Advertisment

আমি চাই: মমতা-কানহাইয়া প্রধানমন্ত্রী হোন, জিতুক নকশালরাও

আমি কানহাইয়াকে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চাই। আবার বাঙালি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মমতাকেও দেখতে চাই। শুনেছি, দুটি কেন্দ্র থেকে লিবারেশন লড়ছে। আমি চাই, ওরা জিতুক।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

কবীর সুমন। এক্সপ্রেস ফটো: পল্লবী দে

তিনি মনে মনে মার্কসবাদী, আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও ভক্ত। তিনি স্বীকার করেন, তাঁর মধ্যে স্ববিরোধ রয়েছে। তিনি সোচ্চারে বলেন, "আমি রাজনীতির মানুষ না হলেও, রাজনৈতিক মানুষ"। তাঁর গান কখনও অন্যায় সন্ধি করে না। বরং বরাবরের অভ্যাস, সময়ের কথা বলা। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের সাধারণ নির্বাচনের মরশুমে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে একান্ত সাক্ষাৎকারে এই সময়ের রাজনীতি প্রসঙ্গে মনের কথা শোনালেন কবীর সুমন। আজ প্রথম পর্ব।

Advertisment

আজকের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যদি 'আমি চাই' গানটি লিখতেন, তাহলে কোন ইচ্ছার কথা সর্বাগ্রে বলতেন?

বিজেপি-আরএসএস বিদায় হোক এই দেশ থেকে। যতদিন না ওরা এই অদ্ভুত, বিসদৃশ, অযৌক্তিক জাতিবিদ্বেষ, বর্ণবিদ্বেষ, জাতপাতের হিসেব - এগুলি বন্ধ করছে, ততদিন... তবে বলে রাখি, আমার কিন্তু বিজেপিতে বেশ কয়েকজন বন্ধু রয়েছেন।

তাই! কবীর সুমনের বিজেপি বন্ধু!

আজ্ঞে (চোখে মুখে চেনা হাসি)

আপনার এই বন্ধুরা কি জাতীয় স্তরের বিজেপি নেতা, না কি...

(প্রশ্ন শেষ না করতে দিয়েই) না না, জাতীয় স্তরের। এখানে কেউ নেই (গলায় পরিচিত তাচ্ছিল্য)।

মমতার মঞ্চে ওরা থাকলে আমি আর যাব না: কবীর সুমন

বঙ্গ বিজেপি-তে কি বন্ধুতুল্য কাউকে পান না?

ধুর...(ফের তাচ্ছিল্য, এরপর কয়েক সেকেন্ড ভাবলেন) তবে এখানে একজনকে আমার ভাল লাগে। তিনি হলেন রাহুলবাবু। মানে, বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা। ওঁর সঙ্গে বেশ কিছু আলোচনা সভায় যোগ দিয়েছি, ঠান্ডা মাথায় বেশ যুক্তিগ্রাহ্য কথা বলেন উনি। আশা করি তিনি ভাল আছেন।

বিজেপি-তে আপনার বন্ধু তালিকাটা একটু বলবেন?

বরুণ গান্ধী আমার খুব স্নেহের। তথাগত সতপথি, অর্থাৎ ওড়িশার প্রাক্তন কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী নন্দিনী সতপথির পুত্র। তথাগত অসম্ভব মেধাবী ছেলে। এছাড়া, আমার বিশিষ্ট বন্ধু কীর্তি আজাদ। তিনিও বিজেপি-তেই ছিলেন। যদিও আমি শুনেছি, কীর্তি কংগ্রেসে চলে গিয়েছেন। এমন একটা সিদ্ধান্তের জন্য তাঁকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। অর্থাৎ এমনটা কিন্তু নয় যে বিজেপিতে ভাল মানুষ নেই। পার্লামেন্ট করে আমার একটা উপলব্ধি হয়েছে, যে দেশটা আসলে খারাপ না। এ দেশের বহু খামতি রয়েছে, কিন্তু ব্যবস্থাটাকে যদি কেউ ভালভাবে ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে সাধারণ মানুষের অপকার হবে না। আমি কখনও (সাংসদ থাকাকালীন) আমার এলাকার প্রয়োজনে কোথাও গিয়ে খালি হাতে ফিরিনি। প্রত্যেকে আমার কথা শুনেছেন। তবু, আমার একাধিক বন্ধু ওই দলে থাকা সত্ত্বেও বলব, বিজেপি দলিত বিরোধী, মুসলিম বিরোধী, বড়লোককে তোয়াজ করা দল। তাই বিজেপি-কে চাই না।

আপাতত আপনার এই একটাই চাওয়া?

হ্যাঁ, একটাই চাওয়া। বন্ধু, বিজেপিকে রুখতে হবে। একই সঙ্গে সরাসরি বলছি, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে হঠাতে গেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে ভোট দিতে হবে। অর্থাৎ বিজেপিকে সিরিয়াসলি সরাতে গেলে মমতাকে ভোট দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। ভোট ভাগাভাগি চলবে না। আমি যে খুব তৃণমূলপন্থী, তা কিন্তু না। তবে এই ভোটে বিজেপিকে রুখতে মমতার হাত শক্ত করতেই হবে, এটাই বাস্তবতা। আবার এই রাজ্যেই এক রাজনীতিক আছেন, আমি তাঁকে খুব পছন্দ করি এবং চাই তিনি জিতুন।

 Exclusive Interview of Kabir Suman এক্সপ্রেস ফটো: পল্লবী দে

কে তিনি?

দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। সিপিআই (এমএল লিবারেশন)-এর নেতা। অসাধারণ পণ্ডিত ব্যক্তি, একাধিক ভাষা জানেন, এবং চূড়ান্ত রসবোধ সম্পন্ন মানুষ। আমার মনে হয়, ওঁর মতো মানুষকে যদি ভারতের রাজনীতিকদের মধ্যে পাওয়া যেত...আহা! শুনেছি, দুটি কেন্দ্র থেকে (কৃষ্ণনগর ও হুগলি) লিবারেশন লড়ছে। আমি চাই, ওই দুই কেন্দ্রে ওরা জিতুক।

সে কি! এই তো বললেন, এ রাজ্যে মমতাকে ভোটে জেতানোই বাস্তবতা! তাহলে?

আমি জানি, এই প্রশ্নটাই উঠবে। কারণ আমি স্ববিরোধী কথা বললাম। তবু বলব, ওই দুটি কেন্দ্রে ওরা জিতুক। দীপঙ্করের হাসিমুখ আমি দেখতে পাব কি না জানি না। কিন্তু, আমি দেখতে চাই। এটা যে আমার ব্যক্তিগত প্রণয়ের জায়গা থেকে বলছি তা নয়। আমি মনে করি, দীপঙ্করের মতো মানুষকে দরকার।

কিন্তু...

আমি জানি, আমার ইনকনসিসট্যান্সি আছে। এইটাই আমি। দেখুন, আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভক্ত। আমার মায়ের পর এমন ডায়নামিক মহিলাই আর দেখিনি। সাংঘাতিক ডায়নামিক মহিলা। 'ফেনোমেনান, সো ফুল অফ কনট্রাডিকশনস'। শুনেছি, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে অতিথি খাতায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, "মাই গ্রেটেস্ট ভারচু অ্যান্ড মাই গ্রেটেস্ট ভাইস, দ্যাট ইজ মাই ইনকনসিট্যান্সি"। আমার নিজেরও তাই। মমতা এটা শুনলে হয়ত রেগে যাবে, কিন্তু মমতারও তাই।

আপনি কি তৃণমূলে আছেন?

