করোনার জেরে জৌলুসহীন প্রাচীন জয়দেব-কেন্দুলির মেলা। শুক্রবার মকর সংক্রান্তিতে মেলা শুরু হয়েছে। তবে করোনা-ভয়ে মেলা প্রাঙ্গণ কার্যত ফাঁকা। স্নানে ঘাটেও পুণ্যার্থীদের থেকে পুলিশের সংখ্যাই বেশি। এবছর করোনা-কারণে দেরিতে মেলার অনুমতি এবং কোভিড সংক্রণণ ছড়ানোর আশঙ্কায় জয়দেব মেলায় আউল-বাউল-সাঁই-ফকিরের আনাগোনা চোখে পড়েনি। পুন্যার্থীদের ভিড়ও নেহাতই কম। শুক্রবার থেকেই রাধাবিনোদ মন্দিরও বেশ ফাঁকা। মেলা চত্বরে বাস দোকানিদের মাতায় হাত।
এবছর শুরুতে বীরভূম জেলা প্রশাসন জানিয়ে দেয়, করোনার জেরে জয়দেব-কেন্দুলির মেলা হবে না। তবে পুন্যস্নান হবে স্বাস্থ্য বিধি মেনেই। কিন্তু মেলার মাত্র তিন দিন আগে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা জানিয়ে দেন, জয়দেব-কেন্দুলির মেলা হবে। পুন্যস্নান থেকে পুজো সবই হবে। বসবে দোকানপাট। হবে আখড়া। তবে শুক্রবার সংক্রান্তিতে মেলা শুরুর দিনেও সেই আড়ম্বর চোখে পড়েনি। মেলায় ভিড়ই তেমন হয়নি।
জয়দেব-কেন্দুলি মেলা কমিটির সম্পাদক তথা বোলপুর মহকুমা শাসক অয়ন নাথ বলেন, “কোভিডের কারণে এবার খুব কম সংখ্যক পুণ্যার্থী এসেছেন। শুক্রবার ভোররাত থেকে দুপুর পর্যন্ত ৫০০০ বা তার একটু বেশি সংখ্যক পুণ্যার্থী ঘাটে স্নান সেরেছেন। অন্যান্যবার ওই সংখ্যা এক লক্ষ ছাড়িয়ে যায়। তাছাড়া বীরভূম জেলায় ৬ টি পুর এলাকায় আংশিক লকডাউন চলছে। কোভিড বিধি মেনে চলার জন্য প্রচার করা হচ্ছে। সেই সব কারণেই মানুষ মেলা-মুখো হননি”।
মেলায় ঢোলক নিয়ে মুর্শিদাবাদ থেকে এসেছেন শ্রীদাম দাস। তিনি বলেন, ''দু'দিন আগে এসেছি। একটিও ঢোলক বিক্রি হয়নি। গাঁটের কড়ি খরচ করেই খাওয়া-দাওয়া চলছে।'' মেলায় বসেছে নাগরদোলা। তবে তাতেও চড়ার লোক নেই। তাঁদের বক্তব্য, বছরের-পর-বছর জয়দেব মেলা দেখে আসছেন তাঁরা। এই ধরনের মেলা এই প্রথম।
আরও পড়ুন- আজও দিনভর বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি, আবহাওয়ার বদল কাল থেকেই
জয়দেব রামকৃষ্ণ আশ্রমে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষজন সাধু মহান্তদের এক বেলা খাবার ব্যবস্থা করেছেন দুবরাজপুর রামকৃষ্ণ আশ্রমের শীর্ষ সেবক স্বামী সত্যশিবানন্দ মহারাজ। তিনি বলেন, ''আমাদের সংঘ গুরু স্বামী গৌরানন্দ মহারাজের নির্দেশেই আগত ভক্তদের পাত পেড়ে প্রসাদ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছি।''
জয়দেব মেলার মূল আকর্ষণ আখড়া। প্রতিটি আখড়ায় বসে বাউল-ফকির ও কীর্তন গানের আসর। মেলাতে আসা ভক্তরা তিনদিন ধরে বিনা-পয়সায় পেটপুরে দু'বেলা খাবার পান। এবার সে সব বন্ধ। তবে মেলায় ভক্তদের আনাগোনা কম থাকলেও পুলিশের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো।
জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে মেলায়। মেলা প্রাঙ্গণে রয়েছে সিআইডি-র বম্ব স্কোয়াড। স্নানের প্রতিটি ঘাটে চলছে নজরদারি। সিসিটিভি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার, ড্রোনে নজরদারি চালাচ্ছেন পুলিশকর্মীরা।