Advertisment

প্রতিপদে পুজো শুরু মহিষাদল রাজবাড়িতে, জৌলুস কমলেও অটুট পুরনো রীতি-রেওয়াজ

প্রতিপদে ঘট স্থাপনের মধ্য দিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো শুরু।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
east midnapur mahishadal rajbari durgapuja

প্রতিপদে পুজো শুরু রাজবাড়িতে। ছবি: কৌশিক দাস।

প্রতিপদে পুজো শুরু মহিষাদল রাজবাড়িতে। আগের সেই জৌলুস না থাকলেও পুজোর আয়োজনে এতটুকুও ফাঁক রাখেননি রাজ পরিবারের বর্তমান সদস্যরা। পুরনো রীতি মেনে শুরু পুজো। নিয়ম মেনে প্রতিপদে ঘট স্থাপনের মধ্য দিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো শুরু।

Advertisment

প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। ঐতিহ্যবাহী এই দুর্গাপুজো দেখতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাশাপাশি ভিনজেলা থেকেও বহু দর্শনার্থী ভিড় জমান। মহিষাদলের রানি জানকীর আমলে রাজবাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু হয়। সেই সময় থেকেই মহিষাদল রাজবাড়ির ঠাকুরদালানে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। রাজত্ব চলে যাওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর জৌলুস কমেছে।

তবে পুজোর নিয়ম-আচারে ছেদ পড়েনি। প্রথা অনুযায়ী মহালয়ার পরের দিন অর্থাৎ আজ প্রতিপদের দিন ঘট স্থাপন করে মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর সূচনা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এই রাজবাড়ির বর্তমান প্রজন্মের সদস্য হরপ্রসাদ গর্গ বলেন, ''মহালয়ার পরের দিন রাজবাড়ির দুর্গামণ্ডপ লাগোয়া অশ্বত্থ গাছের তলায় নটি ঘট ওঠে। আজ থেকে প্রতিদিনই ঘটপুজো হবে। সপ্তমী থেকে মূর্তি পুজো হবে। প্রতিমার এক পাশে ঘট, অন্য পাশে ধান রাখা হয়। এই দুর্গাপুজো করার পরেই শুখা গ্রামে ধান ফলেছিল। তাই ভালো ফসলের আশায় আজও দেবীর পাশে ধান রাখা হয়। পুজোয় ১০৮টি নীল পদ্ম দেওয়ার চলও রয়েছে।''

আগে মহিষাদলের রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় যাত্রাপালা হতো। কামান দেগে হতো সন্ধিপুজো। দেবীর বিসর্জনের শোভাযাত্রায় তাক লাগানো আয়োজন থাকত। তবে আজ সেসব অতীত। রাজ পরিবারের সদস্য হরপ্রসাদ গর্গ জানান, পুজোর দিনগুলিতে ঠাকুরদালানে যাত্রা হত। রাজবাড়ির মহিলারা পর্দার আড়াল থেকে যাত্রা দেখতেন। পুজোর দিন অনুযায়ী ভোগ রান্না হত। যেমন, ষষ্ঠীতে ছয় মন, সপ্তমীতে সাত মন, অষ্টমীতে আট মন, নবমীতে নয় মন চালের প্রসাদ তৈরি করে বিতরণ করা হত।

আরও পড়ুন- এ পুজো হিন্দুর-এ দুর্গা মুসলিমেরও, শারদোৎসবে এই গাঁয়ের রাম-রহিম মিলেমিশে একাকার

অষ্টমীর সন্ধেয় কামান দেগে রাজবাড়ি-সহ আশপাশের এলাকার পুজোমণ্ডপে সন্ধিপুজো শুরু হত। দশমীতে বড় নৌকায় করে শোভাযাত্রা বেরোত এবং রাজবাড়ির সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া হিজলি টাইডাল ক্যানেল হয়ে গেঁওখালিতে রূপনারায়ণ নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হত। এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, ''এখন সে সব অতীত। রাজত্ব ঘোচার সঙ্গে সঙ্গেই যাত্রাপালা বন্ধ হয়েছে। পুজোর দিনগুলিতে অবশ্য এখনও ভোগ রান্না করা হয়। কিন্তু তাও যৎসামান্য।''

সরকার কামান দাগায় নিষেধাজ্ঞা জারি করায় সেটাও ইতিহাসের খাতায় চলে গিয়েছে। এখন কামান দাগার পরিবর্তে আতসবাজির রোশনাইয়ের মধ্যে দিয়ে সন্ধিপুজো করা হয় মহিষাদল রাজবাড়িতে। বিসর্জনের শোভাযাত্রাও অতীত। রাজবাড়ি লাগোয়া রাজদিঘিতেই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। তবে আড়ম্বর কমলেও ঐতিহ্যের টানে আজও বহু মানুষ মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় সামিল হন।

এলাকার বিধায়ক-সহ মহিষাদলের স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে এ বছরেও পুজোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিধায়ক তহবিলের টাকায় মহিষাদল রাজবাড়ির ঠাকুরদালানের ভাঙা আটচালা তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। এরই পাশাপাশি সরকারি টাকায় ভগ্নপ্রায় রামবাগ প্যালেস সংস্কারের কাজও চলচ্ছে। গত দু'বছর করোনার জেরে রাজবাড়িতে দর্শনার্থীদের আনাগোনা কম থাকলেও এবার অনেক উপচে পড়া ভিড়ের সম্ভাবনা প্রবল।

মহিষাদল রাজবাড়ির পুজো দেখতে এলে এখানে দর্শনার্থীদের জন্য রাতে থাকার জায়গারও বন্দোবস্ত থাকছে। তবে এক্ষেত্রে নির্ধারিত একটি টাকা দিতে হবে। মহিষাদল ফুলবাগ রাজবাড়িতে যেমন সংগ্রহশালা রয়েছে তেমনই সময় কাটানোর জন্য ফুলবাগ ক্যাফে চালু করা হয়েছে। মহিষাদল রাজবাড়ির বর্তমান প্রজন্ম হিসেবে রাজবাড়ির দেখাশোনা করেন শংকরপ্রসাদ গর্গ ও হরপ্রসাদ গর্গ।

Durgapuja West Bengal East Midnapore
Advertisment