Advertisment

'বগটুইয়ে ৮ জনকে কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন', চাঞ্চল্যকর দাবি নিহতের পরিবারের

জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকে নিহত ভাদু শেখের 'তোলাবাজি' নিয়ে একাধিক অভিযোগ জানিয়েও সুরাহা মেলেনি বলে দাবি এক তৃণমূল নেতার।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Family members of the deceased have says that 8 persons be hacked to death and then burn in Bogtui of Rampurhat

'গণহত্যা' নিয়ে চাঞ্চল্যকর দাবি নিহতদের পরিবারের সদস্যদের। ছবি- আশিস মণ্ডল

রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে আটজনের মৃত্যু নিয়ে চাঞ্চল্যকর দাবি নিহতদের আত্মীয়দের। তাঁদের অভিযোগ, প্রথমে কুপিয়ে খুন করে তারপর পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের। নিহত ৮ জনের মধ্যে ৬ জন মহিলা এবং ২ জন শিশু রয়েছে। দুই শিশুকেও একইভাবে কুপিয়ে খুন করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি।

Advertisment

রামপুরহাটের বগটুই মোড়ে তৃণমূলের উপপ্রধান ভাদু শেখ নিহত হওয়ার পর কাছেই গ্রামের একের পর এক বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। যদিও তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এই 'হত্যাকাণ্ড' নিয়ে বলেছিলেন, 'টিভি বা গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে আগুন লেগেছিল'। কিন্তু সেই বক্তব্য খারিজ করে দিলেন নিহত মিনা বিবির ছেলে ভাসান শেখ।

ভাসান শেখ রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তিনি পাশেই পশ্চিম পাড়ায় পিসির বাড়িতে থাকেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর মা মিনা বিবি'কে প্রথমে কুড়ুল দিয়ে ঘাড়ে মাথায় এবং পেটে কোপ মারা হয়েছে। তারপর পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার সাক্ষী রয়েছেন তাঁর ভাইপো এবং এক ভাগ্নিও। ওই বাড়িতে ঢোকার আগে দুষ্কৃতীরা বোমা মারে। সেই বোমার শব্দে ভাইপো এবং ভাগ্নি দৌড়ে ঘর থেকে পালিয়ে যায়। বাথরুমের পাশে ঝোপের আড়ালে অন্ধকারে লুকিয়ে ছিলেন তাঁরা। তাঁরাই দুষ্কৃতীদের তাঁর মাকে কুড়ুল দিয়ে একের পর এক কোপ মারতে দেখেছেন। 

একই অভিযোগ করেছেন বড়শাল পঞ্চায়েতের কামাখ্যা গ্রামের তৃণমূল সদস্য নিউটন শেখও। তাঁর অভিযোগ, প্রত্যেককে কুড়ুল দিয়ে নৃশংসভাবে কোপানো হয়েছে, তারপর পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের দাবি, সিবিআই তদন্ত হলে সব জানা যাবে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে পশ্চিমপাড়ার আপাং শেখ, নূর মহাম্মদ এবং লালন, উঠছে এমনই অভিযোগ। এই লালনই নৃশংস এই হত্যালীলার মূল মাথা বলে লিটন শেখের অভিযোগ। তিনি বলেন, ''লালন শেখ এখন উত্তর ২৪ পরগনায় এক পীর সাহেবের বাড়িতে রয়েছে। সেখান থেকে সে এখনও খুনের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।''

আরও পড়ুন- ‘আশা করি পাপীরা শাস্তি পাবে’, রামপুরহাট ‘গণহত্যা’ নিয়ে সরব প্রধানমন্ত্রী

নিউটন শেখের আরও অভিযোগ, ভাদু শেখকে খুন করার পিছনে মূল কারণ হচ্ছে তার তোলাবাজি। জাতীয় সড়কে যে সমস্ত গাড়ি যায় সেই গাড়ি থামিয়ে তোলাবাজি করতো ভাদু। এছাড়াও জমির দখলদারি পাইয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন লোকের থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিত ভাদু। প্রতিবাদ করায় তাঁদের হুমকিও দেওয়া হতো। তিনি জানান, এর আগে একাধিকবার জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকে এই অভিযোগ জানিয়ে ছিলেন তিনি।

এমনকী অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে তিনি নিজে চারবার গিয়ে ভাদু শেখের তোলাবাজির কথা জানিয়েছিলেন বলে জানান নিউটন। এমনকী যে কোনও মুহূর্তে ভাদু শেখ খুন হয়ে যেতে পারেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তৃণমূল নেতা নিউটন। একই অভিযোগ তিনি নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীকে এবং আইসি এবং এসডিপিও'কেও জানিয়ে ছিলেন বলে দাবি করেচেন এই তৃণমূল নেতা। কিন্তু তাঁদের কথা কেউ শোনেনি বলে দাবি নিউটন শেখের। 

আরও পড়ুন- নমুনা নেবেন CFSL-এর অফিসাররা, বগটুই-কাণ্ডে রিপোর্ট পেশে রাজ্যকে সময় বেঁধে দিল হাইকোর্ট

প্রশ্ন উঠেছে, বগটুই গ্রামে একই বাড়িতে কী করে এত জন লোক জড়ো হলেন, যাদের এক সঙ্গে পুড়িয়ে মারা হল। এব্যাপারে লিটন শেখ জানান, সেদিন ভাদু শেখ খুন হওয়ার পর এলাকার লোকজনকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা তা না গিয়ে ওই বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কারণ বাড়িটির চারিদিকে পাঁচিল ছিল, মজবুত গেট ছিল। তাই তাঁরা বাড়িটিকে নিরাপদ ভেবে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু দুষ্কৃতীরা গ্রিল ভেঙ্গে বাড়ির ভিতরে ঢুকে এক একজনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করে তারপর পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল।

tmc police Murder Rampurhat Death
Advertisment