মৃন্ময়ী নয়, চুঁচুড়া সত্যপীরতলার ঘোষ বাড়িতে কাগজের তৈরি দেবী দুর্গার আরাধনা হয়। পরম যত্নে উমার মূর্তি গড়েন বাড়ির ছেলে বছর আঠারোর দীপ্তরূপ ঘোষ। বিগত ৮ বছর ধরে এটাই রীতি ঘোষ বাড়ির। শুধু মূর্তি গড়েই ক্ষান্ত হন না দীপ্ত, চণ্ডীপাঠ থেকে দুর্গা পুজোর নানা উপাচার নিজে হাতেই সামলান এই তরুণ।
মাটির প্রতিমা ছেড়ে কাগজের মূর্তি তে পুজো কেন? ঘোষ বাড়ির এহেন রীতির নেপথ্যে আছে এক ইতিহাস। ঘোষ বাড়ির কর্তা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী দুলাল কান্তি ঘোষ জানান আগে তাঁদের বাড়িতে দুর্গা পুজা হতো। কিন্তু কয়েক বছর আগে তাঁর বোন হঠাৎ মারা যান। এই বাড়ির পুজোয় অগ্রণী ভূমিকা ছিল তাঁর। শোকে বিহ্বল হয়ে তাঁরা বাড়ির পুজো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। তাঁদের মনে হয়েছিলো হয়তো পুজোর কোনও ত্রুটির জন্যই বাড়ির একজন সদস্যা অকালে চলে গেলেন।
দুলাল বাবুর একমাত্র সন্তান দীপ্তরূপ তখন মাত্র দশ বছরের বালক। তাঁর জেদ পুজো করতেই হবে। কিন্তু ঘোষবাড়ির বড় কর্তা পূজা করতে নারাজ। সিদ্ধান্ত হয়েছে, মৃন্ময়ী মূর্তি আর ঘরে ঢুকবে না। দীপ্তরূপ তখনও নাছোড়বান্দা, পুজো বাড়িতে হওয়া চাই।
ছোট থেকেই আঁকার হাত খুব ভালো দীপ্তর। সেই বয়সেই পুতুল বানাতে পারদর্শী ছিল সে। তাই দীপ্ত ঠিক করলো ছোট হাতেই খবরের কাগজের মন্ড করে সে মূর্তি বানাবে। যথারীতি সে মূর্তি ক্রমেই অসামান্য দেবী মূর্তির রূপ ধারণ করল।
মূর্তি বানানো হয়ে গেলেও পুজো কে করবে? পুরোহিত তো আসবেন না। তখন সেই দুর্গা জোর বই কিনে মন্ত্রপাঠ শিখে নিজেই পুজো করতে বসে। চণ্ডীপাঠ থেকে পুজোর সব উপাচার, নিজেই করেন দীপ্ত।
কৈশোর থেকে তারুণ্যে প্রবেশ করেছে দীপ্তরূপ। এখন সে হেহালা কলেজের প্রথম বর্ষের জুলজি অনার্সের ছাত্র।
প্রায় একমাস ধরে কাগজ কেটে কেটে সে মূর্তি তৈরি করে তাকে সহযোগিতা করে তার কিছু আত্নীয়স্বজন। সব কিছু দেখে মেনে নিয়েছেন মা নুপুর দেবী। তিনি জানান, একদম স্বাভাবিক নিয়মে আমরা এই পুজো করি সমস্ত আচার বিধি মেনেই। পুজোর কটা দিন বাড়িতে প্রচুর আত্নীয় স্বজন আসেন।হইহুল্লোড় হয়, সন্ধ্যাআরতি, সন্ধিপূজা, ধুনুচি নাচ, দশমীতে সিঁদুরখেলা সবই হয়। পাড়ার পুকুরে বিসর্জনও হয় দশমীর দিনে।
দীপ্তরূপের কথায়, 'পুরুতদিয়েই যে পুজো করতে হবে তার কি মানে আছে। মা আছেন আমাদের অন্তরে। তাঁকে পুজো করার জন্য ভক্তি থাকলেই যথেষ্ট। তাই আমার কাছে মা মৃন্ময়ী না হলেও চিন্ময়ী। তাই মাটি নয় আমি কাগজ দিয়েই ঠাকুর বানাই। পরিধান বস্ত্র কিনে এনে পড়াই। দেবীর অস্ত্র গুলোও আমিই করি। তবে এব্যপারে আমি গুগলের শরণাপন্ন হই। সমস্ত মন্ত্রপাঠ জানি। তাই আমিই পুজো করি।'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন