তৃতীয় পর্যায়ের লকডাউনে বাংলায় কোথায় কী ধরনের গতিবিধিতে ছাড় মিলবে, তা নির্ধারণে আজ বৈঠকে বসছে রাজ্য প্রশাসন। মুখ্যসচিব রাজীব সিনহার নেতৃত্বাধীন টাস্ক ফোর্স এই ছাড়ের বিষয়টি স্থির করবে। জানা গিয়েছে যে, বর্ধিত লকডাউনের কেন্দ্রীয় গাইডলাইন বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।
রাজ্য সচিবালয়ের এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, 'লকডাউনের এই পর্যায়ে কোন জোনে কী দোকান খুলবে, কোন পরিষেবা চালু থাকবে এবং শিল্পের কোন ক্ষেত্রগুলিতে উৎপাদন শুরু হবে তা মুখ্যসচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটি আলোচনার মাধ্যমে আজ স্থির করবে। এদিনই বিজ্ঞপ্তি জারি হতে পারে।'
গত বৃহস্পতিবারই লকডাউনের মেয়াদ আরও দু'সপ্তাহ বাড়ানোর কথা ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। শুক্রবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অরেঞ্জ ও গ্রিন জোনে বেশকিছু ক্ষেত্রে ছাড়ের কথা জানিয়েছিলেন। শপিং মল, হকারদের দোকান ছাড়া একক দোকান খোলার ক্ষেত্রে ছাড় থাকতে পারে বলে ঘোষণা করেন তিনি। অরেঞ্জ ও গ্রিন জোনের জেলাগুলির মধ্যে সর্বাধিক ২০ যাত্রী নিয়ে বাস চলাচলেও ছাড় ঘোষণা করা হয়। নিময় মেনে ট্যাক্সি ও ক্যাব চলাচল করতে পারে বলে জানানো হয়। তবে, কেন্দ্রীয় নির্দেশিকায় বাস চলাচলের বিষয়টির উল্লেখ নেই। আপাতত তাই রাজ্য সরকারের বিবেচনাতেও বাস চলাচলের বিষয়টি থাকবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। রাজ্যের বিধি নির্দেশিকা গত শনিবার প্রকাশের কথা থাকলেও তা হয়নি।
আরও পড়ুন- আজ থেকেই তৃতীয় দফার লকডাউন, কী চলবে, কী চলবে না
মদের দোকান খোলায় রাজ্য সরকার ছাড় দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে দিশি বা বিলিতি মদের ‘অফ শপ’ বিক্রির জন্য ছাড় দেওয়া হতে পারে। রাজস্বের কথা বিবেচনা করেই এই ছাড়ের কথা ভাবছে মমতা সরকার।
করোনা সংক্রমণের গতিবিধি ও মৃত্যুর সংখ্য়া পর্যালোচনা করে গোটা দেশের সব জেলাকে গ্রিন, অরেঞ্জ ও রেড জোনের অন্তর্ভুক্ত করেছে কেন্দ্র। সেই অনুসারে কলকাতা সহ এ রাজ্যের ১০ জেলা রেড জোনের আওতাধীন। ৫ টি জেলাকে অরেঞ্জ জোনের তালিকায় রাখা হয়েছে। বাকি ৮ জেলায় কোনও সংক্রমণ না থাকায় গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত নয় রাজ্য সরকার। প্রতিবাদ জানিয়ে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছে নবান্ন।
আরও পড়ুন- ৪ মে থেকে বাংলার কোন জেলা কোন জোনে? দেখুন, কেন্দ্রীয় তালিকা
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা যাতে সহজ হয়, তা মাথায় রেখেই দেশের জেলাগুলিকে রেড, অরেঞ্জ ও গ্রিন জোনে ভাগ করা হয়েছে। যেসব জেলাগুলিতে করোনা আক্রান্তের হার অত্যন্ত বেশি, অর্থাত্ 'হটস্পট' বা কন্টেনমেন্ট এলাকা যেখানে বেশি, সেই জেলাগুলিকেই রেড জোনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বোঝাতেই রেড জোন হিসেব চিহ্নিত করা হয়েছে। সংক্রমণ আছে কিন্তু তার হার রেড জোনের তুলনায় অনেক কম, হটস্পট নয়, এমন জেলাগুলিকে অরেঞ্জ জোনের মধ্যে ফেলা হয়েছে। রেড জোনে সংক্রমণ কমে এলে, তা অরেঞ্জ জোনে চলে আসে। সংক্রমণ-মুক্ত জেলাগুলিকে গ্রিন জোনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । এই জোনে করোনা সে ভাবে প্রভাব বিস্তার করেনি। গত ১৪ দিনের মধ্যে কোনও জেলায় নতুন করে করোনা আক্রান্তের সন্ধান না মিললে, সেই জেলাকে করোনামুক্ত বলে ধরে নেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে আরও জানানো হয়েছে যে রেড, অরেঞ্জ, বা গ্রীন জোন নির্বিশেষে নির্দিষ্ট সংখ্যক কার্যকলাপের ওপর সারা দেশ জুড়ে এখনও নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। এগুলির মধ্যে রয়েছে বিমান, রেল, ও মেট্রোতে সফর, এবং আন্তঃরাজ্য সড়ক পরিবহণ; এবং স্কুল, কলেজ, ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা প্রশিক্ষণ-কোচিং সেন্টার। নির্দেশে বলা হয়েছে যে, প্রত্যেক জোনে অদরকারী কাজের জন্য সন্ধ্যে সাতটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত যাতায়াত কঠোরভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। প্রতিটি জোনেই ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরা, কোভিড-১৯ ছাড়া পার্শ্বরোগ আছে এমন ব্যক্তি, অন্তঃসত্ত্বা মহিলা এবং ১০ বছরের কম বয়সী শিশুরা বাড়িতে থাকবেন, যদি না অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন বা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রয়োজন হয়।
রেড, অরেঞ্জ, ও গ্রীন জোনে সামাজিক দূরত্ব-বিধি এবং অন্যান্য প্রতিষেধক ব্যবস্থা মেনে আউট পেশেন্ট ডিপার্টমেন্ট (ওপিডি) এবং মেডিক্যাল ক্লিনিক চালু রাখা যাবে। তবে কন্টেইনমেন্ট জোনের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন