Advertisment

'ফিরিয়ে দেওয়া হোক ওদের জগৎ', স্কুল খোলার দাবিতে এবার সরব জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা

দীর্ঘদিন স্কুলে না যাওয়ার কারণে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য অনেকাংশে ব্যাহত হচ্ছে, শিশুদের মধ্যে স্কুল না যাওয়াটা একটা বদ অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে, যা আগামী দিনের পক্ষে ভয়াবহ

author-image
Sayan Sarkar
New Update
NULL

বিশ্বব্যাঙ্কের তরফেও সতর্ক করে স্কুল খোলার পক্ষেই মত দেওয়া হয়েছে।

প্রায় দু’বছর স্কুলের গেটে তালা ঝুলছে। রাজ্যে কবে থেকে আবার স্বাভাবিক ছন্দে খুলবে স্কুল কলেজ সে প্রশ্ন এখন বিশ বাঁও জলে। এদিকে অনলাইন পঠন পাঠনের দৌলতে, স্কুলে যাওয়ার অভ্যাসে ছেদ পড়েছে। স্কুল খোলার পরেও কত সংখ্যক ছাত্র ছাত্রী স্কুল মুখো হবে সে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞ মহল। সেই সঙ্গে টানা স্কুল বন্ধ শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এক দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছেন তাঁরা। কেন করোনা মহামারির ছড়িয়ে পড়া আটকাতে স্কুল-কলেজই বন্ধ, কেন বাকি সমস্ত কর্মসূচিতে এর প্রভাব নেই, এই নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছে রাজনীতির অন্দর থেকে পাড়ার চায়ের দোকান সর্বত্রই। এরই মধ্যে ইউনিসেফ জানিয়েছে স্কুল বন্ধ রাখা যাবে না। সম্প্রতি UNICEF প্রকাশিত একটি ভিডিওতে তাঁরা বলেছেন, “স্কুল বন্ধ রেখে যে বিপদ হচ্ছে তা স্কুল খোলা রাখার চেয়ে ঢের বেশি।” বিশ্বব্যাঙ্কের তরফেও সতর্ক করে স্কুল খোলার পক্ষেই মত দেওয়া হয়েছে। তাও রাজ্যে করোনা মহামারীর দোহাই দেখিয়ে বন্ধ স্কুল কলেজ মত বিশষজ্ঞমহলের।

Advertisment

স্কুল কেন খুলতেই হবে তার পক্ষে তিনটি যুক্তি দিয়েছেন UNICEF কর্মকর্তারা। এক, শেখাতে ভীষণ ফাঁকি পড়ে যাচ্ছে শিশুদের। যা শিখেছিল, যেটুকুও পড়তে পারত, তাতে ব্যবধান বেড়ে যাওয়ায় শেখাটুকু ভুলেই গিয়েছে অনেকে। অনেক পড়ুয়ার ক্ষেত্রেই অঙ্ক শেখার এক ভয়ঙ্কর ভীতিও তৈরি হচ্ছে স্কুলে না যেতে যেতে।

দুই, দারিদ্র দূরীকরণে শিক্ষা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র। যে পড়ুয়ারা স্কুলে যেতে পারছে না তারা এই দারিদ্রের চক্রব্যুহ থেকে না তো নিজেরা আর বেরা হতে পারবে , না তো তাদের আগামী প্রজন্ম বার হতে পারবে।

তিন, একটা গোটা প্রজন্মের শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে স্কুল বন্ধ থাকাটা। এটা মানাই যায় না যে বার খোলা, রেস্তরাঁ খোলা, জিম খোলা, কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। বাচ্চাদের এক্ষুণি স্কুলে পাঠানো উচিত।

