বছর দেড়েক আগেই ফারাক্কা ব্যারেজের ওপরে দ্বিতীয় সেতু নির্মাণের কাজ চলাকালীনই ভেঙে পড়ল মালদহ-ফরাক্কা সংযোগকারী নির্মীয়মাণ সেতুর একটি অংশ। এই দুর্ঘটনায় এক ইঞ্জিনিয়র সহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এবার এই মৃত্যুকে ঘিরেই উঠল প্রশ্ন! দ্বিতীয় ফারাক্কা সেতু তৈরিতে নকশাই কোন গোলমাল ছিল না তো! মৃত ইঞ্জিনিয়ার শচীন প্রতাপের (৩০) বাবা উদয়বীর সিং-এর এমন মন্তব্যে তৈরি হয়েছে নয়া জল্পনার। রবিবার রাতের এই ঘটনার পর সময় পেরিয়েছে প্রায় কুড়ি ঘন্টা। কিন্তু সদ্য ছেলে হারানো শোকার্ত বাবার চোখে ঘুম নেই। সোমবার সকাল থেকেই মালদা মেডিকেল কলেজের মর্গে ছেলের মৃতদেহের ময়নাতদন্তের অপেক্ষার ঠায় দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলে গিয়েছেন বাবা উদয়বীর সিং, যিনি নিজেও দ্বিতীয় ফারাক্কা সেতু নির্মাণের কাজে দায়িত্বে ছিলেন।
গোটা ঘটনাটিতে কার্যত শোকস্তব্ধ উদয়বীরবাবু বলেন, "যে লোহার গার্ডার পড়ে গিয়ে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেল তার নকশাটা নিয়ে আমাদের প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল। কর্তৃপক্ষের নজরেও বিষয়টি আনা হয়েছিল। যে কারণে তিন মাস কাজ বন্ধ ছিল। যে ডিজাইনার এই সেতুর নকশা তৈরি করেছিলেন, তিনি বলেছিলেন নকশার যদি সন্দেহ থাকে তাহলে তোমরা ঠিক করে নাও। কিন্তু অনুমোদিত নকশা কোনও লিখিত অনুমোদন ছাড়াই আমরা কি করে পরিবর্তন করবো। তাই আমরা ডিজাইনারকে বলেছিলাম তাহলে লিখিত দিন। কিন্তু কোনও চিঠি আসেনি। ফলে কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয়।"
তাহলে কি এই নকশার ভুলেই এত বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেল? এ প্রশ্নের উত্তরে কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর উদয়বীর সিং বলেন , "সেটা কি করে বলবো। কুড়ি বছর ধরে এই সংস্থায় কাজ করছি। কিছু তো অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেই কারণেই কথাটা বলেছিলাম। এখন বিষয়টি তদন্ত করে দেখলেই পরিষ্কার হবে সবকিছুই। কিন্তু যা হওয়ার তা হয়ে গেল। আমার ছেলে শচীন তো চলে গেল।" প্রসঙ্গত এই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রকল্পের ইনচার্জ কে. এস. শ্রীনিবাসন রাও (৪৮)। তাঁর বাড়ি অন্ধ্রপ্রদেশের রাজমনডুরি এলাকায়।
আরও পড়ুন: তৃণমূল সদস্যর ছেলেকে অপহরণ করলেন দলেরই বিধায়ক? চাঞ্চল্য মুর্শিদাবাদে
উল্লেখ্য, বছর দেড়েক আগেই ফারাক্কা ব্যারেজের ওপরে দ্বিতীয় সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তার মধ্যেই এই বিপত্তি। মালদহের বৈষ্ণবনগর এলাকায় সেতুর দু’টি স্তম্ভ তৈরি হয়েছে। সেই স্তম্ভের উপরে যে অংশটি সেতুটিকে ধরে রাখবে, এ দিন বিকেল থেকে সেই অংশের কাজ চলছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আচমকা প্রথম ও দ্বিতীয় স্তম্ভের উপরের অংশটি ভেঙে পড়ে। তার উপরে থাকা ক্রেনটিও ভেঙে পড়ে। নির্মীয়মাণ সেতুতে বহু শ্রমিক রাতেও কাজ করছিলেন বলে জানা গিয়েছে। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আরও শ্রমিকের আটকে পড়েছেন কিনা তা দেখতে রাতেই শুরু হয় উদ্ধার কাজ। যান ঘটনাস্থলে মালদহ এবং মুর্শিদাবাদ জেলার পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা। জানা গিয়েছে, পুরো কাজটিই ফারাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে একটি ঠিকাদারি সংস্থার করছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন