'যেই জিতুক ট্রফি ঘরেই থাকবে', ব্যাপারটা অনেকটা যেন সেরকমই! পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্ব ঘিরে এখন রাজ্যের কোনায়-কোনায় টান টান উত্তেজনা। তবে সেই উত্তেজনার আঁচ অবশ্য পড়েনি আরামবাগের সালেপুর নন্দীপাড়ায়। বরং চানক পরিবার এখন বেশ রিলাক্সড! 'খেলায় হার-জিত যারই হোক, ট্রফি ঘরেই থাকবে।' ভাবটা যেন এমনই।
কিন্তু কেন এমন ভাবনা। কারণ, আসন্ন পঞ্চাযেন নির্বাচনে হুগলির আরামবাগের সালেপুর ১ নং পঞ্চায়েতের ১৯৪ নম্বর বুথে একই পরিবার থেকে তিন সদস্যকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছে যুযুধান তিন রাজনৈতিক দল। এই গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে পরস্পর পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন বাবা, কাকা ও ছেলে। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই আসনে তারাই বরাবর বাজিমাত করে এসেছে। তবে ২০১৮-এর পঞ্চায়েত ভোটে এই আসনে বিরোধী কোনও দল মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি। স্বাভাবিকভাবেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় সেবার জয়ী হয় তৃণমূল।
তবে জোড়াফুলের সেই জয়ের 'এফেক্ট' পড়েছিল একুশের বিধানসভা নির্বাচনে। বিজেপি প্রচুর ভোটে এই বুথ থেকেই লিড নেয়। আরামবাগের চারটি বিধানসভায় পর্যদুস্ত হয় শাসকদল। তাই এবারের পঞ্চায়েত ভোটে এই আসনটিতে তৃণমূল ব্যাকফুটে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাই এই আসনটি ধরে রাখতে এখন তাঁদের ভরসা বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা সুফল চানকের উপর। আশির উপর বয়স তাঁর। প্রফুল্ল সেনের সঙ্গে পার্টি করেছেন।
২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে তিনিই এই বুথ থেকে তৃণমূলের টিকিটে সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে ২০১৮-এর ভোটে দল তাঁকে প্রার্থী। এবার অবশ্য ফের তিনিই প্রার্থী! নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তাঁর নিজের ছেলে প্রফুল্ল চানক। প্রতিদ্বন্দ্বীতায় রয়েছেন তাঁরই ভাই সুকুমার চানকও। একই বাড়িতে থাকেন তাঁরা। কারও সাথে কারও মনোমালিন্য নেই। যদিও রাজনৈতিক আদর্শগত ফারাক আছে।
আরামবাগের সবচেয়ে প্রবীণ প্রার্থী তৃণমূলের সুফল চানক বলেন, 'আমি যবে থেকে ভোটার তবে থেকে কংগ্রেসের সাথে। তৃণমূল তৈরির পর থেকে তৃণমূলে। প্রচার যা করার করছি। আমি তো আর এ ডাল ও ডাল করিনি। জন্মলগ্ন থেকেই এই দলে। মানুষ যেটা ভালো বুঝবে তাই করবে। ভোটের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কোনও প্রভাব নেই।'
আরও পড়ুন- চাইলেই দোরগোড়ায় গঙ্গাসাগরের ‘গঙ্গা জল’, পুণ্যার্জনের অভূতপূর্ব সুযোগ মুঠোয়
বাবা সুফল চানকের বিরুদ্ধে ভোট ময়দানে লড়ছেন ছেলে প্রফুল্ল চানক। তিনি ওই বুথেরই বিজেপি প্রার্থী। তাঁর বক্তব্য, 'আমি মানুষের কাছে বলছি, গরিবের পাওনা গরিবের হাতেই দিতে চাই। বাংলা থেকে চোরেদের দলকে হঠাতে চাই। তার জন্য বিজেপিকে ভোট দিন। এরপর জনগণ যেটা ভালো বুঝবেন তাই করবেন। আমি আমার প্রচার করছি। বাকিটা জনগণের হাতে। জনগণ যাকে মনে করবেন তাকে বসাবেন। তবে আমি প্রচারে গিয়ে এও বলছি এতদিন তো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে এসেছে শাসক দল।'
তিনি আরও বলেন, 'গতবার মানুষজন ভোট দিতে পারেনি। এবার ভোট দিয়ে সেই প্রতিশোধ নিন। আমি ৯০-এর দশক থেকে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত। বাবা তৃণমূলে দাঁড়িয়েছেন বা কাকা সিপিএম থেকে দাঁড়িয়েছেন বলে আমাদের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ নেই। আমরা এক বাড়িতেই থাকি। একসঙ্গে থাকি। আমাদের নিজেদের মধ্যে কোনও অশান্তি নেই। তবে রাজনৈতিক ভাবে আমাদের মতাদর্শ ভিন্ন।'
আরও পড়ুন- তাঁকে প্রচারে চেয়েছিল তৃণমূল, কিন্তু পিছটান সায়নীর! বুধে ইডি হাজিরার আগে জল্পনা
এদিকে, এই বুথে সিপিএম প্রার্থী করেছে সুফলবাবুর ভাই তথা প্রফুল্লর কাকা সুকুমার চানককে। তাঁর কথায়, '১৩ বছর সন্ত্রাস করে প্রার্থী দিতে দেয়নি। আমরা বিগত ১৩ বছর মুখ খুলতে পারিনি। গতবারও নমিনেশন ফাইল করতে পারিনি। এবারে অবশ্য নমিনেশন ফাইল করতে কোনও সমস্যা হয়নি। আমরা চাই তৃণমূলকে হারিয়ে এই লাগামহীন সন্ত্রাস, দুর্নীতি বন্ধ করতে। এই আসনটি ওবিসি সংরক্ষিত। তাই সব দলই আমাদের পরিবার থেকেই প্রার্থী করেছে।'