এ যেন উলটপুরাণ। ইডি তলব করায় নানা দুর্নীতি মামলায় জড়িত তৃণমূলের বহু নেতা-কর্মী এতদিন রক্ষাকবচ চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করেছেন। একই পথের পথিক হতে দেখা গিয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। এবার রক্ষাকবচের আর্জি নিয়ে হাইকোর্টের দ্বরস্থ হল খোদ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি।
কেন?
ইডির অভিযোগ গত মাসে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিসে তল্লাশির সময় ফাইল ডাউনলোডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের তদন্তকারী অফিসারদের ক্রমাগত হেনস্থা করছে কলকাতা পুলিশ। ফোন করে তথ্য চাওয়া হচ্ছে। ইমেল পাঠানো হচ্ছে। তাই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্তকারী অফিসারদের রক্ষাকবচ প্রয়োজন। সেই কারণেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি।
ইডি'র বিরুদ্ধে কী অভিযোগ?
গত মাসের ২১ তারিখ লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিসে তল্লাশি চালিয়েছিলেন ইডি গোয়েন্দারা। তার ঠিক আগেই চিকিৎসা সেরে আমেরিকা থেকে কলকাতায় ফিরেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। ওই সংস্থা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বলেই দাবি ইডির। কেন্দ্রীয় এজেন্সির দাবিকে একাধিকবার প্রকাশ্যে সিলমোহর দিয়েছেন খোদ অভিষেক। অভিযোগ তল্লাশির সময় ইডির এক আধিকারিক লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিসের একটি কম্পিউটারে ১৬টি ফাইল ডাউনলোড করে দিয়েছেন। এই ঘটনা নিয়েই লালবাজারে অভিযোগ জানিয়েছেন লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের এক কর্মী। তার পর এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করে লালবাজার। জবাব দিহি চাওয়া হয় ইডি'র। জবাবে কেন্দ্রীয় এজেন্সি জানিয়েছিল, অভিযুক্ত আধিকারিক ভুলবশত ওই কাজ করে ফেলেছে। তাঁর অসৎ কোনও উদ্দেশ্য ছিল না। এরপর সশরীরে হাজিরা দিয়ে ইডির কোনও আধিকারিককে বিষয়টির ব্যাখ্যার নির্দেশ লালবাজার দিলেও আর যায়নি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
কোন এজলাসে মামলা?
বর্তমানে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলাগুলো চলছে। বৃহস্পতিবার ইডির আইনজীবী ধীরজ ত্রিবেদী বিষয়টি নিয়ে বিচারপতি সিনহারই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। কেন্দ্রীয় এজেন্সির তরফে বলা হয়েছে যে, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিস থেকে ১৬টি ফাইল ডাউনলোড কাণ্ডে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশে উল্লেখ, ওই ১৬টি ফাইলকে কোনওভাবে প্রামাণ্য নথি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। তা সত্ত্বেও ওই ফাইলগুলি ডাউনলোডের ব্যাপারে দায়ের হওয়া একটি জেনারেল ডাইরির ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ।
কী আশঙ্কা ইডি'র?
এই ঘটনায় তাদের গোয়েন্দাদের আরও হেনস্থা করা হতে পারে বলে আশঙ্কা ইডির আধিকারিকদের। এমনকী হেফাজতেও চাওয়া হতে পারে। সেই কারণেই গোয়েন্দাদের জন্য রক্ষাকবচে আবেদন করা হয়েছে। এই বিষয়ে মামলার অনুমতি দিয়েছেন বিচারপতি।