দিনের পর দিন ধরে শিকলবন্দি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এক কিশোর। পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় বাঁশের মাচার ওপর কাটছে দিন। নবম শ্রেণীর এই ছাত্রের মানসিক অসুস্থতায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাঁর পঠনপাঠনও। টাকার অভাবে তাঁর মানসিক রোগের চিকিৎসাও করাতে পারছে না পরিবার। এক প্রকার বাধ্য হয়েই ওই কিশোরকে শিকলে বেঁধে রাখতে হয়েছে বলে দাবি পরিবারের সদস্যদের। কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের রানিরহাট গ্রামের এই ঘটনা সত্যিই আমানবিক।
একটা সময় গ্রামে মেধাবী ছাত্র হিসেবেই পরিচিত ছিল মেখলিগঞ্জের রানিরহাট গ্রামের কিশোর বিষ্ণু রায়। সে স্থানীয় শৌলমারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী নবম শ্রেণীর ছাত্র। তাঁর বাবা নবীন রায় পেশায় দিনমজুর। দিনমজুরি করে যেটুকু রোজগার হয় তা দিয়েই অতি কষ্টে চলে সংসার।
বছর ছ'য়েক আগে বিষ্ণুর মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করেন পরিবারের সদস্যরা। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে অত্যন্ত আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে বিষ্ণু। কাউকে দেখলেই তাদের দিকে তেড়ে যেত সে। এই পরিস্থিতিতে ছেলেকে সুস্থ করতে তাঁর চিকিৎসায় নিজেদের জমি বিক্রি করে দিয়েছেন বিষ্ণুর বাবা নবীন রায়।
আরও পড়ুন- বগটুইয়ে ফের বোমাতঙ্ক, রামপুরহাট কাণ্ডে দুই প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান রেকর্ড
তিনি বলেন, ''এদিক-ওদিক বহু জায়গায় ঘুরে ছেলের চিকিৎসা করিয়েছি। জমি বিক্রি করে চিকিৎসা করিয়েও সুরাহা হয়নি। মানসিক ভারসাম্যহীনতার জন্য ছেলের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে সরকারি হাসপাতালেই ছেলের চিকিৎসা চলছে। কিন্তু লাভ কিছুই হচ্ছে না। যাতে ও কোথাও চলে না যায় সেই কারণেই ওর পায়ে শিকল পড়িয়ে রাখতে বাধ্য হয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে একইভাবে শিকলবন্দি অবস্থায় রয়েছে বিষ্ণু।''
এদিকে, বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। তবে বিষ্ণুর চিকিৎসার জন্য তাঁর পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা জানিয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বও।