দেখুন, আমি তৃণমূলের নেতা নই। প্রার্থী হওয়ার আগে সদস্যপদ গ্রহণ করেছিলাম। সাংসদ পদ চলে যাওয়ার পরই আমি ইস্তফা দিই বন্ধু মুকুল রায়ের কাছে। কিন্তু, তৃণমূল দলটাকে আমার ভাল লাগে। দলটার মধ্যে একটা ভাইব্র্যান্ট ডেমোক্রেসি আছে। প্রচুর ঝগড়া হয়, ওটাই গণতন্ত্রের লক্ষণ। সিপিএম আমলে কোথাও কোনও গণ্ডগোল হলে, চোখটা একটু টেরিয়ে বলা হত, "আপনাকে একটু পার্টি অফিসে আসতে হবে।" এগুলো শুনলে ঠাটিয়ে একটা চড় মারতে ইচ্ছা করে। তৃণমূল কিন্তু কারও সঙ্গে এমনটা করে না। ফলে, আমার চোখে সামাজিক আচরণগত দিক থেকে কংগ্রেস এবং তৃণমূল অনেক ঠিকঠাক।

আর মতাদর্শের দিক থেকে?

জানি, আমি যা বলব তা দ্বান্দ্বিক বলেই মনে হবে। তবু বলব, আমি নিজেকে মার্কসবাদী বলেই মনে করি। আমি এও মনে করি, শেষ পর্যন্ত একটা মোর্চা তৈরি হবে (দু'চোখ স্বপ্নালু)। সেখানে দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের মতো মানুষ, কানহাইয়ার মতো যুবক নেতৃত্ব দেবেন...

কানহাইয়া কুমারকে আপনার কেমন লাগে?

আমি কানহাইয়াকে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চাই। ভারতের বর্তমান জনবিন্যাস অনুযায়ী, পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশের মধ্যে যাঁদের বয়স, তাঁদের হাতেই নেতৃত্ব তুলে দিতে হবে। আমি চাই, অখিলেশের মতো ছেলেরাও সামনে এগিয়ে আসুন।

মমতার মঞ্চে ওরা থাকলে আমি আর যাব না: কবীর সুমন

কানহাইয়া-অখিলেশদের নিয়ে আপনি এই যে যুব ব্রিগেডের স্বপ্ন দেখছেন, সেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও দেখতে চান?

আমি না, ওঁকে ঠিক চিনি না। তাই, বলতে পারব না। ওঁর কাজকর্ম সম্পর্কে ঠিক ওয়াকিবহাল নই। কিন্তু, অখিলেশবাবুর কাজকর্ম সম্পর্কে জানি। রাহুল গান্ধীর কাজ সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল।

রাহুল গান্ধী সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

খুবই ভাল লাগে ছেলেটাকে। গোড়ার দিকে ওঁকে একটু উদ্ধত মনে হত। পরে বুঝেছি, ওটাই ওঁর রক্ষণের কায়দা। আসলে সারাক্ষণ মানুষ ওঁর উপরে হামলে পড়ত। ইদানিং উনি যেসব কথা বলছেন, তা শুনে বেশ ভাল লাগছে। তবে এই যে হঠাৎ করে প্রিয়াঙ্কা চলে এলেন, এটা ঠিক না। গুষ্টিশুদ্ধু রাজনীতিতে ঢুকে পড়ার এই প্রবণতাটা ভাল লাগে না। কাজের লোক রাজনীতিতে থাক। এই যেমন ধরুন, শুভেন্দু অধিকারী। বাপের ব্যাটা, লড়াকু ছেলে। শুভেন্দু হলেন সঠিক মানুষ, যিনি রাজনীতিতে আছেন।

এই মুহূর্তে আপনার প্রথম চাওয়া যদি আরএসএস-বিজেপিকে রুখে দেওয়া হয়, তাহলে দ্বিতীয় ইচ্ছাটা কি যুব ব্রিগেড?

অবশ্যই। আমি স্বপ্ন দেখি, এমন একটা তরুণ-তরুণীদের দল নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তবে, অন্যদিকে আবার আরেকটা চাওয়াও রয়েছে। জানি, আমি এ কথা বললেই বলা হবে, আমি দিক বুঝে কথা বলছি। কিন্তু, ব্যাপারটা তা না...

