যা ছিল শিশুবিকাশ কেন্দ্র, তা রাতারাতি হয়ে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয়। আর এই ঘটনা নিয়েই শুক্রবার সকাল থেকে ব্যাপক ক্ষোভ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের লোদনা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বারিশালী গ্রামে। ঘটনার বিহিত চেয়ে গ্রামের বাসিন্দারাই মেল করে ব্লক প্রশাসন ও মহকুমা শাসকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। পাশাপাশি ঘটনার নিন্দা করে বিরোধীরাও জোরদার আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিয়েছে।
বারিশালী গ্রামে শুক্রবার পৌছে দেখা যায় অ্যাসবেস্টর্স চালার একটি বাড়ির দেওয়ালে সিমেন্ট দিয়ে বড় বড় করে লেখা রয়েছে, 'বারিশালী ২২ নং শিশুবিকাশ কেন্দ্র'। তার ঠিক নীচে আবার তৃণমূলের প্রতীক আঁকা রয়েছে। প্রতীকের মাথায় রঙ দিয়ে লেখা হয়েছে, 'বারিশালী তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়'। আর এ নিয়েই যত বিরোধ। গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর ধরে এই বাড়িটি ছিল শিশুবিকাশ কেন্দ্র অর্থাৎ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। কিছু দিন হল বারিশালী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে স্থানান্তর করা হয়েছে। তারপর থেকে বাড়িটি ফাঁকাই পড়েছিল। হঠাৎ করে বুধবার সকালে ফাঁকা বাড়িটির দখল নেয় শাসক দল তৃণমূল। রাতারাতি বাড়িটিকে তৃণমূল কার্যালয় বানিয়ে ফেলা হয়। বাড়িটির দেওয়ালেও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতীক এঁকে দিয়ে তার উপরে বারিশালী তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয় বলে লিখে দেওয়া হয়েছে। এমনকী ওই লেখার পাশে বুথ ১০২/১১৩ বলেও উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি এতকাল শিশুশিক্ষা কেন্দ্র হিসাবে যে বাড়িটি ব্যবহার হয়েছে সেটি হয় প্রসাসন অন্য কোনও জনকল্যাণকর কাজে ব্যবহার করক, নয়তো বাড়িটিকে সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হোক। দাবিপত্রেও সেই কথাই প্রশাসনকে জানানো হয়েছে গ্রামবাসীদের তরফে।
আরও পড়ুন- ক্রিকেট নিয়ে তরজার রেশ, কোচবিহারের রাস মেলায় বাংলাদেশি পণ্য বয়কটের ডাক!
এ বিষয়ে মহকুমা শাসক (বর্ধমান দক্ষিণ) কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল বলেছেন, 'ই-মেল এখনও দেখিনি। ওই চিঠির বিষয়বস্তু দেখার পর পুলিশের পাশাপাশি প্রশাসনিকভাবেও তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা মনোরঞ্জন বটব্যাল জানান, বারিশালী গ্রামের বাসিন্দা জগবন্ধু রায় সিপিএমের দলীয় অফিস করার জন্যে ১৯৮৪ সালে জায়গাটি দান করেছিলেন। যার দাগ নম্বর- ২২৮৯, খতিয়ান নম্বর- ১৫৮/২। এর কিছুদিনের মধ্যেই গ্রামে শিশুবিকাশ কেন্দ্র অর্থাৎ অঙ্গনওয়াড়ি তৈরির প্রস্তাব আসে। কিন্তু তখন শিশুবিকাশ কেন্দ্র গড়ার জন্যে জায়গা না মেলায় জগবন্ধুবাবুর অনুমতিতে ওই জায়খার একাংশে ‘২২ নম্বর’ শিশু বিকাশ কেন্দ্র গড়ে ওঠে। সেই থেকে কিছুদিন আগে পর্যন্ত ওই বাড়িতেই শিশুবিকাশ কেন্দ্র চলে। বাড়িটির প্রকৃত মালিক জগবন্ধুবাবু পাঁচ বছর আগে প্রয়াত। আর তিনি যাঁকে ওই জমিটি দিয়ে গিয়েছিলেন সেই সিপিএমের নেতা আলম সাহানাও পাঁচ মাস আগে মারা গিয়েছেন।
খণ্ডঘোষের বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগ বলেছেন, 'দখলদারি নীতিতে তৃণমূল বিশ্বাস করে না। সিপিএমের কয়েকজন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। বিধানসভার অধিবেশন শেষ হওয়ার পরে আলোচনায় বসে এই বিষয়টি সমাধানের যথাযথ পথ বের করা হবে।' যদিও সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য বিনোদ ঘোষ বলেন, 'ওই বাড়ি রাজনৈতিক দলের হাতে চলে গেলে এলাকার সাংস্কৃতিক প্রেমী মানুষরা সমস্যায় পড়বেন। তাই বাড়িটিকে যাতে সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা হয়সেটা প্রশাসনের দেখা উচিত।' বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্রের কথায়, 'দখলের রাজনীতিতে তৃণমূল সিদ্ধহস্ত। তাই ভোটের সময় ছাপ্পা ভোট দেওয়ার জন্য বুথ দখল থেকে শিশুবিকাশ কেন্দ্র দখল করেছে।'