জল সমস্যা ছিল বেশ কয়েক বছর ধরেই। কিন্তু সেই সমস্যা যে কার্যত মহামারীর রূপ নেবে তা ভাবতে পারেনি দুর্গাপুরের ওয়াশিং প্লটের বাসিন্দারা। জুলাই মাসের শেষের দিক থেকে এলাকার বেশ কিছু মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলেও তখনও পরিস্থিতির গুরুত্ব আঁচ করতে পারেনি সেখানকার অধিবাসীরা। পরবর্তীতে যত দিন গড়িয়েছে ততই বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। এহেন পরিস্থিতিতে এবার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে গোটা এলাকা। ছড়িয়েছে ডায়রিয়া আতঙ্ক।
ঠিক কী পরিস্থিতি?
চলতি মাসে ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়ে পর পর মৃত্যু হয় কমলপুরের বিধান ভুঁইয়া(৩৮) ও সঙ্গীতা ভুঁইয়ার(১৫)। এরপর জ্বর-বমি-পায়খানার উপসর্গ নিয়ে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হয় স্থানীয় বাসিন্দারা। হাসপাতালের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দশ। কিন্তু স্থানীয়দের বক্তব্য, সেই সংখ্যাটা প্রায় পঞ্চাশ। তবে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় টনক নড়েছে প্রশাসনের। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা উত্তম মুখোপাধ্যায়, আসেন কাউন্সিলার মনি দাশগুপ্ত। তৃণমূল কংগ্রেস নেতা উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, "মিশন হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা গ্রামে চিকিৎসক পাঠিয়ে অস্থায়ী শিবির শুরু করেছে। প্রাথমিক চিকিৎসায় যাতে কোনও ঘাটতি না থাকে সেই দিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। ব্যবস্থা করা হচ্ছে পানীয় জলের"।
অন্যদিকে, কমলপুরের অবস্থা ক্রমশই সংকটজনক হয়ে পড়ার খবর পাওয়া মাত্রই কমলপুরের ওয়াশিং প্লটে ছুটে আসেন দুর্গাপুরের মহকুমা শাসক অনির্বাণ কোলে। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে তিনি কথাও বলেন। এমনকী স্থানীয় মানুষের সঙ্গে পরিদর্শন করেন পুরো এলাকা। খতিয়ে দেখেন এলাকার পরিস্থিতি। গ্রাম পরিদর্শন করে মহকুমা শাসক অনির্বান কোলের বক্তব্য, "আমার কাছে একজনের মৃত্যুর খবর আছে। কিন্তু এখানে এসে শুনছি আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে দুই জনের মৃত্যু ঠিক কি কারণে হয়েছে তা জানার জন্য রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছি মহকুমা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের কাছে"। দুর্গাপুরের মহকুমা শাসক জানান, সোমবার থেকেই কমলপুরের এই এলাকায় সরকারী মেডিকেল ক্যাম্প শুরু করা হবে। শুধু তাই নয় এলাকার মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টাও করা হবে সরকারের পক্ষ থেকে।
দুর্গাপুরের কমলপুরে ডাইরিয়াতে আক্রান্ত বহু মানুষ। কী বললেন মহকুমা শাসক?https://t.co/I4HBeRAoo9 pic.twitter.com/kYk2bLVRo8
— IE Bangla (@ieBangla) August 19, 2019
তবে এই ঘটনার পিছনে প্রশাসনের গাফিলতিকেই দায়ী করছেন এলাকাবাসী। কারণ, পানীয় জল বলতে এলাকার ভরসা শুধু কুয়োর জল। বাসিন্দাদের দাবি, এই জলপানের কারণেই এমন পরিস্থিতির শিকার তাঁরা। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কাউন্সিলার মনি দাশগুপ্ত। তাঁর বক্তব্য, " উঁচু এলাকা সত্বেও দুর্গাপুর নগর নিগমের তরফে জলের লাইন ঢোকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু খুব একটা লাভ হয়নি, তবে বিকল্প রাস্তা কিছু বের করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে"। প্রসঙ্গত, দুর্গাপুর নগর নিগমের এক নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যেই কমলপুর পাথর খাদান সংলগ্ন ওয়াশিং প্লট। এই এলাকার প্রায় একশো পরিবার এখানকার পাথর খাদানে কাজ করেই সংসার চালান। স্বভাবতই এই ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছে গোটা এলাকা।