Advertisment

ভোট এসে গেল, কিন্তু সেটলমেন্ট ক্যাম্পে কোথায় সেটলমেন্ট?

"পরিচয়পত্র পেলেও জীবনের শান্তি উধাও। পথের ভিখিরি হয়ে গেলাম। সরকার আমাদের দেখছে না," বক্তব্য মেখলিগঞ্জের সেটলমেন্ট ক্যাম্পের বাসিন্দাদের।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Enclave settlement camp, north bengal

ছিটমহলে জমি-বাড়ি ছেড়ে এসে ভুল করেছেন, ভোটবাড়ির শিবিরের বাসিন্দাদের চোখে-মুখে হতাশা। ছবি- শশী ঘোষ

দিবাংশু রায়, নগেন্দ্র বর্মণ, বলরাম বর্মণ-রা এদেশে এসেছিলেন জীবন-জীবিকা, সুখ-শান্তির খোঁজে। ভারতের ছিটমহলের বাসিন্দা হিসাবে প্রথমে পূর্ব পাকিস্তান, পরে বাংলাদেশের মাঝে কাটিয়েছেন ৬৮ বছর। কিন্তু এদেশে পাকাপাকি ভাবে এসেও তাঁরা উদ্বাস্তু জীবন যাপন করছেন। রোজগারের জন্য অন্যের বাড়িতে কাজ করা এখন তাঁদের উপার্জনের অন্যতম পথ। ভিটে-মাটি, জমি, সব হারিয়ে এখন টিনের চালার সেটেলমেন্ট ক্যাম্পে রয়েছেন। চার বছরেও না জুটলো এক টুকরো জমি, না মিলল কাজের সন্ধান।

Advertisment

2019 lok sabha election, চার বছরেও পাকাপাকি ভাবে বসতি জুটল না। এই টিনের ঘরই ভরসা। ছবি: শশী ঘোষ

ছিটমহলের বাসিন্দা বলা হলেও বাস্তবে কোনও দেশেরই নাগরিকত্ব ছিল না তাঁদের। ভোটাধিকারের কোনও প্রশ্নই ওঠে না। এবারই প্রথম তাঁরা দেশ গঠনের ভোট দেবেন। শুক্রবার জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের মেখলিগঞ্জের লথামাড়ি হাইস্কুলের বুথে জীবনে প্রথম লোকসভার ভোট দেবেন ভোটবাড়ির সেটেলমেন্ট শিবিরের বাসিন্দারা। ১১৫ বাসকাটা, ১১৯ বাসকাটা, ৩৫ গোতামাড়ি, ১১২ বাসকাটা, ১৩৬ খরখরিয়া সহ সাতটি ছিটের ২১৫ জন থাকেন ভোটবাড়িতে। প্রকৃতই এদেশের বাসিন্দা হয়ে কেমন আছেন ছিটমহলের বাসিন্দারা?

enclave settlement camp, এখানকার বাসিন্দাদের মোট ২৩টি টোটো রয়েছে। টোটো চালানোই প্রধান জীবিকা। ছবি: শশী ঘোষ

নারায়ণ রায়ের আপশোষ, "এখানে আসার আগে সাত বিঘে জমি জলের দরে বিক্রি করতে হয়েছে। আমার মত হাল হয়েছে সবারই।" এখন চলছে কী করে? "কি বলব বলুন, অন্যের বাড়িতে কাজ করে আমাদের সংসার চলে। আর কেউ কেউ ঋণ করে টোটো কিনেছে। রেশন দেয় ঠিকই, কিন্তু পড়াশুনা, অসুখ-বিসুখ তো লেগেই থাকে। কোনওরকমে দিন গুজরান চলছে। মনে হয়, মর্যাদা তো দূরের কথা, বরং এখানে এসে উদ্বাস্তু হয়ে গেলাম।"

enclave settlement camp এভাবেই একদিন গুটি গুটি পায়ে বড় হয়ে যাবে ঠাকুমার কোলের এই শিশু। ছবি: শশী ঘোষ

আপনাদের বাড়ি করে দিয়েছে সরকার? এই প্রশ্নে রাগ-হতাশা-অভিমান দিবাংশু, নারায়ণবাবুদের চোখেমুখে। তাঁদের জবাব, "কথা দিয়েছিল এই শিবিরে দুবছর থাকতে হবে। কথা আর রাখল কোথায়? এই তীব্র গরমে টিন দিয়ে ঘেরা, টিনের চালের ঘরে মানুষ থাকতে পারে! দুপুরে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে যেতে হয়। আর বৃষ্টি পড়লে ঘরে জল ঢুকে ভেসে যায়। শীতের রাতে টিনের চাল থেকে টপ টপ করে জল পড়তে থাকে। যাযাবরের মত জীবনযাপন করছি। পরিচয়পত্র পেলেও জীবনের শান্তি উধাও। পথের ভিখিরি হয়ে গেলাম।" ভোটবাড়ির শিবিরের সকলের মুখেই এই এক কথা। "দেশ ছিল না, তবে ছিটমহলই ভাল ছিল।"

enclave settlement camp এভাবেই দিন কাটছে সেটেলমেন্ট ক্যাম্পের বাসিন্দাদের। ছবি: শশী ঘোষ

চ্যাংড়াবান্ধা পানিশালায় ৫৬টি পরিবারের থাকার মত ফ্ল্যাট তৈরি করছে রাজ্য সরকার। ভোটবাড়ি থেকে পানিশালার দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। কিন্তু এই শিবিরের কেউই সেখানে যেতে নারাজ। কেন যেতে চাইছেন না? পরিমল বর্মণের বক্তব্য, "এক, ওই জায়গাতে জনবসতি কম। রোজগারের কোনও পথ নেই। দুই, ওই ফ্ল্যাটবাড়ি নদীর পাশে। সেতু না হলে ৩০-৩৫ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হবে। এ তো একপ্রকার নির্বাসনে পাঠানো। আমরা ওখানে যাব না বলে ২০১৭-র জুনে চারদিন অনশন করেছিলাম মেখলিগঞ্জ মহকুমা শাসকের অফিসের সামনে। ৪০ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। জানি না কী করব।"

বিস্তর প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও এবছর চ্যাংড়াবান্ধা হাইস্কুল থেকে সাতজন পড়ুয়া মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। তিনজন মেখলিগঞ্জ কলেজে পড়াশুনা করছে। বাইক মেকানিক স্বপন রায়ের আপশোষ, "বাংলাদেশে নদীর পাড়ে ভাঙনের ভয়ে দিন কাটত। এখানেও সেই নদীর পাড়েই ঠাঁই হবে। সরকার যদি ফ্ল্যাটবাড়ি না দিয়ে অল্প-বিস্তর জমি দিত, তাহলেও জীবনটা উতরে যেত।"

lok sabha 2019 north bengal
Advertisment