কী সেই কথা?

ঠিক যেমন এক সময় মনে হয়েছিল, এক বাঙালি রাষ্ট্রপতি হিসাবে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে দেখতে চাই, তেমনই এখন আমি বাঙালি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মমতাকে দেখতে চাই। আমি ভীষণ খুশি হব। আর এখানেই একটা প্যারোকিয়াল জায়গা চলে এল। আমি স্বীকার করে নিচ্ছি।

কেন, প্যারোকিয়াল কেন? 'দরকার হলে আমি ভীষণ প্রাদেশিক' - সেই ব্যাপারটা?

মমতা আমার ছোট বোন, একসঙ্গে লড়াই করেছি। তাই মমতাকে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চাই। তবে, মমতার ক্ষেত্রে আমার সবচেয়ে যেটা বেশি ভাল লাগে তা হল ওঁর ব্যক্তিত্ব। কারও পরোয়া না করে সোজাসুজি কথা বলছেন। যেমন ধরুন, ও প্রথম যখন দার্জিলিঙে গেল (মমতাকে সুমন 'তুমি' সম্বোধন করেন), তখন মঞ্চে উঠে বলল, "আগে যো সরকার থা, রাজ্যকা বারোটা বাজাকে চলা গিয়া"। নিজের হিন্দিতে উনি যা বলেছেন, সত্যিই তো তাই। কিন্তু, এইটা বলার জন্য একজনই আছেন ভারতে, তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

 Exclusive Interview of Kabir Suman এক্সপ্রেস ফটো: পল্লবী দে

আপনি কি সত্যিই মনে করেন, ভারতের মতো এমন বিরাট ও বৈচিত্রপূর্ণ একটা দেশ মমতা চালাতে পারবেন?

(প্রশ্নটি শুনে অত্যন্ত খুশি) শুনুন, মেয়েটি কালীঘাটের এক এঁদো গলি থেকে উঠে এসেছে। আমি মমতাকে পার্লামেন্টে রেল বাজেট পেশ করতে দেখেছি। বিরোধী সাংসদরা যখন মমতার বক্তৃতায় বারবার ব্যাঘাত ঘটিয়ে বলছেন, উনি যা করার কেবল বাংলার জন্যই করেছেন, সেই সময় মমতা থেমে যায় এবং তার নিজস্ব উচ্চারণ এবং ভঙ্গিমায় দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতের নয়া রেল প্রকল্পগুলি এক এক করে উল্লেখ করতে থাকে। এ সময় মমতার সামনে কোনও কাগজ বা নথি কিছুই ছিল না। গোটাটাই ওর মাথায় রয়েছে। অসম্ভব মেধাবী। সামগ্রিক পরিস্থিতিটা ও মুহূর্তে নিজের অনুকূলে নিয়ে আসে। ব্রিলিয়ান্ট! মনে রাখবেন, ভারতের রেল বাজেটের যা ব্যাপ্তি, তা এই বিশ্বের বহু দেশের জাতীয় বাজেটের থেকেও কয়েক গুণ বেশি। অর্থাৎ এই বিষয়টি সেদিন মমতা যে পরিণত বোধ ও মেধাবী কায়দায় সামলাল, তখন থেকেই আমি বুঝেছি ও পারবে।

ভোটের হাওয়া কী বুঝছেন? কী ফলাফল হতে চলেছে?

বলা খুব মুশকিল। তবে বুঝলেন, বিজেপি হারবে। আর যদি পুরোপুরি না হারে তাহলেও সরকার গড়ার জন্য নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পাবে না। আসলে কী জানেন, ওরা যা করেছে, সে জন্যই আর ভোট পাবে না। ওদের ইতিহাসই ওদের আটকে দেবে। এই দেশটাকে বহু দিন ধরেই আমার আর নিজের দেশ মনে হয় না। নাম পরিবর্তনের জন্য সংখ্যাগুরুর গালিগালাজ শুনতে হয় আমাকে। ফলে এই দেশটা আর আমার না। বলতে পারেন, আমার দেশ হল এই বৈষ্ণবঘাটা বাই-লেন (কবীর সুমনের পৈতৃক বাড়ি)। আচ্ছা বলুন তো, এ দেশে যৌবনের প্রতীক কেন (ফুটবল কিংবদন্তী) গোষ্ঠ পাল নন? কেন পাগড়ি মাথায় দেওয়া ধর্মীয় বিবেকানন্দ যৌবনের প্রতীক হবেন?

