প্রায় পাঁচ মাস পরে বোনের বিয়ের জন্য বাড়ি ফিরছিলেন চেন্নাইতে পাইপ লাইনের কাজে কর্মরত পরিযায়ী শ্রমিক কৃষ্ণ রবিদাস। কিন্তু নিয়তির করুন পরিহাস! আর তাঁর বাড়ি ফেরা হলো না। গত শুক্রবার ওডিশার বালেশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে কৃষ্ণ রবি দাসের।
মাত্র ২৩ বছর বয়সে দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিতে হল কৃষ্ণ দাসকে। জানা গিয়েছে, কৃষ্ণ রবি দাসের বাড়ি মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানার মালিওর-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের পিপুলতলা গ্রামে। কৃষ্ণরা চার ভাই ও দুই বোন। কৃষ্ণ ছিলেন বাড়ির ছোট ছেলে। বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধ বাবা হেমন্ত রবিদাস ও মা যশোদা রবিদাস। ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই ঘন-ঘন জ্ঞান হারাচ্ছেন মা যশোদা রবিদাস। কান্নায় ভেঙে পড়েছে পরিবার-পরিজনেরা। মৃত কৃষ্ণ রবিদাসের মা যশোদা রবিদাস জানান, ট্রেন দুর্ঘটনার পর তিনদিন ধরে কৃষ্ণের কোন হদিশ পাওয়া যাচ্ছিল না।
আরও পড়ুন- ‘বিমানে বোমা’, যাত্রীর চিৎকারে হুলস্থূল কলকাতা বিমানবন্দরে!
সরকারি হেল্পলাইনে ফোন করেও কোন খোঁজ মিলছিল না। অবশেষে সোমবার সরকারি সূত্রে খবর পেয়ে কৃষ্ণ'র দাদা অশোক রবিদাস ওডিশার ভুবনেশ্বর হাসপাতালের মর্গে ভাইয়ের মুণ্ডহীন দেহ শনাক্ত করেন। জামা, প্যান্ট, বেল্ট এবং পকেটে থাকা আধার কার্ড দেখে ভাইকে চিনতে পারেন দাদা। মৃতের বাবা হেমন্ত রবিদাস জানান, আগামী ১২ জুন তাঁর ছোট মেয়ের বিয়ে রয়েছে। বোনের বিয়েতে অংশগ্রহণ করার জন্য কৃষ্ণ বাড়ি ফিরছিলেন। ইতিমধ্যে এই ট্রেন দুর্ঘটনায় কেড়ে নিল তাঁর ছেলের প্রাণ।
আরও পড়ুন- ‘বউমার ডাক পড়েছে, ঘর সংসার এবার জেলে’, মমতাকে মারকাটারি কটাক্ষ দিলীপের
গত শুক্রবার ওডিশার বালেশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল। করমণ্ডল এক্সপ্রেস এবং হামসফর এক্সপ্রেস-এর বগি গুলির মধ্যে একে অপরের ধাক্কায় তিনশোর কাছাকাছি মানুষের মৃত্যু হয়। হামসফর এক্সপ্রেসের জেনারেল কম্পার্টমেন্টের যাত্রী ছিলেন কৃষ্ণ। তিনি চেন্নাই থেকে হাওড়া ফিরছিলেন।
আরও পড়ুন- করমণ্ডল দুর্ঘটনায় নিহত তিন ভাই, পরিবারের সঙ্গে দেখা করলেন রাজ্যপাল, পাশে থাকার আশ্বাস
ট্রেনে ওঠার আগে বাড়িতে ফোন করেছিলেন কৃষ্ণ। সেই শেষ কথা। তারপর আর বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা হয়নি। এদিকে ট্রেন দুর্ঘটনার খবর আসার পর থেকেই কৃষ্ণের খোঁজে বারবার ফোন করছিলেন তাঁর বাড়ির লোকেরা। কিন্তু কোনও খবর মিলছিল না। তিন দিন কেটে যাওয়ার পর সোমবার ওডিশার ভুবনেশ্বর হাসপাতালের মর্গ থেকে দাদা অশোক ভাইয়ের দেহ শনাক্ত করেন। মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সে কৃষ্ণের দেহ গ্রামের বাড়িতে ফিরবে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।
গ্রামের ছেলের মৃত্যুর সংবাদ এলাকায় পৌঁছাতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকা জুড়ে। খবর পেয়ে এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী তজমুল হোসেন কৃষ্ণের বাড়িতে গিয়ে সব রকম সরকারি সাহায্যের আশ্বাস দেন।