Advertisment

বৃহন্নলাদের পুজো দিয়েই মা দুর্গার পুজোর উদ্বোধন, এমন ভাবনার প্রশংসা সর্বত্র

দুর্গা পুজো উদ্যোক্তাদের এমন প্রয়াস নানা মহলের প্রশংসা কুড়িয়েছে।

IE Bangla Web Desk এবং Nilotpal Sil
New Update
Durga puja was inaugurated in Aushgram with the puja of Brihannala

বৃহন্নলাদের পুজো দিয়ে মা দুর্গার পুজোর উদ্বোধন।

মহাভারতের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তাঁদের পরিচয়। তবুও তাঁরা আজও বড়ই যেন ব্রাত্য হয়ে রয়ে গিয়েছেন সমাজে। তাঁরা দীর্ঘভুজা অর্থাৎ বৃহন্নলা। যদিও সমাজের একটা বড় অংশের মানুষ তাঁদের
ব্রাত্য করে রাখতে চান না। যেমনটা করেননি পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের গোপালপুর উল্লাসপুরের
সার্বজনীন দুর্গা পুজা কমিটি। বৃহন্নলাদের পুজো করেই দুর্গা পুজোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন সেরেছে এই কমিটি। খেত মজুর অধ্যুষিত এক অখ্যাত গ্রামের দুর্গা পুজো উদ্যোক্তাদের এমন প্রয়াস নানা মহলের প্রশংসা কুড়িয়েছে।

Advertisment

গোপালপুর উল্লাসপুর গ্রামের আশপাশের গ্রামগুলির সঙ্গে জড়িয়ে আছে জমিদার আমলের ইতিহাস। আগে ওই সব জমিদার গ্রামেই হত দুর্গা পুজো। দেবীকে দর্শন করতে গ্রামের আট থেকে আশি সবাইকেই ওই জমিদার বাড়িতেই যেতে হত। গোপালপুর উল্লাসপুর গ্রামে দুর্গা পুজো হত না বলে গ্রামবাসীদের আক্ষেপের অন্ত ছিল না।

এই পরিস্থিতিতে গ্রামের পরিযায়ী শ্রমিক ও কৃষি শ্রমিকদের এককাট্টা করে দুর্গা পুজো করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেন গ্রামেরই ভূমি পুত্র তথা লেখক রাধামাধব মণ্ডল। গড়ে তোলা হয় গোপালপুর উল্লাসপুর সার্বজনীন দুর্গা পুজা কমিটি। গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে চাঁদা তুলেই গত বছর প্রথম দুর্গা পুজো হয়। এ বছর সেই দুর্গা পুজো দ্বিতীয় বর্ষে পা দিয়েছে।

রাধামাধব মণ্ডল বলেন, ''পূর্ব বর্ধমান জেলার জঙ্গলমহল হিসাবেই খ্যাত আউসগ্রাম। ঐতিহাসিক নিদর্শন ও পাণ্ডুরাজার ঢিবি সম্বৃদ্ধ পাণ্ডুক গ্রামের অদূরের অজয় নদের পাড়ে অবস্থিত খোপালপুর উল্লাসপুর গ্রাম । সেখানকার শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের মাঠেই দু’বছর ধরে দুর্গা পুজোর আয়োজন করা হচ্ছে।" তাঁর কথায়, "গত বছর কৃষকদের পুজোর মধ্য দিয়ে আমাদের গ্রামে দুর্গা পুজোর শুভারম্ভ হয়েছিল। এ বছর মহাপঞ্চমীর দিন বৃহন্নলাদের পুজা করে দুর্গা পুজোর উদ্বোধন সাড়া হয়েছে। পুজোর কটা দিন বহুরুপীর দল ও লাঠি খেলার দল গ্রামবাসীদের মনোরঞ্জনের জন্য হাজির হবেন। এ ছাড়াও থাকবে যাত্রাগান ও বাউল গান।"

আরও পড়ুন- হীরানন্দানির বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি! চাপ বাড়তেই পাল্টা মুখ খুললেন তৃণমূলের মহুয়া

পুজোর আয়োজনের দায়িত্বে থাকা কালোসোনা মেটে, নিমাই মেটে, রতন কর্মকার, রাখী ঘোষ ও তাপসী মণ্ডলরা জানান, লোক আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে তাঁদের গ্রামের দুর্গা পুজোর মণ্ডপ। এছাড়া আলোকসজ্জা তো থাকছেই। বহু বিশিষ্ট মানুষজন তাঁদের গ্রামের দুর্গা মায়ের পুজো দেখতে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক জগতের মানুষজনও আসবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

পুজো কমিটির অপর সদস্য গৃহবধূ বন্দনা ঘোষ ও মিতালী কর্মকাররা জানান, অজয় নদের বানে তাঁদের গ্রাম বহুবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সর্বস্বান্ত হয়েছেন গ্রামের বহু বাসিন্দা। তাঁদের অনেকেই গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আঠারো পাড়ার গ্রাম এখন সাত পাড়ায় দাঁড়িয়েছে। দেবীর কাছে তাই তাঁদের প্রার্থনা, আর যাতে তাঁদের গ্রাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। গ্রামটা যাতে অজয়ের গর্ভে চলে না গিয়ে অক্ষত থাকে । তাঁরা বলেন, "প্রতিবছর যেন আমরা এভাবেই দেবী দুর্গা মায়ের পুজো করে যেতে পারি।"

West Bengal East Burdwan Durga Puja
Advertisment