করোনার কোপে প্রায় দু'বছর ধরে শিকেয় স্কুল-শিক্ষা। এবার নাছোড়বান্দা অভিভাবকরাও। তাঁদের আবেদনে সাড়া দিয়ে এবার ক্লাস করাচ্ছেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তবে স্কুলে ভবনে এই ক্লাস হচ্ছে না। বরং ফাঁকা জায়গায় গাছের নীচে বসে ছাত্র পড়াচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কচিকাচার দলকে অ-আ-ক-খ, 'কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি'র পাঠ দিচ্ছেন মাস্টারমশাইরা।
তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের ধলহরা হিন্দু বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়। রাজ্যের অন্যান্য স্কুলগুলির পাশাপাশি মহামারীর জেরে বন্ধ রয়েছে এই স্কুলটিও। এতল্লাটের বহু গরিব পরিবারের বাচ্চারা পড়াশোনা করে এই স্কুলে। অনেকের বাড়িতেই নেই স্মার্টফোন। অনেকের আবার ফোন থাকলেও ইন্টারনেট প্যাক ভরার সাধ্য নেই। স্কুল বন্ধের জেরে তাদের পরিবারের বাচ্চাদের পড়াশোনা প্রায় বন্ধের পথে ওঠার জোগাড় হয়েছিল। বাধ্য হয়েই তাই অভিভাবকরা একজোট হয়েছেন। স্কুল না খুলেও স্কুলের বাইরে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার বন্দোবস্ত করতে তাঁরা আবেদন জানিয়েছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে।
আরও পড়ুন- নবান্ন সংলগ্ন রাস্তায় বিকল একাধিক সিসি ক্যামেরা, যুবক মৃত্যুর তদন্তে নেমে ধন্দে পুলিশ
অভিভাবকদের আবেদনে সাড়া দিয়ে স্কুলের বাইরে পঠনপাঠনে উদ্যোগী হন শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। তাঁদের এবং অভিভাবকদের উদ্যোগে গাছ তলাতেই চলছে পঠন-পাঠন। সোম থেকে শুক্রবার পর্যন্ত চলে ক্লাস। প্রত্যেকদিন ভিন্ন-ভিন্ন একটি করে ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীরা এসে হাজির হয় গাছ তলায়। দূরত্ব-বিধি মেনে মুখে মাস্ক পরে চলে পঠনপাঠন।
গাছতলার এই ক্লাসে হাজির থাকেন অভিভাবকরাও। আগে গ্রামেরই একটি ক্লাবে শুরু হয়েছিল পড়াশোনা। তবে সেখানে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় গাছ তলায় বসে শুরু হয়েছে ক্লাস। বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক-সহ সব বিষয়ে চলে পঠনপাঠন। ক্লাস নিতে উপস্থিত হন স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভয়চরণ সামন্ত-সহ শিক্ষক অনিতা প্রধান, মোহন মাঝি, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক উৎপল বেরা-সহ অন্যরা।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভয়চরণ সামন্ত বলেন, "ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা চান স্কুল খুলুক। ছাত্রছাত্রীদের জন্যই প্রতিদিন একটি করে ক্লাস গাছ তলায় শুরু করেছি। আমরাও চাই স্কুল খুলুক। প্রয়োজনে প্রতিদিন দু'টি করে ক্লাস করানো হোক।"