Advertisment

ফেলে দেওয়া সামগ্রী দিয়েই গড়লেন দুর্গাপ্রতিমা, বিক্রির টাকায় অসহায় মানুষের পাশে ‘ভাগাড়ের মা’ পাপিয়া!

প্রতিমা বিক্রির টাকায় ২০০ জন অসহায় মানুষ কে পূজোয় নতুন জামা কাপড় দেওয়া,হবে এমনটাই জানালেন বিশিষ্ট সমাজসেবী পাপিয়া কর।

author-image
Sayan Sarkar
New Update
Durga puja 2022, durga pujo 2022, durga puja, durga pujo,Kolkata news, Kolkata latest news, Kolkata news live, Kolkata news today, Today news Kolkata,woman,viral,serve,Ranaghat station,Papiya Kar,homeless,food,feed,distribute, badhumahal club, durgapuja theme, paiya kar news, papiya kar bengali news

পাপিয়া করের কর্মকাণ্ডকে কুর্নিশ! পুজোয় অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে প্রাণপাত করছেন,‘ভাগাড়ের মা’

স্টেশনে থাকা ভিখারিদের দেখলেই সাধারণত সকলে পাশ কাটিয়ে চলে যান। কিন্তু নদিয়ার মাজদিয়ার পাপিয়া কর পাশ কাটিয়ে যাওয়া দূরস্ত, ভিখারিদের নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দেন। ১৪ বছর ধরে নিজের হাতে নীরবে করে চলেছে এই বিশাল কর্মকাণ্ড। ইতিমধ্যেই পাপিয়াদেবীর এই কর্মকাণ্ড এখন রীতিমত নজর কেড়েছে সকলের। মহামারি শেষে দুর্গাপুজোয় ২০০ ফুটপাতবাসীর মুখে হাসি ফোটাতে ইতিমধ্যেই পাপিয়াদেবি তৈরি করেছেন ফেলে দেওয়া সামগ্রী দিয়ে দুর্গাপ্রতিমা। এই প্রতিমা বিক্রির টাকায় ২০০ জন অসহায় মানুষ কে পূজোয় নতুন জামা কাপড় দেওয়া,হবে এমনটাই জানালেন বিশিষ্ট সমাজসেবী পাপিয়া কর।

Advertisment

পাপিয়াদেবি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানান, “এবারের দূর্গা মূর্তি ১১ বছরে পড়ল। এবারের থিম ‘শিক্ষা’। মূর্তি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়নি  কোন বাঁশ,বিচুলি, মাটি ব্যাবহার।  পুরোটাই কাগজ দিয়ে করা।  আর যেহেতু থিম ‘শিক্ষা’, তাই সমস্ত কিছু শিক্ষা সামগ্রী ( রাবার,পেন্সিল, সেলেট,মোমরং,রং পেন্সিল)  দিয়ে  তৈরি করা।  তৈরি করতে সময় লেগেছে ১০ মাস। ১৬ হাজার ব্যায়ে এই প্রতিমার ওজন,৬ কেজি এবং উচ্চতা ৬ ফুট”।

publive-image
ফেলে দেওয়া শিক্ষা সামগ্রী দিয়ে তৈরি দুর্গা প্রতিমা : <ছবি সৌজন্যে পাপিয়া কর>

তিনি বলেন, “এই থিমের মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছি  পৃথিবীতে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই।  আর সন্তান বড় হয়ে যাই হোক, ডাক্তার, গায়ক, শিক্ষক! প্রতিটি সন্তানের প্রথম শিক্ষক হন তাঁর মা। তাই মা শিক্ষিত হলে সন্তান ও সুন্দর ভাবে গড়ে ওঠে। মায়ের শিক্ষা সবার আগে দরকার”।

পাপিয়াদেবি আরও জানান, “মহিষকে এখানে অসুর হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে ।  এখানে অসুর হল অশিক্ষা,কুসংস্কার। তাই মায়ের হাতে কলম ‘কুসংস্কার’ অসুর’কে বধ করছে। এখানে আমি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি শিক্ষা দিয়েই কুসংস্কার কে বধ করা সম্ভব”।

