বোলপুর ডাকবাংলো মাঠে রাজ্য সরকার আয়োজিত বিকল্প পৌষমেলায় অতিথি তালিকায় ঠাঁই পাননি বিশ্বভারতীয় উপাচার্য। এরপরই তোপ দেগে বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেছিলেন, 'দুর্নীতিপরায়ণদের সাথে এক মঞ্চে বসতে হবে না, এটাই স্বস্তি।' এবার উপাচার্যকে পাল্টা দিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বললেন, 'উপাচার্যকে যারা নিয়োগ করেছেন তাঁরা গুজরাট দাঙ্গার কারনে জেলে ছিলেন। পরে ক্লিনচিট পেয়েছেন৷ যতক্ষণ না কেউ দোষী সাব্যস্ত হন, ততক্ষণ কেউ অপরাধী নয়৷ কেন রবীন্দ্র আদর্শ সরিয়ে আরএসএস-এর আদর্শ নিয়ে নিয়ে আসছেন উনি৷ ওনার উপাচার্য থাকা উচিত নয়৷'
শুক্রবার বোলপুর মাঠে শুরু হয়েছে রাজ্য সরকার আয়োজিত পৌষ মেলা। ৬ দিন চলবে এই বিকল্প পৌষ মেলা৷ মেলার সূচনা করেন, রাজ্যের মন্ত্রী পুর ও নগরোন্নয় ফিরহাদ হাকিম। উপস্থিত ছিলেন, ক্ষুদ্র-মাঝারি ও কুটির শিল্প মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা, ঠাকুর পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর, বিশ্বভারতী প্রাক্তন উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত ও সবুজকলি সেন, পরিবেশ কর্মী সুভাষ দত্ত, বীরভূম জেলাশাসক বিধান রায়, জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী সহ অন্যান্য বিধায়করা৷
উদ্বোধনী মঞ্চেই পৌষ মেলার স্মৃতিচারণায় ডুব দিয়েছিলেন কলকাতার মেয়র। তাঁর আক্ষেপ, 'বাবার বন্ধু ছিলেন আশ্রমিক অধ্যাপক সৌমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। বাবার সঙ্গে কতবার তাঁর বাড়ি এসেছি। মেলায় ঘুরেছি। ভাবতাম, এইখানেই এই গাছতলায় তো কবিগুরু বসেছেন। এই পথ দিয়ে তো হেঁটেছেন। কবিগুরু বাঙালি তথা দেশকে বহির্বিশ্বের কাছে পরিচিত করেছেন। আমাদের আবেগ বিশ্বভারতী। কবির পদচারণায় তা আমাদের তীর্থক্ষেত্র। তিনি আর্য, অনার্য, হিন্দু মুসলমান সকলকে আশ্রয় দিয়েছেন। বঙ্গভঙ্গের সময় সবাইকে একতাবদ্ধ করেছেন। কয়েকবছর ধরে বিশ্বভারতীতে সেই ভাবধারার অভাব চোখে ধরা পড়ছে।'
বিশ্বভারতীর উদ্যোগ নিয়ে পৌষমেলা না করার জন্য উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর প্রতি একরাশ ক্ষোভ উগ্রে দেন মঞ্চে উপস্থিত সকলেই। ঠাকুর পরিবারের সদস্য প্রবীন আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, 'পৌষমেলা শুধু নয়, একে একে সব বন্ধ হয়ে যাবে। যে ভাবে চলছে সেভাবে চলতে পারে না।'
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশ্বভারতীর প্রাক্তন দুই উপাচার্যের মধ্যে অন্যতম সুশান্ত দত্তগুপ্ত বর্তমান উপাচার্যকে কটাক্ষ করে বরবীন্দ্রনাথের গানে বলেন, 'তোমরা যা বলো তাই বলো আমার লাগে না মনে।' অপর প্রাক্তন উপাচার্য সবুজকলি সেন বলেন, 'আমার আশঙ্কা বিশ্বভারতীতে আর মনে হয় না পৌষমেলা, বসন্তোৎসব হবে না৷ উপাচার্যের কোন বক্তব্যে প্রসঙ্গে কিছু বলতে আমার রুচিতে বাঁধে।'
অন্যদিকে, ঐতিহ্য ও প্রথা মেনে বিশ্বভারতীতে এ দিন শুরু হয় পৌষ উৎসব। ভোর পাঁচটায় বৈতালিকের মাধ্যমে পৌষ উৎসবের শুভ সূচনা হয়। পরে সকাল সাতটায় ছাতিমতলায ব্রহ্ম উপাসনা, বৈদিক মন্ত্রপাঠ, রবীন্দ্রসঙ্গীতের মধ্যদিয়ে শুরু হল ৩ দিনের পৌষ উৎসবের।