“যেদিন অভিযুক্তদের ফাঁসি হবে, সেই বছর খুশির ইদ পালন করব”। এমনটাই বললেন বগটুই গ্রামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত আতাহার বিবির মেয়ে নুরেন্নেসা বিবি। তাই এবছরও ইদের দিন বাপের বাড়িতে এলেও ইদ পালন করছেন না তিনি। শুধু নুরেন্নেসা বিবি নন, বগটুই গ্রামে অগ্নিকাণ্ডে নিহত সকলের পরিবারই এবছর খুশির ইদ উৎসব উদযাপন করছেন না। ফলে খুশির ইদের দিনও সমগ্র বগটুই গ্রামে নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা।
বগটুই গ্রামের অধিকাংশ পরিবারই মুসলিম। ফলে প্রতিবছর এই গ্রামে সাড়ম্বরে পালিত হত খুশির ইদ উৎসব। গোটা গ্রাম আলো আলোয় সেজে উঠত। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সরগরম থাকত গ্রাম। গ্রামের বাসিন্দারা পরস্পরের সঙ্গে কোলাকুলি থেকে মিষ্টি বিনিময়- সব কিছুই মহা সমারোহে করতেন। কিন্তু সেই চেনা ছবি এবছর একেবারেই উধাও। খুশির ইদের দিনেও গোটা গ্রামে নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা।
যেন দিনের বেলাও নেমে এসেছে আঁধার। অন্যান্য বছরের মতো এবারেও বগটুই গ্রামের যে সমস্ত বাসিন্দা বাইরে থাকেন, তাঁরা ফিরে এসেছেন। কিন্তু কারওর মধ্যেই উল্লাস নেই। অন্যান্য বছর ইদের দিন গ্রামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত। এবার সেটাও বন্ধ। বাড়িতেও ক-জন খুশির ইদ উদযাপন করছেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বলা যায়, গ্রামের মসজিদ বাদ দিলে সর্বত্র নিস্তব্ধতা।
আরও পড়ুন মেধাবী-মিশুকে সুতপাকে এই ভাবে খুন করতে পারল প্রেমিক! বিশ্বাসই হচ্ছে না পরিজন-প্রতিবেশীদের
বগটুইকাণ্ডে অগ্নিদগ্ধ আতাহার বিবি এক মাসেরও বেশি সময় ধরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে ১ মে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়েই শ্বশুরবাড়ি থেকে গ্রামে ছুটে এসেছেন আতাহারা বিবির মেয়ে নুরেন্নেসা বিবি। বছর পাঁচেক আগে সাঁইথিয়া থানার বাতাসপুর গ্রামে বিয়ে হলেও তিনি প্রতি বছরই অবশ্য ইদের দিন বগটুই গ্রামে আসেন। মায়ের টানেই গ্রামে আসতেন। এবছরও সেই মায়ের জন্যই গ্রামে এলেও অবস্থাটা একেবারেই অন্য।
মায়ের এভাবে মৃত্যুতে মর্মাহত নুরেন্নেসা বিবির এখন একটাই লক্ষ্য, অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া। কবে মায়ের মৃত্যুতে জড়িতরা শাস্তি পাবে, তারই দিন গুনছেন নুরেন্নেসা বিবি। তাই ছোট থেকে ইদ উৎসব সাড়ম্বরে পালন করলেও এবছর তিনি ইদ পালন করেননি। তাঁর কথায়, "প্রতিবছর মায়ের টানে বগটুই গ্রামে এসে ইদ পালন করেছি। এবারও এসেছি। কিন্তু নেই মা ও আমাদের নিকট আত্মীয়রা। তাই যারা আমার মা এবং আমাদের নিকট আত্মীয়দের পুড়িয়ে মেরেছে, তাদের যেদিন ফাঁসি হবে সেবারই পালন করব খুশির ইদ।"
বগটুই গ্রামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় ২৯ জন গ্রেফতার। বহু মানুষ গ্রাম ছাড়া। তাই গোটা গ্রামে এখন শোকের ছায়া। অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১০ জন সহ আহতদের পরিবাররাও খুশির ইদ পালন করছেন না। আর যাঁরা ইদ পালন করছেন, তাঁরাও একেবারে নিয়মরক্ষায় করছেন। বলা যায়, এবছর বগটুই গ্রামের ইদ একেবারে জৌলুসহীন।
আরও পড়ুন ইদের সকালে রিজওয়ানুরের বাড়িতে মমতা-অভিষেক, পরিবারের সঙ্গে খোশমেজাজে মুখ্যমন্ত্রী
তবে গ্রামবাসী খুশির ইদ পালন না করলেও পুলিশের তরফে ইদ উদযাপন করা হচ্ছে। এদিন সকালেই রামপুরহাট থানার পক্ষ থেকে বগটুই গ্রামের বিভিন্ন মসজিদে নামাজিদের মধ্যে লাড্ডু এবং পানীয় জল বিতরণ করা হয়। বগটুই বড় মসজিদে উপস্থিত থেকে লাড্ডু বিতরণ পরিদর্শন করেন রামপুরহাট থানার আইসি দেবাশিস চক্রবর্তী, সাব ইন্সপেক্টর সুখেন লেট সহ অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকেরা। ইদ উৎসবের দিন যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেজন্য পুলিশি টহল চলছে গ্রামে।