করোনা কালে প্রায় ১৮ মাস বন্ধ থাকার পরে, অবশেষে, রাজ্যসরকারের নির্দেশে ১৬ নভেম্বর থেকে খুলেছিল স্কুল। শুরু হয়েছিল প্রস্তুতি। অন্ধকারের কালোছায়ার মাঝেও খানিক আশার আলো দেখেছিলেন রাজ্যের পুলকার চালক থেকে শুরু করে মালিকরা। কিন্তু ওমিক্রনের সংক্রমণ ফের একবার সব হিসেব ওলটপালট করে দিল। ফের রাজ্যে স্কুলের গেটে ঝুলেছে তালা। সেই সঙ্গে যেটুকু আশা দেখেছিলেন, তাও প্রায় নিভতে বসেছে পুলকার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের।
করোনা আবহে কমবেশি সব ব্যবসাই মার খেয়েছে। প্রবল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েও ফের মাথা তুলে দাঁড়ানোর মরিয়া চেষ্টা করেছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিযুক্ত মানুষজন। ব্যতিক্রম পুলকার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা। তাঁদের কথায়, “টানা দু বছর স্কুলের গেটে তালা! সেই সঙ্গে আমাদের কপালেও তালা ঝুলেছে। তবে পেট তো আর মানবে না তাই বাধ্য হয়ে অনেকেই অন্য পেশায় চলে গেছেন। কেউ কেউ খুব কম দামে গাড়ি বিক্রিও করে দিয়েছেন। দীর্ঘ দিন বসে থাকার ফলে গাড়িগুলিও নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সময়ে সময়ে গাড়ির ইন্সিওরেন্স ফিটনেস সার্টিফিকেট সহ একাধিক খরচ হয়েছে। সেই টাকা জোগাড় করতেই ঘাম ছুটেছে, নভেম্বরে স্কুল খোলার পর কিছুটা হলেও আশার আলো দেখেছিলাম! কিন্তু ডেল্টা-ওমিক্রনের জোড়া দাপটে ফের সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল”!
প্রায় একদশক ধরে পুলকার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত অনিল মাল, তাঁর গলাতেও হতাশার সুর, তাঁর কথায় “লকডাউনের প্রথম কয়েক মাস কোন মতে সংসার চালিয়েছে। ভেবেছিলাম পরিস্থিতি পালটাবে, কিন্তু বছর ঘুরে গেল পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে, মাঝে কয়েকদিন যখন ট্রেন বন্ধ ছিল তখন গাড়ি ভাড়া দিয়ে সামান্য কিছু আয় হয়েছিল। কিন্তু ট্রেন চালু হতেই সেই পরিষেবাও ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেল। বাড়িতে ছোট্ট মেয়ে রয়েছে, আমরা না হয় কোন রকম চালিয়ে নিলাম। কিন্তু মেয়ের প্রয়োজনীয় সামগ্রী জোগাড় তো করতেই হবে। শেষ পর্যন্ত কোন উপায় না দেখে এখন আমি একটি সরকারি গাড়ি চালাচ্ছি, তাতে যেটুকু আয় হয় তাই দিয়েও কোন মতে সংসার চলে”।
প্রায় একই অবস্থা পুলকার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সকলের। এপ্রসঙ্গে সংগঠনের কর্তাদের কথায়, ‘যখন নভেম্বরে স্কুল খুলল তখন যেহেতু সব ক্লাস একসঙ্গে চালু হয়নি, তাই ৩ থেকে ৫ শতাংশ গাড়ি নামানোর একটা প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ওমিক্রন পরিস্থিতি যদি নাও আসত তাও যে খুব বেশি সংখ্যক পড়ুয়া পুলকারে যাতায়াত করবে এমনটা আমরা ভাবিনি। কারণ করোনা পরিস্থিতিতে বাবা মা’রা চাইবেন না একসঙ্গে অনেকে মিলে স্কুলে যাক। সেক্ষেত্রে স্কুল খোলা থাকলেও যে আমাদের সমস্যার সুরাহা হত এমনটা নয়’!
সংগঠনের অপর এক কর্তার কথায়, ‘আমাদের ব্যবসাটা যে আদৌ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা তা নিয়ে বিস্তর সংশয় দেখা দিয়েছে’। তিনি বলেন, ‘এত দিন ধরে বন্ধ ছিল স্কুল। অনলাইনে পড়াশোনা চললেও মাঝে বদলে গিয়েছে অনেক কিছুই। পুল কার কিংবা স্কুল বাসগুলিও বন্ধ ছিল এত দিন। ফলে চালক বা অন্যান্য কর্মীরা খুঁজে নিয়েছেন অন্য কাজ। স্কুল চালু থাকলেও কতজন পড়ুয়া পুলকারে উঠবে তা নিয়ে প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল স্কুল বাস সংগঠনের। তাই নভেম্বরে স্কুল খুললেও বেশি বাস বা গাড়ি রাস্তায় নামাতে চাননি অনেকেই। সেই সঙ্গে রয়েছে পেট্রোল ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি। রয়েছে ভাড়া বাড়ানোর মত নানা বিষয়ও। সব মিলিয়ে একটা গোটা ইন্ডাস্ট্রি চোখের সামনে প্রায় অবলুপ্তির পথে’। তিনি আরও বলেন, ‘শহরের জিম, পার্লার স্যালন খোলার দাবিতে আন্দোলন রোজই টেলিভিশনের পর্দায় আমরা দেখছি। আর যে মানুষগুলি বছরের পর বছর ধরে, ছোট ছোট সন্তানদের আগলে রেখে স্কুলে দেওয়া নেওয়ার কাজ করত, তাদেরই কেউ আজ আর মনে রাখেনি’।