সম্প্রতি অকারণে অ্যাম্বুল্যান্সের হুটার বাজানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাজ্য সরকার। নয়া নিদান অনুযায়ী, অ্যাম্বুল্যান্সের হুটারের শব্দ বেঁধে দিতে হবে। কিন্তু সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সঠিক মনে করছেন না একদল পরিবেশবিদ। অ্যাম্বুল্যান্সের সাইরেনের শব্দের চেয়েও মানুষের অন্যান্য গাড়ি বা বাইকের হর্নে বেশি অসুবিধে হয়ে থাকে বলে মত তাঁদের।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বেশ কিছুদিন আগে শব্দদূষণ কমানোর জন্য অ্যাম্বুল্যান্সের হুটার ও সাইরেন বাজানোর ক্ষেত্রে নির্দেশিকা জারি করার কথা বলেন। ফলে প্রায় রাতারাতি কলকাতা ও হাওড়া পুরসভা অধীনস্থ এলাকায় 'অকারণে' অ্যাম্বুল্যান্সের সাইরেন বাজানোর উপর কড়া নির্দেশিকা জারি করে রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। কিন্তু সাইরেন না বাজালে শহরের যানজটে বিপাকে পড়তে হবে চালকদের। সে কারণে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ থেকে বলা হয়েছে, যদি একান্তই সাইরেন বাজাতে হয়, তবে তার শব্দমাত্রা থাকবে ৬৫ ডেসিবেল। রাত হলে সেই শব্দমাত্রাকে রাখতে হবে ৫৫ ডেসিবেলে।
তবে সবকিছু ছেড়ে অ্যাম্বুল্যান্সের হুটারকে কেন কাঠগড়ায় তোলা হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে তিনি বলেন, "আমরা শব্দ যন্ত্রণায় জর্জরিত। শব্দ মূলত যে সমস্ত বৃহৎ জায়গা থেকে উৎপন্ন হয়, সে জায়গাগুলোকে বন্ধ না করে লোক দেখানো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সারা কলকাতায় দিনে কটা অ্যাম্বুলেন্স চলে? অথচ রাজনৈতিক দলের নেতারা যখন হুটার বাজিয়ে রাস্তা দিয়ে যান, তখন শব্দদূষণ হয়না? তাঁদের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে তো? ভোটের আগে মাইকিং-এ বেশি শব্দদূষণ হয়ে থাকে। শুধু ভোট নয়, যেকোনো পুজোতেও একই ছবি দেখে থাকি আমরা। সরকার সেদিকে নজর না দিয়ে হঠাৎ অ্যাম্বুল্যান্সের সাময়িক বাজিয়ে যাওয়া সাইরেনে কেন নিষেধাজ্ঞা জারি করল, তা ভাবাচ্ছে।"
"সাইরেনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার আগে ট্রাফিক কন্ট্রোলটা দেখা উচিত। কারণ শব্দ না করলে অনেক সময়ই ব্যস্ততার মাঝে চালক অ্যাম্বুল্যান্সের আলো নাও দেখতে পেতে পারেন, বা বুঝতে অসুবিধা হতে পারে। সেক্ষেত্রে আগে অ্যাম্বুল্যান্সের আলো আরও জোরালো করা উচিত। অ্যাম্বুল্যান্স যেন যানজটে আটকে না পড়ে, সে বিষয়ে রাজ্যকে আগে পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ আমাদের শহরে অ্যাম্বুল্যান্স লাইন নেই। সমস্ত পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়ার পরই অ্যাম্বুল্যান্সের হুটার ও সাইরেন বাজানো নিয়ে নির্দেশিকা জারি করা উচিত," মনে করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে জানানো হয়েছে, কলকাতায় সহনীয় শব্দমাত্রা ৬৫ ডেসিবেল, সেখানে তা ছাড়িয়েছে ৮০ ডেসিবেল। অ্যাম্বুল্যান্সের হুটারের শব্দমাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে ৭৫ ডেসিবেল। শব্দ দস্যুর হাত থেকে রক্ষা পেতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, তাতে বলা হয়েছে, অ্যাম্বুল্যান্স ফ্ল্যাশারের সঙ্গে বিকন লাইট রাখতে হবে। রোগী নিয়ে যাওয়ার সময় হুটার বা সাইরেন না বাজিয়ে বিকন আলো ব্যবহার করতে হবে। টি-টি হর্ন, এয়ার হর্ন এবং কর্কশ শব্দ করে এমন সাইরেন ব্যবহার করা যাবে না।
অ্যাম্বুল্যান্স চালক অমর শেখ বলেন, "হুটার বাজালেও অনেক সময় গাড়ি সরতে চায় না। সেক্ষেত্রে যদি শুধু আলো জ্বালিয়ে রাখতে হয় তবে মুশকিল হবে। হুটার ক্রমাগত বাজিয়ে যাওয়ার পর গাড়ি সরতে থাকে। এক এক সময় একবার হুটার বাজিয়ে রেখে দিই, কিন্তু দেখা যায় সামনের গাড়ি যেকে সেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। হর্ন বাজালে অন্য গাড়ির সঙ্গে আলাদা করা যায় না। তবে, গাড়িতে রোগী না থাকলে বা রোগীর শোচনীয় অবস্থা না হলে হুটার বাজানোর প্রয়োজন হয় না।" তিনি আরও বলেন, "আমরা জানি না এই নির্দেশিকা কী করে পালন করা সম্ভব হবে। জরিমানা দিতে হলে সরকারের আদেশ মানতেই হবে। নিশ্চয়ই কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ এর কোনো উপায় বের করবে।"