বাঁশেই বাজিমাত! বাঁশ দিয়েই হস্তশিল্পের একরাশ পসরা সাজিয়ে নজির গড়েছেন চন্দননগরের হস্তশিল্পী গণেশ ভট্টাচার্য। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে তাঁর একের পর হাতের কাজের চমক মুগ্ধ করেছে সকলকে। গোটা দেশেই তার হস্তশিল্পের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু দেশেই নয়, দেশের সীমানা পেরিয়ে গণেশের হাতে প্রাণ পাওয়া বাঁশের নজরকাড়া কাজ ইতিমধ্যে পাড়ি দিয়েছে বিদেশেও।
হস্তশিল্পে বাংলার জগতজোড়া নাম। তার মাঝেই গণেশবাবুর কাজ প্রশংসা কুড়িয়েছে সকলের। দীর্ঘ ১৭ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি অসম বাঁশের তৈরি নানান সম্ভারে সমৃদ্ধ করেছেন হস্তশিল্পকে। শিল্প মানেই যে মোটা টাকার বিনিয়োগ ,এমন ধারণায় মোটেও বিশ্বাসী নন তিনি। তাঁর কথায়, “ছোট থেকেই শুরু করে অনেকটা দূর এগোনো যায় এই হস্তশিল্পের ওপর ভিত্তি করে”।
বাঁশের কাজের প্রতি তাঁর আকর্ষণ সেই সঙ্গে ভালবাসা থেকে পথচলা শুরু। স্কুলজীবনেই হাতেখড়ি। এরপর কেটে গিয়েছে বছরের পর বছর! কখনও গড়ে ফেলেন কলকাতার ট্রাম, কখনও আইফেল টাওয়ার, আবার কখনও হাওড়া ব্রিজ, বিদ্যাসাগর সেতু। এবারের বিশ্বকর্মা পুজোতে তিনি গড়ে ফেলেছেন বাঁশের তৈরি আস্ত একটা বাস।
আরও পড়ুন: < সর্বজনীন দুর্গাপুজো এবার নিউটাউনেও! নারী ক্ষমতায়নের বিশেষ বার্তাকে সামনে রেখে শুভ সূচনা >
সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করে ধীরে ধীরে তার ব্যবসার পসরাও বেড়েছে অনেকটাই। দেশের নানান প্রান্তর থেকে আসতে শুরু করেছে অর্ডারও। এমনকী বিদেশের একাধিক দেশেও গিয়েছে গণেশের হাতের এই সব নজরকাড়া কাজ।
আমেরিকা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরেও পাড়ি দিয়েছে তার হাতের কাজ। কফিমগ, ওয়াইন গ্লাস, জলের গ্লাস, বোতল, টেবিল ল্যাম্প, ফুলদানি, গাছের টব, ঝাড়বাতি সহ নানান প্রয়োজনীয় ও নজরকাড়া বাঁশের কাজ তিনি ফুটিয়ে তোলেন তাঁর হাতের জাদুতে। গণেশ বাবু জানান, “পরিবেশবান্ধব এই সকল আর্ট একাধারে আকর্ষণীয় অন্যদিকে পরিবেশের কোন ক্ষতিও করেনা। আর ‘বাম্বু ক্র্যাফট’-এর চাহিদা বিশ্বব্যাপী”। আসাম বাঁশ দিয়ে বিশ্বের সকল বিষয় কে অনুকরণ করা যায়। সেই সঙ্গে স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে বাংলার তরুণ যুবসমাজকে এগিয়ে আসারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
তার কথায়, “বাংলার হস্তশিল্পের খ্যাতি জগতজোড়া। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আসাম বাঁশের তৈরি এই সকল কাজ বানানোও যেমন সহজ, তেমনই এগুলির চাহিদাও অনেক বেশি। মানুষজন একবার দেখাতেই এই সকল জিনিস পছন্দ করে ফেলেন। আর আসাম বাঁশ দিয়ে বিশ্বের যে কোন বিষয় কেই তৈরি করা সম্ভব। তা সেই আইফেল টাওয়ার হোক অথবা কলকাতার ট্রাম, বাস, হাওড়া ব্রিজ”।
গণেশের কথায়, “আমার তৈরি এই সকল আর্ট দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজন পছন্দ করেন সেই সঙ্গে বিদেশেও এর জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। শুধু কলকারাখানয় যে শিল্প গড়তে পারে এমনটা নয়, হাতের কাজের মাধ্যমেও যে শিল্প গড়ে তোলা যায়, স্বনির্ভর হওয়া যায়, তা আমি নিজেই প্রমাণ করেছি। যদি কেউ এই শিল্পের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে চান আমি সব রকম ভাবেই তার পাশে সাধ্যমত থাকার চেষ্টা করব”।
‘বাম্বু ক্র্যাফট’ শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েও তিনি আশাবাদী। দেশের সঙ্গে বিদেশেও এই সকল বাঁশের তৈরি হালকা ও নজরকাড়া জিনিসের প্রচুর চাহিদা। আর সেই চাহিদার কথা মাথায় রেখে এই শিল্পকে আরও বেশি সমৃদ্ধ কীভাবে করা যায় তা নিয়ে রাজ্যসরকারের তরফে যদি চিন্তা-ভাবনা করা হয় তাহলে স্বনির্ভরতার পাশাপাশি বাংলার নামও বিদেশের মাটিতে আরও উজ্জ্বল হবে বলেই তাঁর ধারণা।