Advertisment

এবার দূষণ রোধে গ্রিন বাজির বাজিমাত, দাবি বিক্রেতার

সন্দীপবাবুর দোকানে বাজি কিনতে গেলে ক্রেতাকে একটি টবে লাগানো জবা গাছ নিতেই হবে। গাছ না নিলে বাজি দেওয়া হবে না, স্পষ্ট জানালেন তিনি। চার হাজার গাছ নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
green fire crackers

সবুজ বাজি কিনতেই ভিড় টালার বাজি বাজারে।

এবার টালার বাজি বাজারে ব্যাপক বিকিয়েছে 'গ্রিন বাজি'। ক্রেতাদের আরও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হতে আবেদন জানাচ্ছেন খোদ বাজি বিক্রেতারাও। যেমন ধরুন বিক্রেতা সন্দীপ বোস। নিজে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে তৈরি করেছেন গ্রিন বাজি। তবে তাঁর দোকানে বাজি কিনলেই হবে না, সঙ্গে বাড়ি নিয়ে যেতে হবে টবে লাগানো জবা গাছ।

Advertisment

মঙ্গলবার টালা পার্কে গিয়ে দেখা গেল, জমে উঠেছে বাজি বাজার। ২১ নম্বর স্টলে বিক্রি-বাটা ভালই হচ্ছে। ভিতরে ঢুকে খোঁজ নিতেই জানা গেল, গ্রিন বাজি কেনার ভিড়। সোদপুরের ভোম্বলা মোড়ের তমাল শীল বলেন, "প্রতিবছর এখান থেকে নানা ধরনের বাজি কিনে নিয়ে যাই। কিন্তু এবার এই গ্রিন বাজি কিনলাম। এই বাজি পরিবেশ দূষণ অনেকটাই রোধ করতে পারবে বলে জানিয়েছেন দোকানী। দেখা যাক। রংমশাল আর তুবড়ি কিনেছি।"

green fire crackers 01 টালার বাজি বাজারে ক্রেতাদের ভিড়

কেন এই গ্রিন বাজি নিয়ে ভাবনা? সুপ্রিম কোর্ট সারা দেশে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বাজি পোড়ানোর সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। কিন্তু দিল্লিতে বেরিয়াম সল্ট দিয়ে নির্মিত বাজি পোড়ানো একেবারে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। কারণ, দিল্লিতে দূষণের পরিমান দেশের অন্যান্য শহরের থেকে অনেকটা বেশি। সন্দীপবাবু চেষ্টা করেছেন যাতে পরিবেশ বান্ধব বাজি তৈরি করা যায়।

পরিবেশ বান্ধব বাজি তৈরি করার প্রক্রিয়াটা ঠিক কী? সন্দীপবাবু বলেন, "সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, বেরিয়াম সল্ট ব্যবহার করা যাবে না। আগে বাজি তৈরিতে কাঠ কয়লা ব্যবহার করা হত। বর্ষা পড়লে যা বসে যায়। তাই তার বদলে ব্যবহার করা হচ্ছিল বেরিয়াম সল্ট। এটা পোড়ার পর বেরিয়াম পেরক্সাইড তৈরি হয়। আমি বেরিয়াম সল্ট পুরোপুরি ভাবে বন্ধ করতে পারি নি। সাদা ভাব বা উজ্জ্বল ভাব আনে বেরিয়াম। আদালত পিভিসি (পলিভিনাইল ক্লোরাইড) নিষিদ্ধ করেনি, তাই বেরিয়াম কমিয়ে পিভিসি দেওয়া হচ্ছে। তাতে ধোঁয়া কম হবে, আলো খুব উজ্জ্বল হবে। কিন্তু বেরিয়াম ব্যবহার শূন্য শতাংশে আনতে পারিনি। আগে ৪৫-৬০ শতাংশ দেওয়া হত। এখন ২৫-৩০ শতাংশে কমিয়ে আনা হয়েছে। এভাবেই চেষ্টা করা হয়েছে পরিবেশ বান্ধব বাজি তৈরি করার।" তাঁর আক্ষেপ, "আমাদের কেউ প্রশিক্ষণ দেয় না। তবু চেষ্টা করছি যাতে দূষণের মাত্রা কম হয়।"

তিনি জানান, অ্যালুমিনিয়াম চুর বা লোহাচুর ব্যবহার করা হয় না। সাদা ভাব আনার জন্য অ্যালুমিনিয়াম চুর ব্যবহার করা হত। এখন তার বদলে কমসিয়াম ব্যবহার করা হচ্ছে। রংমশাল বেরিয়াম ও পিভিসি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। আগে সবটাই বেরিয়াম দেওয়া হত। তারও আগে ড্রাই কপার সালফেট ব্যবহার করা হত। সেটা পুড়লে খুব ক্ষতিকর। কালো ধোঁয়া বের হত। সবুজ রং আসতো। এখন তাও একেবারে ব্যবহার করা হয় না।" হুগলির চন্ডীতলায় জঙ্গলপাড়া, বলরামবাটি, সিঙ্গুরে তাঁর নিজের বাজি কারখানায় এই ধরনের বাজি তৈরি করেছেন সন্দীপবাবু।

পরিবেশ বান্ধব বাজি তৈরি করে শুধু বাজার মাত করেছেন এমন নয়। সন্দীপবাবুর দোকানে বাজি কিনতে গেলে ক্রেতাকে একটি টবে লাগানো জবা গাছ নিতেই হবে। গাছ না নিলে বাজি দেওয়া হবে না, স্পষ্ট জানালেন তিনি। চার হাজার গাছ নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে। টবের ক্ষেত্রেও তিনি পরিবেশের কথা ভেবেছেন। প্লাস্টিক নয়, গাছ লাগিয়েছেন মাটির টবেই।

Firecracker environment
Advertisment