Advertisment

বর্ধমানে হুলস্থূল, মদ খেয়ে মৃত ৪, প্রশ্নের মুখে পুলিশের ভূমিকা

মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
east burdwan 4 deaths due to alcohol consumption role of police in question

এই হোটেল থেকেই মৃতরা মদ কিনে খেয়েছিল বলে অভিযোগ। ছবি- প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়

হোটেলে অবৈধ ভাবে বিক্রী হওয়া মদ কিনে খাবারের সঙ্গে পান করে মৃত্যু হল চার জনের। মৃতদের নাম শেখ সুবরতি (৩৪), শেখ হালিম (৪০), চিন্ময় দে (৩৮) ও গৌতম দে (৪২)। মৃতদের মধ্যে প্রথম দু’জন বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা পাড়া,চিন্ময় শহরের ময়ুরমহলের বাসিন্দা। অসুস্থ হয়ে কয়েকজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন এমন খবরও উঠে আসছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। খোদ বর্ধমান শহরে এমন ঘটনা ঘটায় প্রশ্নের মুখে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ ও আবগারি দফতরের ভূমিকা। তদন্ত শুরু হয়েছে।

Advertisment

মৃতরা যে হেটেল থেকে মদ কিনে পান করেছিল বলে খবর, সেখানে থেকে আবগারী দফতরের অনুমোদিত দেশি মদের বোতল উদ্ধার হয়েছে। আর তাতেই দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন প্রশানের কর্তারা। ওই মদের নমুনা সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মদ প্রস্তুতকারী সংস্থার সঙ্গেও কথা বলা শুরু করেছে আবগারী দফতর। ওই ব্যাচের মদ বাজার থেকে তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়াও আবগারী দফতর শুরু করে দিয়েছে বলে খবর।

এদিকে এই মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনিক মহলেও তোলপাড় পড়ে গিয়েছে । শুক্রবার সকাল থেকে এডিজি ওয়েস্টার্ন জোন সঞ্জয় সিং ও জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিষ সেনের নেতৃত্বে বর্ধমান শহরের বিভিন্ন হোটেল ও ধাবায় শুরু হয় অভিযান। বেলা বাড়তেই জেলা আবগারি দফতর বর্ধমান শহরের সমস্ত মদের দোকান বন্ধের নির্দেশ জারি করে। অবৈধ ভাবে মদ বিক্রীর বিরুদ্ধে এদিন জেলার সমস্ত থানা এলাকাতেও হোটেল ও ধাবায় পুলিশ অভিযান চালায়। এতেই প্রচুর মদ উদ্ধার হয়েছে। বেআইনি কাজের অভিযোগে পুলিশ বেশ কয়েকজন মদ কারবারীকেও গ্রেফতার করেছে। দুপুরে রাজ্য আবগারী দফতর পূর্ব বর্ধমান জেলা আবগারী দফতরের কাছে গোটা ঘটনার রিপোর্ট তলব করেছে ।মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে আবগারী দফতরের কর্তারাও আলাদা ভাবে তদন্ত চালাচ্ছে।

ময়নাতদন্তের জন্য শুক্রবার চার জনেরই মৃতদেহ পাঠানো হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ মর্গে। মৃতদের পরিবার এদিন দুপুর পর্যন্ত পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের না করলেও পুলিশ ও আবগারি দফতর ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। মদের বিষক্রিয়া, নাকি হেটেলের খাবারে বিষক্রিয়ায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে,তা নিশ্চিৎ হওয়ার জন্য পুলিশ ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে। তার ভিত্তিতেই পুলিশ পরবর্তী পদক্ষেপ করবে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,হোটেলটি জি টি রোডের ধারে জনবহুল বর্ধমান শহরের লক্ষ্মীপুর এলাকায় অবস্থিত। গোপনে সেই হেটেলে মদ বিক্রী করা হত বলে অভিযোগ। মৃত ও অসুস্থরা বৃহস্পতিবার রাতে ওই হোটেল থেকে মদ কিনেছিল বলে খবর। তবে সবাই যেহেতু একসঙ্গে এক জায়গায় বসে মদ খায়নি তাই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কী আলাদা আলাদা হোটেল কিংবা দোকান থেকে থেকে মদ কেনা হয়েছিল। এক মৃতর স্ত্রী এদিন বলেন, তাঁর স্বামী সহ পাঁচ জন মিলে মদ খেতে বসেছিল। মদ খাওয়ার পরেই তাঁর স্বামীর খিঁচুনি শুরু হয়। মুখ দিয়ে সাদা গেঁজলা বের হতে শরু করে।অন্যদেরও পর পর অসুস্থ হয়ে পড়েন । মহিলা জানান, তাঁর স্বামীকে উদ্ধার করে বর্ধমান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁর স্বামীকে মৃত বলে ঘোষনা করেন ।

বর্ধমান শহরবাসী অবশ্য হোটেলে অবৈধ ভাবে মদ বিক্রী নতুন কোন ঘটনা নয় বলে জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য,শহর বর্ধমান ও তার লাগোয়া জায়গায় থাকা হোটেল গুলিতে এবং জাতীয় সড়কের ধারে থাকা ধাবা গুলিতে যে অবৈধ ভাবে মদ বিক্রী হয় তা পুলিশ ও আবগারী দফতর জানে না এমনটা নয়। কিন্তু সব জেনেও তারা কোন দিনই ব্যবস্থা নেয়নি।

জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিষ সেন এদিন বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে মদ খেয়ে দু’জন মারা গেছে বলে আমরা বর্ধমান হাসপাতাল থেকে খবর পাই। এদিন আরো দু’জন মারা যাওার খবর আসে। তবে এই মৃতদের পরিবার মদ খাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। সবার মৃতদেহ গুলির ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। মদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে বর্ধমানের কোনও হাসপাতালে কেউ ভর্তি হয়েছে কিনা সেই ব্যাপারেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। আবগারি দফতর মদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় পাঠিয়েছে। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তার রিপোর্ট চলে আসবে। এই ঘটনার পর জেলা জুড়ে হোটেল ও ধাবায় অবৈধ ভাবে মদ বিক্রী বন্ধে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। এই অভিযান জারি থাকবে।"

East Burdwan burdwan
Advertisment