বিজেপি-কে নিয়ে আপনি অত্যন্ত বিরক্ত। এই নির্বাচনে সরাসরি লড়তে পারছেন না বলে কি আক্ষেপ হয়?

না, না, বিশ্বাস করুন, দল বিষয়টাই আমি পছন্দ করি না। কারণ, সেই দলটা কোথায়, যেটাকে আমি আমার দল বলতে পারব (গলায় আক্ষেপ স্পষ্ট)? আমি চাই সেই দল, যা শুধু পণ্ডিত আর বিশ্লেষক দিয়ে চলবে না। বরং, প্রেমিকের দৃষ্টি দিয়ে দেখবে দেশটাকে। মমতার উপর আমার সবচেয়ে বেশি রাগ হয়, ও আমাকে ভোটে দাঁড় করিয়েছিল বলে। আবার আমি সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ কারণ ও আমাকে ভোট করিয়েছিল বলেই আমি গ্রামে গেলাম, এলাকাটা চিনতে শিখলাম।

আপনার প্রাক্তন কেন্দ্রে এবার যিনি তৃণমমূল প্রার্থী, অর্থাৎ মিমি চক্রবর্তীর সঙ্গে কথা হয়েছে?

না। তাঁর সঙ্গে আমার আলাপ নেই।

লোকসভা কেন্দ্র হিসাবে যাদবপুর বরাবরই বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষত যাঁরা এখান থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তাঁরা সব হেভিওয়েট। সেই কেন্দ্রে মিমিকে প্রার্থী হিসাবে কেমন লাগছে?

মমতা যখন মিমি দেবীকে প্রার্থী করেছে, তখন নিশ্চয়ই কিছু একটা ভেবে করেছে। আমি মমতার বিবেচনার উপর ভরসা রাখি। আর যাঁরা মিমির প্রার্থীপদ নিয়ে তামাশা করছেন, তাঁদের মনে করিয়ে দিতে চাই, দক্ষিণ ভারত থেকে বহু অভিনেতা-অভিনেত্রী রাজনীতিতে এসে চূড়ান্ত সফল হয়েছেন। তাছাড়া, আমি নিজে দেখেছি, শতাব্দীকে। তিনিও তো সিনেমা জগৎ থেকে রাজনীতিতে এসেছেন, অথচ বেশ ভাল রপ্ত করে নিয়েছেন রাজনীতির আদবকায়দা। ফলে, মিমিকে প্রার্থী করার মধ্য দিয়ে মমতা হয়ত ফের ক্ষমতায়নের পথে হাঁটল। হয়ত একটা নতুন ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটবে। নয়া সম্ভবনার দরজা খুলে যাবে। আবার বিষয়টাকে অন্যভাবেও ব্যাখ্যা করা যেতে পারে...

অন্য রকম ব্যাখ্যাটা কী?

ম্যাকিয়াভেলিয়ান দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়টাকে কেউ দেখতে পারেন। তাঁরা হয়ত ভাবতে পারেন, মমতা এমন একজনকে প্রার্থী করলেন যিনি কখনও দলনেত্রীর বিরুদ্ধে মুখ খুললেন না (মুখে ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি)।

মিমি তাঁর পূর্বসুরির থেকে কোনও টিপস চাইলে সাহায্য করবেন আপনি?

