কখনও মা সারদা, কখনও রানি রাসমণি, কখনও আবার সিস্টার নিবেদিতা। তৃণমূল বিধায়করা 'দিদি' মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একেক সময় একেক মহামানবীর রূপে তুলে ধরেছেন। তারই নবতম সংযোজন করলেন ব্রাত্য বসু। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, 'বাংলায় এখন শ্রীচৈতন্যের সার্থক উত্তরাধিকারী হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।'
পূর্ব বর্ধমানে পূর্বস্থলীতে শুরু হয়েছে খাল-বিল-চুনোমাছ উৎসব। সেখানেই অতিথি হয়ে গিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। ওই অনুষ্ঠানেই ব্রাত্য বসু মুখ্যমন্ত্রীকে শ্রী চৈতন্যের সার্থক উত্তরাধিকারী বলে দাবি করেন। বলেছেন, 'চৈতন্যদেব সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা বলেছিলেন। সবাইকে সঙ্গে রাখার কথা বলেছিলেন। মমতাদি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলেন। কোনও বিভাজনের রাজনীতি, কোনও ভেদাভেদের রাজনীতি, মানুষকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার রাজনীতি করেন না। চৈতন্যও করেননি। চৈতন্যের সার্থক উত্তরাধিকারী এই বাংলায় কেউ যদি থেকে থাকেন, তাহলে তিনি হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।'
শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরই বঙ্গ রাজনীতিতে বিতর্ক তৈরি হয়। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী ব্রাত্য বসুর মন্তব্য প্রসঙ্গে বলেছেন 'সীমাহীন চাটুকারিতা।' বিজেপি নেতা সজল ঘোষের কটাক্ষ 'ব্রাত্য বসুর চৈতন্য হোক।'
আরও পড়ুন- গঙ্গাসাগর মেলা বৈঠক: ভিআইপি’দের কী বার্তা মুখ্যমন্ত্রী মমতার?
২০২২ সালে বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস মুখ্যমন্ত্রীকে ভগিনী নিবেদিতার তুলনা টেনেছিলেন। বলেছিলেন, 'আমরা ভগিনী নিবেদিতাকে দেখিনি, তাঁর কাজ সম্পর্কে শুনেছি। আমরা শুনেছি যে ভগিনী নিবেদিতা মানুষের সেবা করার জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। সেরকমই আমরা বর্তমানে এমন একজন নেত্রীকে দেখতে পাচ্ছি যিনি মানুষের সেবা করার জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছেন। তিনি হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মধ্যে আমরা ভগিনী নিবেদিতার ছায়া দেখতে পাই। সভার শেষে এ নিয়ে সাংবাদিকরা বিধায়ককে প্রশ্ন করলে অবশ্য নিজের দাবি থেকে সরেননি তিনি।'
ওই বছরই বাঁকুড়ায় প্রোগ্রেসিভ ফার্মাসিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্মেলনে উলুবেড়িয়ার বিধায়ক নির্মল মাজি বলেছিলেন, 'সারদা মা মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে তিনি তাঁর সতীর্থ বন্ধু মহারাজদের কাছে বলেছিলেন আমি তো কালীঘাট মন্দির দিয়ে যাই। আমি ওখানেই আসব। হরিশ চ্যাটার্জী স্ট্রিটে দিদি যেখানে থাকেন সেই রাস্তা ধরে যেতেন সারদা মা। এমনকী এটাও বলেছিলেন তাঁর মৃত্যুর পরে তিনি কালীঘাটের কালীক্ষেত্রে জন্ম নেবেন। তিনি বলে আমি মানুষ হিসাবে আবার জন্ম নেব। ত্যাগের রাস্তায় জীবন কাটাব। সমাজসেবার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করব। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে যাব।'
আরও পড়ুন- এক প্রণামেই দফারফা, ‘গুরু’ শিশিরের পা ছোঁয়ায় কাঁথির চেয়ারম্যানকে কী নির্দেশ তৃণমূলের?
মমতার আবেগে ভেসে নির্মল আরও বলেছিলেন, 'সংখ্যাতত্ত্বের হিসাব সারদা মায়ের মৃত্যু ও মমতার জন্মের সময়কাল সেই অঙ্কটা মিলিয়ে দিচ্ছে। মমতাই মা সারদা, তিনিই ফোলেন্স নাইট্যাঙ্গেল, তিনিই সিস্টার নিবেদিতা, তিনিই দুর্গা। অষ্টমী-নবমীর সন্ধিক্ষণে যাঁর জন্ম হয় তিনিই যুগেযুগে তিনিই কিন্তু নবরূপে উন্মোচিত হন যুগে-যুগে, দেশে-দেশে, কালে-কালে।'
তৃণমূল বিধায়কের এই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করা হয়েছিল রামকৃষ্ণ মিশন মঠের তরফে। ঝড় বয়ে গিয়েছিল সমালোচনার।