একই মত, শহরের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদেরও। স্কুল খোলা নিয়ে অ্যাসসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’র সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা জানিয়েছেন, “প্রায় দু’বছর ধরে স্কুল কলেজ বন্ধ। আমরা দেখেছি, শিশুরা করোনার একের পর এক ঢেউ কত সুন্দরভাবে নিজেদের ইমিউনিটি ক্ষমতা দ্বারা পার করেছে। আশঙ্কা করা হয়েছিল, তৃতীয় ঢেউ শিশুদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে, সেই মত হাজার হাজার কোটি খরচ করে তৈরি রাখা হয়েছিল যাবতীয় চিকিৎসা পরিকাঠামো, বাস্তবে দেখা গেল,শিশুদের নিজস্ব ইমিউনিটি তাদের ওপর সেভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি করোনা তৃতীয় ঢেউ, এবার অবিলম্বে স্কুল কলেজ খোলার ব্যপারে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেই সঙ্গে তিনি বলেন , দীর্ঘদিন স্কুলে না যাওয়ার কারণে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য অনেকাংশে ব্যাহত হচ্ছে, শিশুদের মধ্যে স্কুল না যাওয়াটা একটা বদ অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে, যা আগামী দিনের পক্ষে ভয়াবহ”।

অন্যদিকে বিশিষ্ট চিকিৎসক পুন্যব্রত গুঁই জানাচ্ছেন, “আমরা স্কুল কলেজ খোলার পক্ষে, সরকারকে এব্যাপারে আমাদের তরফে একাধিকবার অনুরোধ জানানো হয়েছে, এমনিতেই রাজ্যের একটা বড় অংশের পড়ুয়া (১৫-১৮) টিকা পেয়েছে। ছোটদের ক্ষেত্রে করোনার প্রকোপ সেভাবে মারাত্মক নয়।সরকারকে স্কুল খোলার একটা প্ল্যান করতে হবে প্রয়োজনে একটা কমিটি গঠন করে ধাপে ধাপে স্কুল খোলার ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। সবটাই করতে হবে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে। না হলে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা আরও তলানিতে ঠেকবে”।

বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রনীল চৌধুরীর সাফ কথা, স্কুল কলেজ বন্ধ রেখে সংক্রমণ কোন ভাবেই আটকানো যাবেনা। আমি ধরে নিচ্ছি শিশুরা স্কুল কলেজ থেকে সংক্রমিত হতে পারে এই আশঙ্কায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ রাখা হয়েছে। এই দু’ বছরে কী শিশুরা বাড়ির বাইরে বেরোয় নি? কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেনি? ট্রেনে বাসে চাপেনি? সবটাই যখন হচ্ছে তখন স্কুল খুলতে সমস্যা কোথায়! সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, শিশুরা বাইরে যদি ধরেও নেওয়া যায় সেভাবে যায়নি, তাও বাড়ির বড়দের থেকে তাদের সংক্রমণের একটা চান্স থেকেই যাচ্ছে। তাও দেখা যাচ্ছে শিশুরা সেভাবে ওমিক্রন বা করোনার অন্যান্য প্রজাতি দ্বারা সেভাবে গুরুতর সংক্রমিত হচ্ছে না। তাদের সংক্রমণ খুব মৃদু। সেক্ষেত্রে স্কুল কলেজ খোলা রাখা পাশাপাশি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিকাঠামো প্রস্তুত রাখা ভীষণ ভাবে দরকার। দু’ বছরে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের যে ক্ষতি হয়েছে তা এক কথায় অপরিসীম, আর ক্ষতি করা বোধ হয় উচিত হবে না। স্কুল-কলেজ খুলেছে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে। তাই ভবিষ্যৎ নাগরিকদের স্বার্থেই স্কুল খুলতে হবে। শুরু করতে হবে পঠন-পাঠন”।

এদিকে স্কুল খোলার পক্ষেই মত দিলেন অভিভাবকরাও। তাদের যুক্তি, রাজ্যে যখন সবকিছুই খোলা রয়েছে তখন স্কুল বন্ধ রেখে কী লাভ? অভিভাবকদের তরফে সুদেষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “ছোটদের জীবন থেকে দুটি মূল্যবান বছর চলে গিয়েছে। তারা বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে পারছে না। খেলাধুলা প্রায় বন্ধ। এর ফলে মানসিক বিকাশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তাই অতিমারীকে সামনে রেখে স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার কোনও প্রশ্ন নেই”।

School and college should reopen expert view
Advertisment