পেট বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ খোয়াতে বসেছিলেন! শেষে সাইকেলের গুঁতোয় তাড়ালেন চিতাবাঘ? হ্যাঁ! ঠিক এমনটাই ঘটেছে ডুয়ার্সের ওয়াশাবাড়ি চা বাগানে। রীতিমতো যাকে বলে বাঘে-মানুষে লড়াই। অবশেষে শেষ সম্বল সাইকেল দিয়েই চিতা তাড়ালেন চা বাগানের শ্রমিক সন্তোষ সোনার। ততক্ষণে অবশ্য চিতার থাবায় রক্তে ভেসে গিয়েছে শরীর।
ঠিক কী ঘটেছে এদিন ডুয়ার্সের জঙ্গলে?
দিনভর লক ডাউনে গৃহবন্দী থাকার পর রাতে সাইকেল নিয়ে চা বাগানের ফ্যাক্টরির দিকে যাচ্ছিলেন ডুয়ার্সের ওয়াশাবাড়ি চা বাগানের আপার লাইনের বাসিন্দা বছর ৩৮ এর সন্তোষ সোনার। কিন্তু আঁধারেই যে তার জন্য অপেক্ষা করছে হিংস্র চিতা, তা বিন্দুমাত্র আঁচ করতে পারেনি সন্তোষ। যাওয়ার পথেই রেল গেটের কাছের ঝোপ থেকে আচমকাই লাফিয়ে পরে চিতাটি। এরপর তিন মিনিটের রুদ্ধশ্বাস লড়াই।
সন্তোষ সোনার বলেন, "বাড়িতে ৫ জন লোক আমরা। আমার একার উপার্জনেই সংসার চলে। লকডাউনে কাজ নেই। তাই আগামীকাল বাগানে কাজ পাব কি না তা জানতে আমি কাজের খোঁজে রাতে সাইকেল চালিয়ে বের হয়েছিলাম।পথে রেল গেটের কাছে ঝোপে লুকিয়ে থাকা চিতাবাঘ ঝাঁপিয়ে পড়ে আমার ওপর। আমি পড়ে যাই। এরপর চিতাবাঘ হামলে পড়ে আমার ওপর। থাবা মারে মাথায় ও ঘাড়ে। কামড়ে ধরে আমার পা"
রক্তাক্ত রাতের সেই স্মৃতি উসকে সন্তোষ বলে চলেন, "পরিস্থিতি বেগতিক দেখে কোনোরকম ভাবে উঠে বসি। এরপর আমার সাইকেল দিয়ে সোমানে গুতো মারতে থাকি চিতাবাঘের গায়ে। এরপর লাফিয়ে চিতাবাঘটি ঢুকে যায় ঝোপে। এখন আমি বে রোজগার হয়ে গেলাম। জানিনা কতদিনে সুস্থ হয়ে উঠবো। আমার পরিবারকে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছি।"
ছবি- সৌমিত্র সান্যাল
এদিকে এই ঘটনার পর চিতাবাঘের আতঙ্কে সিঁটিয়ে আছে ওয়াশাবাড়ি চা বাগান।এলাকাবাসী বসন্ত রাই বলেন, "রাতেই আমরা ওঁকে মাল হাসপাতালে নিয়ে যাই।এখন সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আমাদের এলাকায় চিতাবাঘের উপদ্রব বেড়েছে। এখানে খাঁচা বসানোর আর্জি জানাচ্ছি"।
ঘটনায় মাল ওয়াইল্ড লাইফ স্কোয়াডের রেঞ্জার বিভূতিভূষন দাস জানান জখম ব্যাক্তির চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ বনদপ্তরের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে। এই সময় আমরা স্থানীয় ভাবে ঐ পরিবারকে নিশ্চয়ই কিছু সাহায্য করবো। পাশাপাশি ঐ পরিবার যদি আরো কিছু বাড়তি সাহায্য চায় তবে তা লিখিত আকারে দিলে আমি উর্ধতন কর্তৃপক্ষর কাছে তা অবশ্যই পাঠাবো। খাঁচা বসানোর বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন