আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠল আলোর বেণু! আজ মহালয়া। পিতৃপক্ষের অবসান, দেবীপক্ষের সূচনা। চারিদিকে পুজো-পুজো গন্ধ। সকাল থেকে গঙ্গার ঘাটে তর্পণ করতে উপচে পড়ছে মানুষের ঢল। কার্যত মহালয়া থেকেই শুরু হয়ে যায় শহর কলকাতার দুর্গাপূজা। ১৪২৯ বঙ্গাব্দ বা ইংরেজি ২০২২ সালের মহালয়া রবিবার। হিসেবমতো তার পর থেকেই শুরু হয়ে গেল দুর্গাপুজো।
কলকাতার পুজো মানেই বেহালার পুজো। করোনা আতঙ্ক ভুলিয়ে শহরবাসীকে উৎসবের আনন্দে ফেরানোয় বেহালার পুজোর এক ও একমাত্র উদ্দেশ্য। থিমের টক্কর, আলোয় রশনাই এসব তো রয়েছেই। তবে সেগুলিকে ছাপিয়ে ২ বছরের না পাওয়ার ব্যর্থতাকে ভুলিয়ে উৎসবের আনন্দ যাতে মানুষ একেবারে চেটে পুটে উপভোগ করতে পারে তার জন্য কোনরকমের খামতি রাখতে চাইছে না বেহালার পুজোগুলি।
এবার ৫৭ বছরে পা দিতে চলেছে বেহালা ফ্রেন্ডস-এর দুর্গোৎসব। এবছরের থিম ‘দুর্গাযাপন’। প্রতিটি মানুষের জীবনে দুর্গা পুজোর আনন্দের ভাবনা চিন্তা আলাদা আলাদা। সেই আলাদা আলাদা চিন্তা ভাবনাকে সামনে রেখেই একেবারে সম্পূর্ণ এক ভিন্ন ধারায় সজ্জিত হচ্ছে বেহালা ফ্রেন্ডস-এর দুর্গা পুজো। এবারের মাতৃ মণ্ডপ তৈরি করছেন শিল্পী তাপস দত্ত। শিল্পীর মতে, “আমাদের জীবনের প্রতিটি পরতে রয়েছে দুর্গা। সেই দুর্গাকে নিয়ে কীভাবে আমাদের ভাবনা-চিন্তা জীবন অতিবাহিত হয়, তাই উঠতে চলেছে বেহালা ফ্রেন্ডস-এর ‘দুর্গাযাপন’ থিমের মধ্য দিয়ে। প্রতিমা তৈরি করছেন দীপেন মন্ডল।
অন্যদিকে পুজোর চমকে কোন রকমের ঘটতি রাখতে চাইছে না বড়িশা ক্লাব কমিটি। এটি বেহালার বড় পুজো গুলির মধ্যে অন্যতম। সাঁঝবাতি দিয়ে তৈরি হচ্ছে পুজো প্যান্ডেল। জোড় কদমে চলছে পুজোর প্রস্তুতি। বাঙালির ঐতিহ্য তুলে ধরতে চলেছে বড়িশা ক্লাব কমিটি। ৩৪ বছরে পা দিতে চলেছে বড়িশা ক্লাবের পুজো। সে কারণে পুজোয় থাকবে নতুন চমক। চলছে তারই প্রস্তুতি।
আরও পড়ুন : < করোনা আতঙ্ক অতীত, মহালয়ার সকালে ঘাটে ঘাটে চেনা ভিড়, পিতৃপক্ষের অবসানে দেবীপক্ষের সূচনা! >
নিরাপদ ‘আশ্রয়ের’ সন্ধান পেতে এবারের পুজোয় যেতেই হবে বেহালা, থাকছে চমকের ছড়াছড়ি! বেহালার নূতন দলের পুজোর এবারের থিম ‘আশ্রয়’। নিরাপদ আশ্রয় প্রতিটি মানুষের জীবনে একান্ত ভাবেই প্রয়োজনীয়। আর সেই ভাবনাকে মাথায় রেখেই বেহালার নূতন দলের পুজোর এবারের থিম ‘আশ্রয়’। বেহালার নূতন দলের পুজো এবার ৫৭ তম বর্ষে পা দিতে চলেছে। ২০০৫ সাল থেকেই থিম পুজোর চল। আর অতিমারী পেরিয়ে