বেড়াতে গিয়ে আটকে পড়ে বিপাকে পড়েছেন রাজ্যের বহু পর্যটক। টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় তাঁদের খাবারও জুটছে না। প্রায় না খেয়েই দিন কাটছে তাঁদের। এরই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আটকে পড়া বাঙালীদের সাহায্য় করার জন্য আবেদন করেছেন। প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ভিন রাজ্যে আটকে পড়া বাঙালীদের জন্য টোল ফ্রি নাম্বার চালু করার দাবি জানিয়েছেন।
লকডাউনে সিমলায় আটকে পড়ে বিপাকে শান্তিপুরের ১৫জন পর্যটক। নদিয়ার শান্তিপুরের বাসিন্দা অনুপ সিকদার ও তার ৪ বন্ধু তাঁদের পরিবার নিয়ে ৮ মার্চ সিমলা বেড়াতে যান। গত ২৩ মার্চ তাদের ফেরার কথা থাকলেও লকডাউনের কারণে ট্রেন বাতিল হয়ে যায়। তার ফলে তাঁরা সেখানেই আটকে পড়েছেন। ক্রমশ টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে কার্যত না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন ওই চার পরিবারের সদস্যরা। কবে এই সংকট কাটবে সেই দিকেই তাকিয়ে পর্যটক ও তাদের পরিবার।
লকডাউনে সিমলায় আটকে পড়ে বিপাকে শান্তিপুরের ১৫জন পর্যটক। ফিরতে চেয়ে আবেদন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। ভিডিও: মৌলিককান্তি মণ্ডল pic.twitter.com/FAP9E2I9eG
— indianexpress bangla (@iebengali) March 27, 2020
এদিকে উত্তরভারত বেড়াতে গিয়ে আটকে পড়েছেন বহু বাঙালি পর্যটক। গত ১৩ই মার্চ পোলবা ও চন্দননগর থেকে ১৮ জন পর্যটক উত্তরভারত বেড়াতে যান। হাওড়া থেকে কালকা মেল ধরে কালকা গিয়ে সেখান থেকে সিমলা, সাংলা হয়ে মানালি যান। লকডাউন ঘোষণার জন্য় মানালিতও অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে মানালি থেকে বাসে করে আবার কালকা ফিরে আসে ওই পর্যটকের দল। গত ২১ মার্চ তারা কালকা পৌছান। ২৪ মার্চ তাঁদের কালকা থেকে ফিরতি টিকিট ছিল ট্রেনের, তবে ২২ মার্চ থেকে সারাদেশে ট্রেন পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। ১ লা এপ্রিলের টিকিট কাটেন তারা। লকডাউন বেড়ে যায় ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। সেই থেকেই কালকার একটি হোটেলে গৃহবন্দি রয়েছেন তারা। খাবারের খরচ জোগাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে তাঁদের।
অন্য দিকে কোন্নগর ও হাওড়া থেকে ১৭ জন পর্যটক হিমাচল প্রদেশের মান্ডি জেলায় আটকে পরেছেন। তাঁরাও খাবার এবং অর্থ সংকটে পড়েছেন। সকলেই স্থানীয় একটি অতিথিশালায় রয়েছেন। এই পর্যটকরাও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন, "আমরা না খেয়ে মরতে বসেছি। দিদি আমাদের প্রানে বাঁচান।"
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীকে জানিয়ে কাজ না হওয়ায় এবার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্রানে বাঁচানোর আবেদন জানিয়ে কেরল থেকে ভিডিও বার্তায় কাতর আবেদন জানালো হলদিবাড়ির দিন মজুরেরা। আরব সাগরে আসা সামুদ্রিক মাছ লোডিং ও আন লোডিং-এর কাজ করতে কেরলের কোল্লাম জেলায় গিয়েছিলেন কোচবিহার জেলার হলদিবাড়ি থানার অন্তর্গত উত্তর দড়ি বস গ্রামের বাসিন্দা নরেশ চন্দ্র রায় সহ বেশ কয়েকজন। কেরলে থেকে দিন মজুরের কাজ করে টাকা বাড়ি পাঠিয়ে কোন ভাবে চলছিল সংসার। কিন্তু সম্প্রতি করোনা ভাইরাস সংক্রমন ছড়াতে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। লকডাউনে বিপাকে পড়েন তাঁরা
আরও পড়ুন: করোনায় নেই কোনও গোষ্ঠী সংক্রমণ, কমছে আক্রান্তের সংখ্যাও: সরকার
নরেশ রায় জানান, এখানে আমরা আট-নয় জন রয়েছি। গোটা দেশে এভাবে লক ডাউন হয়ে যাবে তা আমরা ভাবতে পারিনি। আমাদের কাছে যা টাকা-কড়ি ছিল তা শেষ। এখানে আমরা না খেয়ে রয়েছি। একবারের জন্য কেউ আমাদের খোঁজ নিচ্ছে না। আমি গতকাল উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ মহাশয়ের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করেছিলাম। তিনি আমাদের জানান ট্রেন আমার হাতে নেই। আগে কেন আসেন নি। এখন আমার করার কিছু নেই। গোটা দেশ এভাবে ২১ দিন লক ডাউন হবে এই কথা আমরা যদি আগে জানতে পারতাম তবে অবশ্যই ফিরে আসতাম। তাই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের করজোড়ে আবেদন আমাদের এখান থেকে নিয়ে যাবার ব্যাবস্থা করুন। পাশাপাশি আমাদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করুন।
এই আটকে পড়া রাজ্য়ের বাসিন্দাদের জন্য় ১৮টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সাহায্যের আবেদন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পর্যটক বা কাজের তাগিদে যাঁরা বাইরে রয়েছেন এই ঘোষণার পর তাঁরা সুরাহা পাবেন বলে আশা করছেন পরিবারের লোকেরা।