গৃহশিক্ষকতা করতেন যুবক সব্যসাচী মসান। আর, সেখানেই সব্যসাচীর যৌন লালসার শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছে তফসিলি পরিবারের এক নাবালিকা স্কুলছাত্রী। তবে শুধু মর্যাদাহানির অভিযোগই নয়। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার পুলিশের কাছে গৃহশিক্ষক সব্যসাচীর কুকীর্তি ফাঁস করার পর, ওই ছাত্রীর আশঙ্কা সে খুন হয়ে যেতে পারে। আতঙ্কে ওই ছাত্রীর বাবা-মাও। এমনটাই অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে গ্রেফতারি এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছেন অভিযুক্ত গৃহশিক্ষক।
পুলিশ জানিয়েছে, জামালপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত দোলরডাঙা গ্রামে বাড়ি কুকীর্তির ঘটনায় জড়িত গৃহশিক্ষক সব্যসাচী মসান ওরফে জন্টির। কাছে পিঠেই বাড়ি স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর পড়ুয়া ছাত্রীর। ওই নাবালিকার মা লিখিত ভাবে পুলিশকে জানিয়েছেন, 'তাঁর মেয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সব্যসাচী মসানের বাড়িতে প্রাইভেট পড়তে গিয়েছিল। পড়ানো চলাকালীন ওইদিন সব্যসাচী হঠাৎই তাঁদের ঘর থেকে অন্যসব ছাত্রকে বের করে দেয়। শুধু তাঁর মেয়েকেই ঘরে বন্ধ করে রাখে। এরপর ওই ঘরেই সব্যসাচী প্রথমে জোর-জবরদস্তি করে তাঁর নাবালিকা মেয়ের শ্লীলতাহানি করে। পরে তাঁর মেয়ের শরীরে থাকা সমস্ত পোশাক খুলিয়ে সেই দৃশ্য নিজের মোবাইলে বন্দি করে। এই ঘটনায় তাঁর মেয়ে প্রতিবাদ করলে সব্যসাচী হুমকি দেয়, এসব কথা জানাজানি হলে, সমস্ত ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল করে দেবে। এমনকী মেয়েকে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দেয় সব্যসাচী মসান। এমনটাই অভিযোগ ওই নাবালিকার মায়ের।
নাবালিকার মা পুলিশকে এ-ও জানিয়েছেন, সব্যসাচীর হুমকিতে ভীত হয়ে পড়ে তাঁর মেয়ে। প্রাইভেট শিক্ষকের বাড়ি থেকে ফিরে এসে সেদিন সে কাউকে কিছু বলেনি। ঘটনার একদিন বাদে তাঁর মেয়ে বাড়ির সবার কাছে সব্যসাচীর কুকীর্তির কথা জানিয়ে দেয়। তা শুনে তিনি আর এক মুহুর্ত দেরি না করে ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে থানায় যান। আর, সব্যসাচী মসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ জানিয়েছেন, 'গোপন জবানবন্দি পেশের জন্যে নাবালিকাকে বর্ধমান আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করানো হয়েছে। নাবালিকার মায়ের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে সব্যসাচী মসানের বিরুদ্ধে পকসো আইন (পকসো অ্যাক্ট)-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত গা ঢাকা দিয়েছে। তার সন্ধান চলছে।'
অভিযুক্ত সব্যসাচী মসানের বাড়িতে বুধবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, গোটা বাড়ি নিস্তব্ধ হয়ে রয়েছে। বাড়ির সব দরজা, জানালা বন্ধ। অনেক ডাকাডাকি করেও কারও সাড়া পাওয়া যায়নি। সব্যসাচীদের বাড়ি থেকে কারও সাড়া মিলছে না কেন, তা প্রতিবেশীদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তাঁরা বলেন, 'এ বাড়ির সবাই এখন গা ঢাকা দিয়েছে।'
আরও পড়ুন- যামিনী রায়ের চিত্র প্রদর্শনী নিয়ে চরম বিতর্ক! তোলপাড় শিল্পী-গবেষক মহল
তবে অভিযুক্ত গা ঢাকা দিলেও আতঙ্কে রয়েছে নাবালিকা ছাত্রীটি। সে ভয়ে ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছে না। কেন আতঙ্ক, কীসের আতঙ্ক তা জানতে ওই ছাত্রীর বাড়িতে গেলে সে বলে, 'সব্যসাচী স্যার আমায় বলেছিল যে তার কুকীর্তির কথা বাড়ির কাউকে না জানাতে। জানালে আমাকে খুন করে দেবে বলে স্যার হুমকি দিয়েছিল। তবুও আমি আমার বাবা-মাকে সব জানিয়ে দিয়েছি। মা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। এর জন্যে সব্যসাচী স্যার আমায় বা আমার বাড়ির কাউকে খুন করে দেবে নাতো? আমার এখন এই ভয়টাই করছে!' ছাত্রীর বাবা এলাকার এক ব্যবসায়ীর দোকানে কাজ করেন। মা সাধারণ গৃহবধূ। তারাও সব্যসাচীর হুমকি নিয়ে যথেষ্টই আতঙ্কিত বলেই জানিয়েছেন।