এবারের পুজোয় সেরার সেরা চমক দিতে তৈরি বেহালা নূতন দল। শিল্পী অয়ন সাহার কথায়, ‘ভাঙা-গড়া নিয়েই এবারের আমাদের পুজোর এই থিম। প্রতিমা তৈরিতেও থাকছে অভিনবত্বের ছোঁয়া মাটি ও ধাতু মিলে মিশে একাকার। ধ্বংসের মধ্যে সৃষ্টির ভাবনাকেই মূলত ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে বেহালা নূতন দলের পুজোয়’।
গত ২ বছর ধরেই অতিমারীর দাপট মানুষের জীবনকে একেবারেই অতিষ্ঠ করে তুলেছে। সেই অতিমারীর দাপট কমতেই এবারের পুজো ঘিরে মানুষের মধ্যে চূড়ান্ত উদ্দীপনা। উৎসবের আনন্দের জোয়ারে গা ভাসাতে প্রস্তুত সকলেই। হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটা দিন। আর তারপরেই বাঙালির ‘প্রাণের পুজো’ দুর্গাপুজো। শহর থেকে জেলার পুজো মণ্ডপে থিমের রমরমা। পুজো যতই এগোচ্ছে শিল্পীদের মধ্যে বেড়েছে ব্যস্ততা। নাওয়া-খাওয়া ভুলে সেরারা সেরা জাহির করার পালা।
ইউনেস্কোর হেরিটেজ সম্মান পেয়েছে বাংলার দুর্গাপুজো৷ তাই চলতি বছরের দুর্গাপুজোকে ঘিরে আগ্রহ গোটা বিশ্ব জুড়ে। এ বারের পুজোয় তাই তাক লাগাতে প্রস্তুত হচ্ছে বেহালা নতুন দল। থিম ভাবনায় রয়েছে অভিনবত্ব।
শিল্পী অয়ন সাহার কথায়, “ছোট একটি গল্পের অনুকরণে সেজে উঠছে এবারের পুজোর থিম। চারিদিকে বিভিন্ন ধরণের বাঁধন ফুটিয়ে তোলা তোলা হচ্ছে। মূলত হাউসহোল্ড মেটিরিয়ালকে কাজে লাগিয়েই এবারের থিমকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছি। ভাঙা আর গড়া এই দুইয়ের মিলিত রূপকে তুলে ধরা হবে এবারের পুজোয়”।
প্রতিটি মানুষের কাছে শৈশব এক আলাদা তাৎপর্য বহন করে। এবারের পুজো প্রত্যেকের শৈশবকে উৎসর্গ করেছে বেহালা ক্লাব। শৈশব কালের ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম, আঁকার খাতা, ঘুড়ি ওড়ানোর স্মৃতিকে টাটকা করে তুলবে এবারের পুজোর থিম। এবারের শারদ উৎসবে তাদের ভাবনা ‘আব্বুলিশ’।
খানিকটা পৌরাণিক ঘরানায় এবারের পুজোকে ফুটিয়ে তুলতে চলেছে বড়িশা সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। মণ্ডপশিল্পী থেকে আলোক শিল্পী, প্রতিমার কারিগর প্রত্যেককে নিয়েই পুজোর আনন্দে মেতে ওঠার বার্তা রয়েছে তাদের ভাবনায়। এবছর তাদের ভাবনায় ‘চিরপুরাতন নিত্যনূতন’। সিংহদালানের আদলে সেজে উঠছে মণ্ডপ।
বেহালার অন্যতম সেরা পুজো নূতন সংঘের পুজো। এবারের বেহালা নূতন সংঘের পুজোর থিম ‘অপরাজিতা’ সৃজনে শিল্পী সনাতন দিন্ডা। সহযোগিতায় সঞ্জীব ঘোষ। আলোক নির্দেশনায় রয়েছেন আশীস সাহা।