scorecardresearch

নিয়োগ দুর্নীতি বিস্তর হইচই, তার মাঝেই শিক্ষকের অভাবে আউশগ্রামের স্কুলে তালা

স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা করছেন ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা।

School
ছবি- প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়

স্কুল শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে উত্তাল গোটা বাংলা। নিয়ম ভেঙে অবৈধ উপায়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষকের চাকরি পাওয়া নিয়ে তদন্ত করছে সিবিআই। মহানগরের পথে বসে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন চাকরি প্রার্থীরা। এই অবস্থায় শুধুমাত্র শিক্ষকের অভাবে বন্ধ করে দিতে হল পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের লক্ষ্মীগঞ্জ আদিবাসী জুনিয়র হাইস্কুল। শুক্রবার স্কুলে আর শোনা গেল না পড়ুয়াদের কোলাহল। ফের কবে স্কুলটি চালু করা যাবে, তার সদুত্তর দিতে পারেননি স্কুল পরিদর্শক। এই পরিস্থিতিতে কার্যতই হতাশ অভিভাবকরা। তাঁরা চাইছেন স্কুলটি চালুর ব্যাপারে উদ্যোগী হোক রাজ্যের শিক্ষা দফতর।

আউশগ্রাম ১ চক্রের অধীনে বছর আটেক আগে লক্ষ্মীগঞ্জ আদিবাসী জুনিয়র হাইস্কুলটি চালু হয়। এই স্কুলে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হত। চালুর পর কয়েক বছর এক অতিথি শিক্ষক স্কুল চালান। তিনি অবসর নেওয়ার পর স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষিত যুবক স্কুলে পড়াতেন। এরপর ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে ফের মওদুদ জাহেদি নামে অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক অতিথি শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি তিনটি শ্রেণির পড়ুয়াদের একটি ক্লাস রুমে বসিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পড়াতেন। তবে এইভাবে বেশি দিন তিনিও চালাতে পারেননি। চাপ নিতে না-পেরে অবসর নেওয়ার বছর দেড়েক আগেই তিনি স্কুল পরিদর্শকের কাছে ইস্তফাপত্র জমা দেন।

মওদুদ জাহেদি ইস্তফাপত্র জমা দেবার পর থেকেই স্কুলে পঠনপাঠন থমকে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। অভিভাবকদের কথায় জানা গিয়েছে, স্কুলটি চালু রাখার মত আর কোনও উপায় না-থাকায় বৃহস্পতিবার আউশগ্রাম-১ চক্রের স্কুল পরিদর্শক সুমন হাম্বিরের উপস্থিতিতে বিদ্যালয়ে অভিভাবকদের একটি সভা ডাকা হয়। সেই সভায় নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকে লক্ষ্মীগঞ্জ আদিবাসী জুনিয়র হাইস্কুলে পঠনপাঠন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এমন সিদ্ধান্তের কথা শুনে হতাশ হন অভিভাবকরা। তাঁরা সভায় ক্ষোভ ব্যক্ত করেন।

শুক্রবার অভিভাবক জবা টুডু, লক্ষ্মী টুডু, মাকু সরেন, কাজলি হেমব্রমরা বলেন, ‘চালুর সময়ে স্কুলটি শুধুমাত্র প্রাথমিকস্তর পর্যন্ত ছিল। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হবে বলে জানিয়ে স্কুলটির ভবন বাড়ানো হয়। কিন্তু, স্কুল স্থায়ী শিক্ষক পায়নি। শেষমেশ স্কুলটাই বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হল। এখন বলা হচ্ছে, আমাদের ছেলেমেয়েদের পাশের গ্রামে স্কুলে পাঠাতে হবে। সেটা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হবে না। তাতে এলাকায় স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়বে।’ এই পরিস্থিতিতে অবিলম্বে শিক্ষক নিয়োগ করে স্কুলটি চালুর দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা।

আরও পড়ুন- বড়সড় সাফল্য সিবিআইয়ের, রাতের অন্ধকারে বিকাশ ভবনে হানা, উদ্ধার গোপন নথি

এই প্রসঙ্গে স্কুল পরিদর্শক সুমন হাম্বির বলেন, ‘স্কুলের একমাত্র অতিথি শিক্ষককেই পড়ানো ও অন্যান্য কাজকর্ম সামলাতে হচ্ছিল। সেই চাপ তিনি আর নিতে পারছিলেন না। সেই কারণে তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। স্থায়ী শিক্ষকও পাওয়া যায়নি। এই সবের কারণেই আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে স্কুলটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। স্কুলের ৪১ জন পড়ুয়া যাতে পাশের হাইস্কুলে ভর্তি হতে পারে, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

ইস্তফা দেওয়া শিক্ষক মওদুদ জাহেদি বলেন, ‘২০১৯ সালের আগস্ট মাসে তিনি স্কুলের দায়িত্ব পান। তিনিই ছিলেন স্কুলের একমাত্র শিক্ষক। তাঁর শরীরও খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। তাই তাঁর একার পক্ষে সব শ্রেণির পড়ুয়াদের সব বিষয় পড়ানো ও অফিসের কাজকর্ম একসঙ্গে করে ওঠা সম্ভব হচ্ছিল না। সেই কারণে অবসর নেওয়ার বছর দেড়েক আগেই তিনি ইস্তফা দেন।’

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Westbengal news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Due to the lack of teachers the school in east burdwan was closed