ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো করিডরের হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত মেট্রো চালু হতেই একদিকে যেমন আয় কমে গিয়েছে বাসের তেমনই ক্যাব চালকদের একাংশ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
১৫ মার্চ নতুন মেট্রো চালু হওয়ার পর থেকেই যাত্রী সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে । বেশির ভাগ যাত্রীরা যারা আগে হাওড়া থেকে এসপ্ল্যানেড সংলগ্ন অঞ্চলে ক্যাবে যাতায়াত করতেন, তারা মাত্র ১০ টাকাতেই সেই দূরত্ব মেট্রোতেই অতিক্রম করছেন তাও শীততাপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে।
১৫ মার্চের আগে যেখানে হাওড়া থেকে গিরিশ পার্কের ক্যাব ভাড়া ছিল ৩৫০টাকার আশেপাশে তা এখন নেমে দাঁড়িয়েছে ১৮০ থেকে ১৯০টাকার মধ্যে। ঠিক তেমনই হাওড়া থেকে কালীঘাটের ভাড়া ৪৫০টাকার আশেপাশে থেকে কমে এসেছে ৩২০-৩৫০টাকার মধ্যে। হাওড়া থেকে ধর্মতলার আগে ভাড়া ৩০০ টাকার কাছাকাছি থাকলেও তা এখন নেমে এসেছে ২০০টাকার আশেপাশে।
হাওড়া ময়দান থেকে মেট্রো পরিষেবা চালু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই হাওড়া-এসপ্ল্যানেড রুটে অন্তত ৪০ শতাংশ কমেছে বলে মনে করছেন বাস চালক-কর্মীরা। ফেরিতেও কমছে যাত্রী সংখ্যা। উল্টোদিকে, অফিস টাইমে হাওড়া ময়দান মেট্রোয় তিল ধারনের জায়গা নেই। তবে ভিড় হলেও পরিষেবায় খুশি যাত্রীরা।
ক্যাব চালক জয়ন্ত দাস বলেন, "হাওড়া ময়দান থেকে মেট্রো পরিষেবা চালু হওয়ার পর হাওড়া স্টেশন থেকে তেমন যাত্রী মিলছে না। আগে হাওড়া থেকে এসপ্ল্যানেডে এসি ক্যাবে চার্জ ২৩০-২৫০ টাকার মধ্যে থাকলেও এখন তা নেমে এসেছে ১৫০-১৮০টাকার মধ্যে। তাতেও অবশ্য বিশেষ সুবিধা মিলছে না। কারণ মাত্র ১০ টাকাতেই এসি মেট্রোতে যাত্রীরা আরামেই হাওড়া থেকে এসপ্ল্যানেডের দূরত্ব অতিক্রম করছে। আমাদের মূলত ভোরে এবং রাতের দিকে যাত্রীদের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে"।
তবে যে শুধুমাত্র এসপ্ল্যানেড এবং সংলগ্ন অংশে যাত্রী অমিল এমনটা নয়। যে সকল যাত্রী কালীঘাট, টালিগঞ্জ, পার্কস্ট্রিট যাচ্ছেন তারাও হাওড়া থেকে মেট্রো ধরে এসপ্ল্যানেডে এসে লাইন বদলে মেট্রো ধরে অনায়াসেই গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছেন। হাওড়া স্টেশন চত্ত্বরে প্রায় ৪ বছর ধরে ক্যাব চালাচ্ছেন বাবু সিং, তিনি বলেন, 'আগে গাড়িগুলিকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হত না। যাত্রীদের ভিড় লেগেই থাকত। এখন পরিস্থিতি একেবারে বদলে গিয়েছে। সারাদিনই প্রায় ঘুমিয়ে কাটাচ্ছেন ক্যাব চালকরা। পাশাপাশি ঘন্টা প্রতি পার্কিং ফিও দিতে হচ্ছে চালকদের। কিছু অ্যাপ-ক্যাব কোম্পানি ভাড়ার মধ্যেই পার্কিং ফি ধরে নেয়। একজন যাত্রী যখন মাত্র ২০টাকায় পার্কস্ট্রিট, ববীন্দ্রসদন যেতে পারছেন তখন কেন তিনি অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করবেন'?
তিনি আরও বলেন, 'মেট্রো চালু হওয়ার আগে ক্যাব চালকরা দিনে ১৫০০ থেকে ২০০০টাকা উপার্জন করতেন সেখানে এখন তারাই ৩০০-৪০০টাকা প্রতিদিন গাড়ি চালিয়ে উপার্জন করছেন'। অপর এক ক্যাব চালক বলেছেন, মেট্রোয় ১০-১২ মিনিটের মধ্য মাত্র দশ টাকা ভাড়ায় গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছেন মানুষ। তাও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে। এতে খুশি যাত্রীরা। আর ক্যাবে ১৫ মিনিটে রবীন্দ্র সেতুও পার হওয়া যায় না। স্বভাবত ক্যাবের প্রতি মানুষের আকর্ষণ কমেছে'।
শহরতলী থেকে প্রতিদিন ধর্মতলায় অফিস করতে আসেন বিপ্লব মাইতি। তিনি বলেন, আগে মানুষজন বাসে বা লঞ্চে ধর্মতলায় আসতেন। তাতে হাওড়া স্টেশনে নেমে অনেকটা হেঁটে এসে তারপর বাসের জন্য অথবা লঞ্চের জন্য অপেক্ষা করতে হত। এখন হাওড়া স্টেশনে নেমে কয়েক পা হাঁটলেই মেট্রো। মাত্র ১০ মিনিটের এসির হাওয়া খেতে খেতে ধর্মতলায়। কেন মানুষ অন্য কোনকিছু উপর নির্ভর করবেন।অনেকেই ধর্মতলায় নেমে পার্ক স্ট্রিট হেঁটে চলে যাচ্ছেন। কিংবা ধর্মতলা থেকে পার্ক স্ট্রিটের মেট্রো ধরে নিচ্ছেন।