স্টেশনে থাকা ভিখারিদের দেখলেই সাধারণত সকলে পাশ কাটিয়ে চলে যান। কিন্তু নদিয়ার মাজদিয়ার পাপিয়া কর পাশ কাটিয়ে যাওয়া দূরস্ত, ভিখারিদের নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দেন। ১৪ বছর ধরে নিজের হাতে নীরবে করে চলেছে এই বিশাল কর্মকাণ্ড। স্টেশনের ভিখারি গোবিন্দর জন্মদিন উপলক্ষে গত ২৫ জুন দেহদানের অঙ্গীকার করেন পাপিয়াদেবী। সেই সঙ্গে সেদিনের ক্যাম্পে দেহদানের অঙ্গীকার করেন ২১ জন সাধারণ মানুষ। পাপিয়াদেবীর এই অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে কুর্নিশ জানিয়ে এবছর দুর্গাপুজোয় বাগুইআটি অশ্বিনীনগর বন্ধুমহল ক্লাবের থিমে উঠে আসতে চলেছে পাপিয়াদেবীর এই কর্মকাণ্ড।
অশ্বিনীনগর বন্ধুমহল ক্লাবের দুর্গাপুজোর মিডিয়া কোঅর্ডিনেটর স্বরূপ নাগ বলেন, "থিমের পুজোর মাধ্যমে সামাজিক বার্তা দেওয়াই আমাদের ক্লাবের বিশেষত্ব! এই বছর আমাদের ক্লাবের দুর্গাপুজার থিম হিসাবে উঠে এসেছে 'ভাগাড়ের মা'!" অভিনব এই থিম জুড়েই থাকছেন পাপিয়া কর। ১৪ বছর ধরে পাপিয়াদেবীর কর্মকাণ্ডকে তুলে ধরা হবে সাধারণের সামনে। সেই সঙ্গে প্যান্ডেলে থাকছে পাপিয়াদেবীর হাতের তৈরি দুর্গাপ্রতিমা। গতকালই খুঁটিপুজোর মাধ্যমে পুজোর শুভারম্ভ হয়। খুঁটিপুজোর অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পাপিয়া কর নিজে! সঙ্গে ছিলেন বিধায়ক অদিতি মুন্সি।
এছাড়াও ছিলেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় সহ সম্মানীয় অথিতি বর্গ'। পাশাপাশি তিনি তুলে ধরেন পাপিয়া করের দেহদানের অঙ্গীকারের উদ্যোগকেও। তিনি বলেন, 'গত ২৫ জুন পাপিয়াদেবী স্টেশনের গোবিন্দ'র জন্মদিন উপলক্ষে যে দেহদানের অঙ্গীকারের আহ্বান জানিয়ে যে ক্যাম্প আয়োজন করেছিলেন। তাঁর সেই প্রচেষ্টাকে সম্মান জানিয়ে এদিনের অনুষ্ঠানে ক্লাবের তরফে মরণোত্তর দেহদান অঙ্গীকার উপলক্ষে এক কর্মসূচি আয়োজন করা হয় যাতে ৪৮ জন দেহদানের অঙ্গীকার করেন। রক্তদানের মতো দেহদানও যে সমাজের কাছে একান্তভাবেই প্রয়োজনীয় সেই বার্তাই এদিনের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তুলে ধরাই ছিল আমাদের লক্ষ্য'!
এব্যাপারে পাপিয়া করের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'এক কথায় আমি অভিভূত! এত বড় সম্মান পাব আমি কোনওদিন কল্পনা করি, বাঙালির প্রাণের পুজোয় কোনও একটি ক্লাবের থিম জুড়ে শুধু আমি, এটা আমার কাছে একটা স্বপ্নের মতো, আমি বাগুইআটি অশ্বিনীনগর বন্ধুমহল ক্লাবের কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ'!
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য রাতের রাতে রানাঘাট স্টেশনের দুঃস্থ মানুষগুলোর মুখে বিয়েবাড়ির আলাদা করে রাখা মুখে তুলে দিয়েই সংবাদ মাধ্যমের নজরে আসেন মাজদিয়ার পাপিয়া কর। একের পর এক নানান সমাজসেবা মূলক কাজে এগিয়ে আসতে দেখা গিয়েছে পাপিয়াদেবীকে। অন্নপূর্ণার সরাইঘর থেকে কলকাতার রাজপথে দুঃস্থ শিশুদের প্রতি রবিবার নিয়ম করে ক্লাসও করান পাপিয়া। কলকাতার পাশাপাশি মাঝদিয়াতেও পথশিশুদের জন্য বিশেষ স্কুল রয়েছে পাপিয়াদেবী। পাপিয়ার কথায়, “সমাজের এই অসহায় মানুষগুলোর পাশে থাকার থেকে বড় শান্তি আর কিছুতেই নেই”।