বাংলায় ফের একবার 'বড় দুর্গা' নিয়ে মাতামাতি, এবারে ৬০ ফুট উঁচু দুর্গা প্রতিমা। কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কের সেই কুখ্যাত ক্রেজ এখনও অব্যাহত। কুখ্যাত, কারণ ২০১৫ সালে দেশপ্রিয় পার্কের বহু বিজ্ঞাপিত ৮৮ ফুট উঁচু প্রতিমাকে ঘিরে তৈরি হয় নজিরবিহীন উন্মাদনা। চতুর্থী থেকেই পার্কে ভিড় করেন হাজার হাজার মানুষ। পঞ্চমীর সন্ধ্যায় বাঁধনছাড়া ভিড়ে স্তব্ধ হয়ে যায় দক্ষিণ কলকাতার ট্রাফিক ব্যবস্থা, চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় দেশপ্রিয় পার্ক চত্বরে। এমনকি পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর গুজবও ছড়ায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে সাময়িকভাবে প্রতিমা দর্শন বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এবং শেষমেশ বন্ধই করে দেওয়া হয় পুজো।
তবে এবছর বড় দুর্গা দেখতে গেলে আপনাকে যেতে হবে ব্যান্ডেল মেরীপার্কে, যেখানে ২৪ তম বর্ষের 'মেগা পুজোর' আয়োজনে সামিল হয়েছেন কমিটির উদ্যোক্তারা। পুজো কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন, এবছর পুজোর বাজেটে তাঁরা কোনো কার্পণ্য করতে চাননি। পাড়ার বাসিন্দারাও পাশে ছিলেন। চতুর্থীর দিন বেলুড় মঠের এক মহারাজ উদ্বোধন করেন এই পুজো মন্ডপ।
২০ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা বাজেটের মেরীপার্কের পুজোর রোশনাইয়ে ছেয়ে গেছে গোটা ব্যান্ডেল। চতুর্থীর শেষ সন্ধ্যায় সেখানে রীতিমত দক্ষযজ্ঞ চলছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শেষ পর্বের ছোটখাটো কাজ সেরে নিচ্ছেন কারিগররা। কোথাও যেন খামতি না থাকে, চেষ্টার ত্রুটি রাখতে চান না ক্লাব কর্তারা। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে সঞ্জয় কর্মকার বলেন, "আমরা তাক লাগিয়ে দিতে চাই। দেখাতে চাই যে মফস্বলের পুজোও কলকাতাকে টক্কর দিতে পারে।"
তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, দেশপ্রিয় পার্কের বড় দুর্গা করার ফলে যে জনজোয়ার দেখেছিলেন কলকাতাবাসী, যার ফলে ঘটে যেতে পারত বিরাট দুর্ঘটনা, সে ঘটনার কথা মাথায় রেখে আপনারা ভিড় সামাল দিতে কী বন্দোবস্ত করেছেন? সঞ্জয়বাবু বলেন, "গোটা রাজ্য জুড়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি। আর এটা যেহেতু কলকাতা নয়, তাই সেই ভিড় হবে না। তবে ব্যান্ডেল এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষ যাঁরা আসবেন, তাঁদের জন্য আলাদা করে প্রবেশ ও বাহির পথ করা হয়েছে। ভলান্টিয়ার থাকবে অনেক। যারা সমস্তটা পরিকল্পনা মাফিক দেখভাল করবে।"
আরও পড়ুন: মুসলিম বালিকাকে অষ্টমীতে কুমারী রূপে পুজো করার প্রস্তুতি কলকাতায়
ঠিক কী কী দেখতে পাবেন মেরীপার্কে? ক্লাবের সামনে পুকুরের এক কোনায় প্লাইউড দিয়ে তৈরী হয়েছে বিশাল বজরা। আর সেই বজরায় থাকছেন স্বপার্ষদ দুর্গা। এবারের থিম, বজরাতে চেপে মা দুর্গা তাঁর ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই পৃ্থিবীর বুকে পাড়ি দিয়েছেন। আর এই থিম তৈরী করার জন্য পুকুরের ধারে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে অর্ধচন্দাকৃতি কাঠামো বানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: হাওড়ায় অবলীলায় মণ্ডপসজ্জার দায়িত্ব নিয়ে এগোচ্ছে ভিন্নভাবে সক্ষম ছাত্রছাত্রীরা
বৃহৎ প্রতিমার অংশগুলি ভাগ ভাগ করে কৃষ্ণনগর থেকে লরি করে নিয়ে আসা হয়েছে। তারপর সোনালী রঙের প্রলেপ দিয়ে সেগুলিকে জুড়ে ৬০ ফুটের প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। তবে শুধু মূর্তিতেই চমক নয়। মন্ডপসজ্জাতেও কলকাতাকে হার মানাতে চায় ব্যান্ডেল মেরীপার্ক। প্রথমে থাকছে আদিবাসী গ্রামের আবহ। যেখানে দেখতে পাবেন আদিবাসী পাড়ার দৈনন্দিন জীবনযাপন। তারপরই পুকুরের মাঝে দেখা যাবে বিশালাকার দুর্গাপ্রতিমা।