন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহের কোন পথও সেখানে তিনি খুঁজে পাননি। তাই নিজেদের পারিবারিক ব্যবসাকে আঁকড়েই তিনি বিহারের ভোজপুরে পৌছান। সেখানেও ব্যবসায়ীক শ্রীবৃদ্ধি না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। এর পর প্রতিযোগিতার বাজারে টিঁকে থাকার জন্য নতুন কী কৌশলে ব্যবসা করা যায় তার চিন্তা ভাবনা শুরু করেন।

এমনই সময়ে ভোজপুর চন্দন ছোলা ভেঙে ছাতু তৈরির ছোট মেশিন দেখতে পান। ৩৫ হাজার টাকা মূল্যে সেই মেশিনটি তিনি কেনেন। পরে ওই মেশিনটি চালানোর জন্য ডিজেল চালিত ছোট একটি জেনারেটার ছাড়াও একটি মোটরবাইক ও ওজন মাপার ছোট ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রও কিনে ফেলেন। বাইকের পিছনের শিটের অংশে এই সমস্ত কিছুকে ফিট করে ভোজপুরে পথের ধারে দাঁড়িয়ে ব্যবসা করা শুরু করেন। কিন্তু ব্যবসা তেমন জমেনি।

তাই ভোজপুর ছেড়ে অনেক আশা নিয়ে তিনি পশ্চিমবাংলার বর্ধমানে শহরে চলে আসেন। এখানেই তিনি দেখতে পান 'দুয়ারে রেশন' ব্যবস্থার জনপ্রিয়তা। আর সেটা দেখেই তাঁর মাথায় চলে আসে ছাতু ব্যবসার নয়া কৌশল। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন, কোনও এক জায়গায় দাঁড়িয়ে বা দোকান খুলে তিনি আর ব্যবসা করবেন না। দুয়ারে রেশনের অনুকরণে তিনিও শহর বর্ধমানের বাসিন্দাদের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে গিয়ে ছোলার ছাতুর ব্যবসা করবেন বলে মনস্থির করে নেন। সেই মতই তিনি ব্যবসা শুরু করেন।

গৃহস্থের দুয়ারে দাঁড়িয়ে চোখের সামনেই মিনিট খানেকের মধ্যে পেষাই মেশিনে ভাজা ছোলা ভেঙে খাঁটি ছাতু তৈরি করে দিয়ে মূল্য নেন বলে চন্দনলাল জানান। পাশাপাশি তিনি এও দাবি করেছেন, বর্ধমানে তাঁর ছোলার ছাতু খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বাসিন্দাদের অনেকে তাঁর মোবাইল ফোন নম্বরে ফোন করে তাঁকে ডাকে নিচ্ছেন। যাঁরা ফোনে তাঁকে ডাকেন তাঁদের বাড়ির দুয়ারে পৌছে গিয়ে তিনি ছাতু তৈরি করে দিয়ে আসেন। এইভাবে ব্যবসা করার জন্য দোকান ভাড়া, ইলেকট্রিক বিল, বাৎসরিক ট্রেড লাইসেন্স ফি , কিছুই তাঁর লাগছে না। দুয়ারে রেশনের অনুকরণে ছাতুর ব্যবসা করার এইসব খরচ তাঁর বেঁচে যাওয়ায় মাসে ১৮ হাজার টাকার মতো আয় হচ্ছে। তাতে একটু হলেও তাঁর সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে বলে চন্দনলাল জানিয়েছেন।

পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদের সহ- সভাধিপতি দেবু টুডু এই প্রসঙ্গে বলেন, 'এটাই বাংলার মাহাত্ম্য। তাই যোগী রাজ্যের এক যুবক রোজগারের আশায় এই বাংলায় এসে নিজের মত করে ব্যবসায় উপার্জন করছে তাও আবার বাংলার দুয়ারে রেশন প্রকল্পের ব্যবস্থাপনাকে অনুকরণ করে। এটা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্ক প্রসূত প্রকল্পের একটা বড় সার্থকতা।'

East Burdwan burdwan West Bengal
Advertisment