বরাবরই হাতের কাজ ভালবাসেন পাপিয়াদেবি।  তবে ১১ বছর ধরে বিশেষ এই দুর্গা মূর্তি গড়ে তা বিক্রির টাকায় অনাথ মানুষগুলোর মুখে একচিলতে হাসি ফোটানোই পাপিয়া দেবির মুল লক্ষ্য। এবারের দূর্গা মূর্তির তৈরীর উদ্দেশ্য প্রতিবারের মতো এবারও মূর্তি  বিক্রি করে যে টাকা হাতে পাবেন তা দিয়ে রাস্তায়, ফুটপাতে থাকা ২০০ মানুষ কে পূজোয় নতুন জামা কাপড় তুলে দেওয়া হবে। পাপিয়াদেবির এই প্রয়াসকে কুর্ণিশ জানিয়েছেন সমাজের সকল শ্রেণির মানুষ। ইতিমধ্যেই পাপিয়াদেবি একটি ফেসবুক পোস্টে সমাজের সকল মানুষকে তার এই কর্মকাণ্ডে সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

পাপিয়াদেবীর এই অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে কুর্নিশ জানিয়ে এবছর দুর্গাপুজোয় বাগুইআটি অশ্বিনীনগর বন্ধুমহল ক্লাবের থিমে উঠে আসতে চলেছে পাপিয়াদেবীর এই কর্মকাণ্ড। অশ্বিনীনগর বন্ধুমহল ক্লাবের দুর্গাপুজোর মিডিয়া কোঅর্ডিনেটর স্বরূপ নাগ বলেন, “থিমের পুজোর মাধ্যমে সামাজিক বার্তা দেওয়াই আমাদের ক্লাবের বিশেষত্ব! এই বছর আমাদের ক্লাবের দুর্গাপুজার থিম হিসাবে উঠে এসেছে ‘ভাগাড়ের মা’!”

publive-image
পাপিয়াদেবির হাতের তৈরি দুর্গা প্রতিমা : <ছবি সৌজন্যে পাপিয়া কর<

অভিনব এই থিম জুড়েই থাকছেন পাপিয়া কর। ১৪ বছর ধরে পাপিয়াদেবীর কর্মকাণ্ডকে তুলে ধরা হবে সাধারণের সামনে। সেই সঙ্গে প্যান্ডেলে থাকছে পাপিয়াদেবীর হাতের তৈরি দুর্গাপ্রতিমা। এব্যাপারে পাপিয়াদেবি জানান, “এক কথায় আমি অভিভূত! এত বড় সম্মান পাব আমি কোনওদিন কল্পনা করি, বাঙালির প্রাণের পুজোয় কোনও একটি ক্লাবের থিম জুড়ে শুধু আমি, এটা আমার কাছে একটা স্বপ্নের মতো, আমি বাগুইআটি অশ্বিনীনগর বন্ধুমহল ক্লাবের কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ’!

পাপিয়ার কথায়, “সমাজের এই অসহায় মানুষগুলোর পাশে থাকার থেকে বড় শান্তি আর কিছুতেই নেই”। চলতি বছর নিজের হাতে দুটো মুর্তি গড়েছেন পাপিয়াদেবি। কাঠের ফুলকি দিয়ে তৈরি করা অপর একটি মুর্তি যাবে রানাঘাট পাইকপাড়া ব্রতী সংঘ ক্লাবে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য রাতের রাতে রানাঘাট স্টেশনের দুঃস্থ মানুষগুলোর মুখে বিয়েবাড়ির আলাদা করে রাখা মুখে তুলে দিয়েই সংবাদ মাধ্যমের নজরে আসেন মাজদিয়ার পাপিয়া কর। একের পর এক নানান সমাজসেবা মূলক কাজে এগিয়ে আসতে দেখা গিয়েছে পাপিয়াদেবীকে। অন্নপূর্ণার সরাইঘর থেকে কলকাতার রাজপথে দুঃস্থ শিশুদের প্রতি রবিবার নিয়ম করে ক্লাসও করান পাপিয়া। সেই সঙ্গে পুজোর এই বিশেষ দিনে অসহায় মানুষের মুখে একচিলতে হাসি ফোটাতে প্রাণপাত করে চলেছেন পাপিয়া।

Kolkata Durga PUja papiya kar kolkata news durga puja 2022
Advertisment