Advertisment

দুর্গা-আনন্দে মাতোয়ারা বাংলা, কিন্তু মন ভাল নেই আদিবাসীদের!

কেন এ সময়েই মন খারাপ হয় আদািবাসী মানুষদের?

IE Bangla Web Desk এবং Rajit Das
New Update
during durga Puja why tribals are not in good mood? কেন দুর্গাপুজোর সময় মন ভাল থাকে না আদিবাসীদের?

দাসাই পরব পালন করছেন আদিবাসীরা।

দেবী দুর্গার পুজো উপলক্ষো আনন্দ উচ্ছাসে মাতোয়ারা হিন্দু সম্প্রদায়। কিন্তু উল্টো ছবি আদিবাসী সমাজে। কারণ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে দুর্গাপুজো হল শোকের সময়। আদিবাসীদের কাছে দুর্গার পরিচিতি 'হুদুড় দুর্গা' নামে। তাই দেবী পক্ষে হিন্দুরা যখন দেবী দুর্গার আরাধনায় মগ্ন থাকেন তখন নাচের মাধ্যমে দুর্গা অর্থাৎ হুদুড় দুর্গাকে খুঁজে বেড়ান আদিবাসীরা। ছদ্মবেশে হুদুড় দুর্গাকে খুঁজে বেড়ানোর পরবই আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে 'দাসাই পরব' নামে পরিচিত। যে পরব পালনে আজও অবিচল রয়েছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষজন। তাঁদের কাছে এই পরবের মাহাত্ম্যই আদালা। সেই মাহাত্ম্য মেনেই পুজোর শুরু থেকে 'দাসাই পরব' পালনে মাতোয়ারা আউসগ্রামের মালিয়ারা জঙ্গলমহল এলাকার আদিবাসী মানুষজন।

Advertisment

আদিবাসী সমাজের একাংশ মনে করেন তাঁরা মহিষাসুরের বংশধর। আদিবাসী জনজাতির লোকজন-ই মহিষাসুর অর্থাৎ হুদুড় দুর্গার পুজারী। তাই দুর্গা পুজোর সময়ে তাঁরা মহিষাসুরের পুজো করেন । রাঢ়বঙ্গ সহ উত্তরবঙ্গের অসুর জনজাতির মানুষজন বিশ্বাস করেন দুর্গা আশলে কোনও নারী শক্তি নয়। তাঁদের মতে দুর্গা শক্তিশালী বলবান পুরুষ। সেই কারণে তাঁদের কাছে দুর্গা 'হুদুড় দুর্গা' নামেই পরিচিত।

আরও পড়ুন- দত্ত বাড়িতে কলাবউ স্নানের আজব রীতি! কেন?

আদিবাসী জনজাতীর মানুষজন এও বিশ্বাস করেন 'অনার্য'দের দেবতা হলেন অসুর। আর্যরা কখনই অনার্যদের দেবতা 'হুদুড় দুর্গার' সঙ্গে পেরে উঠছিলেন না। তাই দেবী রুপি দুর্গাকে সামনে এগিয়ে দিয়ে মহিষাসুরের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন দেবতারা। তাঁদের মতে চিরাচরিত দুর্গা পুজোর কাঠামোয় অসুরকে যতই অত্যাচারী দেখানো হোক না কেন, বাস্তবে মহিষাসুর ছিলেন ঠিক তার উল্টোটাই। যুদ্ধে 'অসুর' কোন মহিলা ও শিশুদের আঘাত করতেন না। সেই দুর্বলতা জেনে দেবতারা বিজয়লাভ করার জন্য প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে দুর্গাকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন অসুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। নিজের নীতিতে অবিচল মহিষাসুর তাই দুর্গার কাছে পরাজিত হতে বাধ্য হন। এই বিশ্বাসে ভর করেই আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন দুর্গাপুজোর সময়ে ছদ্মবেশে নাচের মাধ্যমে তাঁদের অনার্য ভগবানকে খুঁজে বেড়ান। মূলত ভাদ্র মাস শেষ হতেই আদিবাসী মহল্লায় শুরু হয়ে যায় দাসাই পরব পালনের প্রস্তুতি। পুজোর ষষ্ঠীর দিন থেকেই পুরুষরা নারী সেজে ধামসা ও মাদল নিয়ে দাসাই নাচে মাতোয়ারা হন। দশমী পর্যন্ত চলে এই পরব।

আদিবাসী অসুর জনজাতির লৌকিক বিশ্বাস অনুযায়ী, অসুররা এই দেশের প্রাচীন জনজাতি। তাঁদের নেতার নাম ছিল '‌হুদুড় দুর্গা'‌ অর্থাৎ '‌মহিষাসুর'‌। সাঁওতালি ভাষায় দুর্গা পুংলিঙ্গ। সাঁওতালি ভাষায় '‌হুদুড়'‌ কথার অর্থ প্রচণ্ড জোরে বয়ে চলা বাতাস। আর্য সেনাপতি ইন্দ্র ছলনা ও কৌশলের আশ্রয় নিয়ে এক দেবীকে হুদুড় দুর্গার কাছে পাঠান। ওই দেবী হুদুড় দুর্গাকে বিয়ে করার পর নবমীর দিন তাঁকে হত্যা করেন। সেই কারণে ওই দেবী দুর্গাদেবী নামে পরিচিতি পান। অসুর জনজাতির মানুষজন এই লোককথাকে বিশ্বাস করেই শতকের পর শতক দুর্গোৎসবের চারদিন শোকের পরব দাসাই পালন করে আসছেন। আদিবাসী পুরুষেরা নারীর বেশে,মাথায় ময়ূরের পুচ্ছ লাগিয়ে বুক চাপড় 'ভুয়াং' নাচের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে দুঃখের গান গেয়ে এই সময়ে খুঁজে বেড়ান তাদের মহিষাসুর বা হুদুড়দুর্গাকে।

রাজ্যের শাসক দলের আদিবাসী জনজাতী গোষ্ঠীর তারক টুডু বলেন , 'আদিবাসী সংস্কৃতির অনেক কিছুই এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না আদিবাসী সমাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দাসাই পরব। সেই পরবকে সামনে রেখেই নিজেদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টায় ব্যস্ত বহু আদিবাসী দুর্গা পুজোর কটা দিন।' দাসাই পরবের অনুষ্ঠানে সামিল হন মহিলারাও।

burdwan Durga Puja Durgapuja durgapuja 2023 adivasi
Advertisment