Advertisment

নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে ওঠা-বসা, এলাকায় বিরাট দাপট, পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামীর কীর্তিতে আতঙ্ক

পারিবারিক বিবাদ মেটানোর বদলে বৃদ্ধা ও তাঁর ছেলেকে মারধরের অভিযোগ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
firoj shaikh east burdwan berugram pancahayat saidul mollah tmc

শাসক দলের হেভিওয়েটদের সঙ্গে ফিরোজ। ছবি- প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়

তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা, সাংসদ, মন্ত্রীদের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা। এলাকায় বিরাট রমরমা। এহেন তৃণমূল নেতা ফিরোজ শেখের স্ত্রী বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। এলাকায় প্রশাসন থাকলেও কার্যত ফিরোজই শেষ কথা। সম্প্রতি তা টের পেয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার শম্ভুপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ সাইদুল মোল্লা ও তাঁর বৃদ্ধা মা। পারিবারিক বিবাদের জেরে ফিরোজ সাইদুল ও তাঁর মাকে মারধর করেছে, বাড়ি ছাড়া করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বলে অভিযোগ।

Advertisment

জামালপুর ব্লকের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম শম্ভুপুর ও চক্ষণজাদি। শম্ভুপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ সাইদুল মোল্লা পুলিশকে জানিয়েছেন,বেশ কয়েক বছর আগে নিজের রোজগারের অর্থে তিনি জামালপুরের শম্ভুপুর গ্রামে জমি কিনে বাড়ি তৈরি করেন। বৃদ্ধা মা, সৎ বাবা, স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে তিনি নিজের বাড়িতেই থাকেন। গত ১৬ জুলাই তাঁর মা লাখি বেগমের সঙ্গে সৎ বাবার ঝগড়া হলে বৃদ্ধ ঘর ছাড়েন। বাড়ির সবাই জানতেন রাগ কমে গেলেই সৎ বাবা ফের বড়িতে ফিরে আসবেন।

সাইদুল মোল্লার দাবি, তাঁর মা ও সৎ বাবার ঝগড়া নিয়ে যে এলাকার তৃণমূলের নেতা ও কর্মীরা খবরদারি করতে নামবে এটা কল্পনার অতীত ছিল। সাইদুলের সৎ বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ বাড়ি ফেরেন। সঙ্গে ছিলেন চক্ষণজাদি নিবাসী তৃণমূল নেতা ফিরোজ শেখ ও জিয়ারুল মল্লিক।

অভিযোগ এরপরই ফিরোজের রক্তচক্ষু টের পাওয়া যায়। সাইদুল জানান, ফিরোজ শুরুতেই বলে দেন যে তাঁরা এলাকার তৃণমূল নেতা। তাঁদের কথাই এলাকায় শেষ কথা। শম্ভুপুর গ্রামে ফিরোজদের থাকার আধিকার নেই বলেও জানিয়ে দেন। এরপরই শুরু হয় মারধর। জিয়ারুল ও তাদের সঙ্গে থাকা পাঁচ জন প্রথমে সাইদুলকে মারতে শুরু করে। পরে লাঠি ও দা দিয়ে নির্মম ভাবে কোপাতে থাকে। রক্তাত অবস্থায় সাইদুল মাটিতে পড়ে গেলে তাঁর বৃদ্ধা মা তাঁকে বাঁচাতে যান। সেও তৃণমূল নেতা ফিরোজ ও তার দলবলের মারধোরের হাত থেকে রক্ষা পাননি।

আরও পড়ুন- বিধায়কদের রাখতে ৩৬টি ঘর ভাড়া-এলাহি খানাপিনা, বিজেপির ‘রিসর্ট পলিটিক্সে’ খরচ কত জানেন?

সাইদুল বলেন , 'তৃণমূলের ওই নেতাদের ভয়ে গ্রামের কেউ আমাকে রক্ষা করতে আসেনি। তাই প্রাণে বাঁচতে কোনও রকমে আমি বৃদ্ধা মাকে সঙ্গে নিয়ে গ্রাম থেকে পালিয়ে জামালপুর ব্লক হাসপাতালে পৌছাই। সেখানে দু’জন চিকিৎসা করেন। পরে জামালপুর থানায় অভিযোগ জানিয়েছি।' এদিন জেলা পুলিশ সুপারের কাছেও চক্ষণজাদির তৃণমূল নেতাদের সন্ত্রাসের কথা জানিয়েছেন সাইদুল। তাঁর দাবি, 'ফিরোজ ও তার দলবল আমাকে ও মাকে প্রাণে মেরে দেবে বলে হুমকি দিয়েগেছে। ফলে নিজের বাড়িতে ঢুকতে সাহস পাচ্ছি না। আত্মীয়র বাড়িতে রয়েছি।'

এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, ফিরোজ দলীয় ভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্লকের কোনও নেতা নন। তাঁর স্ত্রী বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। সেই সুবাদেই ফিরোজের এত বাড়বাড়ন্ত। জামালপুর নিবাসী জেলা তৃণমূল কংগ্রেসেরসম্পাদক প্রদীপ পাল বলেন , 'ফিরোজ শেখ দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনও নেতা নয়, পঞ্চায়েত সদস্যও নয়। দলের কয়েকজন মন্ত্রী,সাংসদ ও বিধায়কের সঙ্গে ছবি তুলে ফিরোজ নিজেকে বড় তৃণমূল নেতা ভাবছে। এলাকার মানুষকে ধমকাচ্ছে, চমকাচ্ছে। এটা ঠিক নয়। ওর আরও অনেক কীর্তি আমাদের কানে এসেছে। সেইসব দলের নেতৃত্বকেও জানানো হয়েছে। পারিবারিক অশান্তির বিচার করতে যাওয়া নিয়ে দলের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তার পরেও দলের নির্দেশ অমান্য করে ফিরোজ শম্ভুপুরে যে ঘটনা ঘটিয়েছে তার দায় দলের নয়। পুলিশ ও প্রশাসন ফিরোজ ও তার দলবলের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিলে দলের কিছু যায় আসে না।'

তবে অভিযোগকারীকে স্মরণ করতে পারছেন না ফিরোজ শেখ। ফোনে তিনি বলেছেন, 'যে ব্যক্তি অভিযোগ করছেন তাঁকে আমি চিনি না। এমন কোনও ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই।'

এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ ) সুপ্রভাত চক্রবর্তী বলেন, 'অভিযোগ পেয়েই পুলিশ মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। অভিযুক্তদের খোঁজ চলানো হচ্ছে।'

East Burdwan burdwan West Bengal tmc
Advertisment