আমার মনে হয় না, আমার থেকে কেউ কিছু চাইবে টাইবে বলে।

বলছি, কারণ আপনি ২০০৯ সালে যাদবপুরে যে লড়াইটা লড়েছিলেন, সেটা রাজনৈতিকভাবে রীতিমতো কঠিন ছিল।

ওরে ব্বাবা! সে ভীষণ কঠিন লড়াই ছিল। সে কেবল আমি জানি, আর আমার সে সময়ের তৃণমূলের লড়াকু বন্ধুরা জানেন। তাঁরা সব খুদ খেয়ে বড় হওয়া ছেলেপুলে। মানে, চাল জুটত না তাঁদের। আজ শুনি, তৃণমূলের হাতে পয়সা টয়সা এসেছে। কিন্তু, তখন তো কিছুই ছিল না। আমরা জান লড়িয়ে দিয়েছিলাম। আর অন্যদিকে সিপিএম কুৎসা করেছে আমাদের বিরুদ্ধে। এসএফআই দেওয়াল লিখেছিল, 'কবীর সুমন এইচআইভি টেস্ট কর'। অথচ আমি বলেছিলাম, একটাও অরাজনৈতিক ব্যক্তি আক্রমণের পথে যেন তৃণমূল না হাঁটে। আমরা হাঁটি নি, এবং সিপিএম-কে হারিয়ে দিয়েছি। সিপিআই(এম) একটা নির্লজ্জ দল।

এ রাজ্যে বিজেপি-কে দ্বিতীয় রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে মানেন আপনি?

বাংলায় তৃণমূলের আদৌ কোনও প্রতিপক্ষ আছে বলে আমি মনে করি না। বিজেপি একটা বোকা বোকা দল। গায়ে পড়ে চারটি বাজে কথা বলা ছাড়া ওদের আর কোনও কাজ নেই। দেখুন, বিজেপিকে আমি একটা সিরিয়াস রাজনৈতিক দল হিসেবে মানতেই পারছি না। কারণ, ওরা জাতিবিদ্বেষী কথা বলে। ওরা এই অঞ্চলে কাজ করতে পারবে? এখানে ৬০ শতাংশ মুসলিম জনবসতি। এরপর আমি যখন নামব ময়দানে, ওরা কি পারবে? (চোখে মুখে লড়াইয়ের অভিব্যক্তি)

আপনি ময়দানে নামবেন?

মমতা বললেই নামব। আমি বক্তৃতা করব।

তেমন আহ্বান কি এসেছে?

না, আসে নি। কিন্তু এমন ডাক এলে আমি খুব খুশি হব। পুরানো দিনের গণ আন্দোলনের মানুষগুলির সঙ্গে দেখা হবে। তাছাড়া, উন্নয়নের কাজ মমতা যা করেছে, সে সবের জবাব নেই। ভাই, আমি ১৪ বছর ইউরোপ, আমেরিকায় থেকেছি। আমি সোশ্যালিস্ট দেশও দেখেছি, নিকারাগুয়ার বিপ্লবও দেখেছি। তারপর বলছি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা কাজ করেছে, যেমন হাসপাতাল গড়ে দিয়েছে, পাশ্চাত্যেও তেমন হাসপাতাল নেই। হয়ত সুইডেন-হল্যান্ডে থাকতে পারে, কিন্তু ইংল্যান্ডে নেই। আমেরিকাতে তো নেইই। এই যে মমতা কন্যাশ্রী করেছে, সবুজসাথীতে সাইকেল দিয়েছে। এর ফলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন?

অবশ্যই। মমতা বৈপ্লবিক বদল নিয়ে এসেছে। বিপ্লব কেবল মার্কস বা লেনিন বা মাও-এর তত্ত্ব অনুযায়ী করতে হবে, তার তো কোনও মানে নেই। সরকার হিসাবে না, মানুষ দেখেছেন মমতা কাজ করেছে। ফলে, ভোটে মানুষ মমতাকে খালি হাতে ফেরাবেন না বলেই আমি আশা করি।

পড়ুন- কবীর সুমনের সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্ব

Mamata Banerjee lok sabha 2019 Kanhaiya Kumar
Advertisment