একেই বলে পর্বতের মূষিক প্রসব। এত ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত বাংলার দুর্গাপুজোর উদ্বোধনে আসছেন না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। দিল্লি থেকে কোনও বার্তা আসেনি। অষ্টমীতে বাংলার আসার সম্ভাবনার কথা বলেছিল বঙ্গ বিজেপি। কিন্তু এখন সেই সম্ভাবনাও নেই। শুক্রবার বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানিয়ে দিয়েছেন, বিশেষ কাজের কারণে অমিত শাহ অষ্টমীর দিনও আসতে পারছেন না। শাহি সফর না হওয়ায় রীতিমতো হতাশ বঙ্গ নেতৃত্ব।
আগামিকাল, ইজেডসিসি-তে বিজেপির দুর্গাপুজোর উদ্বোধন। এবারই শেষবার পুজো করছে বিজেপি। ২০২০ সালে প্রথমবার ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেবার দলীয় নেতা-কর্মীদের উৎসাহ ছিল দেখার মতো। কিন্তু সেবার পুজোর সঙ্গে যুক্ত অনেকেই এবার আর দলেই নেই। ভাঁটা পড়েছে উৎসাহেও। সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যার, বিজেপির দুর্গাপুজো এবং সল্টলেকের একটি মণ্ডপের উদ্বোধন করার কথা ছিল শাহের। কিন্তু সে সম্ভাবনা নেই। বরং অষ্টমীতেও আসতে পারছেন না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডারও আসার কথা বলা হয়েছিব বঙ্গ নেতৃত্বের তরফে। কিন্তু তিনিও আসছেন না।
জানা গিয়েছে, শুক্রবার পুজোর উদ্বোধন করবেন রাজ্য সভাপতি সুকান্তই। এবার শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি-সহ রাজ্য সরকারের একাধিক দুর্নীতি নিয়ে থিম করেছে এই পুজো। সরকারি জায়গায় এই পুজো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু সব নজর ছিল অমিত শাহের সফর ঘিরে। শাহ না আসার খবরে পুজোর উৎসাহে কিছুটা ভাঁটা পড়েছে। এমনিতেই এবার নমো নমো করে পুজো করছে বিজেপি। এটাই শেষবার, তাই শাহকে দিয়ে উদ্বোধন করিয়ে নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করার চেষ্টা করেছিল বঙ্গ নেতৃত্ব।
আরও পড়ুন পঞ্চমীতে সুখবর চাকরিপ্রার্থীদের জন্য, ১৫৮৫ জনকে ইন্টারভিউতে ডাকল SSC
অনেক ঘটা করে বছর দুই আগে দুর্গাপুজো শুরু করেছিল বঙ্গ বিজেপি। সল্টলেকের ইজেডসিসি-তে মহাষষ্ঠীতে দেবীর বোধনে ভার্চুয়ালি পৌরহিত্য করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তখন তাঁর লম্বা দাঁড়ি, বেশভূষা নিয়েও আলোচনা কম হয়নি। পুজো ঘিরে বাংলা দখলের স্বপ্নে তখন বুঁদ পদ্মনেতারা। বেশ জাঁকজমক করে পুজো করেও লাভ হয়নি। বছর ঘুরতেই বিধানসভায় ধরাশায়ী হয় বিজেপি। মা দুর্গার আশীর্বাদ পাননি গেরুয়া নেতারা।
২০২০ সালে যখন পুজো শুরু হয় সেইসময় ওই উদ্যোগের মূল পুরোধারাই এখন আর বিজেপিতে নেই। মুকুল রায়, সব্যসাচী দত্ত এবং জয়প্রকাশ মজুমদাররা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে। বোধনের অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তিনিও এখন তৃণমূলে এবং রাজ্যের মন্ত্রী হয়ে গেছেন। এমনকী তখনকার রাজ্য পর্যবেক্ষক কেন্দ্রীয় সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়কেও রাজ্যের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয়েছে। তাঁর জায়গায় এসেছেন গোবলয়ের নেতা সুনীল বনসল।
আরও পড়ুন বড় নির্দেশ আদালতের, মন্ত্রীর লকারের বাজেয়াপ্ত চাবি ফেরাতে হবে CBI-কে
প্রথমবার পুজোর সময়ই তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বলেছিলেন, পুজো করা রাজনৈতিক দলের কাজ নয়। যা নিয়ে মুকুল-কৈলাসদের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্বও প্রকাশ্যে চলে আসে। পুজোর কোনও দায়িত্বই নেননি দিলীপ। পরের বারও তাঁকে দেখা যায়নি। এবার তো প্রকাশ্যে বিতর্কিত মন্তব্য করে হাইকমান্ডের অসন্তোষে পড়েছেন দিলীপ। এবার নয়া রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। প্রথমবার পুজোয় সংকল্প করা হয় তৎকালীন রাজ্য সহ-সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে। এবার তো তিনি রাজ্য কমিটিতেই নেই।