Advertisment

ময়নাগুড়ির চা বাগানে নজিরবিহীনভাবে চা-কমলার যৌথ চাষ

১৫ বিঘের চা বাগানে শেড ট্রি হিসেবে ৬৫০ টি কমলা গাছ। ফলেছে হাজারে হাজারে কমলা। চা বাগানে কমলা চাষকে ঘিরে জোর হৈচৈ ক্ষুদ্র চা চাষীদের মধ্যে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

নিজের বাগানে মনোজ রায়

সমতলে প্রথম বানিজ্যিকভাবে সফল হলো চা বাগানে কমলা চাষ। পাওয়া গেল অফ সিজনে বিকল্প আয়ের নতুন দিশা। চা আর কমলা মিলেমিশে একাকার ময়নাগুড়িতে। চা বাগানে কমলা চাষ করে কৃষিক্ষেত্রে অনন্য নজির গড়লেন মনোজ রায়, ময়নাগুড়ির এক প্রগতিশীল চা চাষী। সমতলে কমলা চাষ কৃষিক্ষেত্রের পাশাপাশি পর্যটন শিল্পেও সুফল আনতে পারে বলে দাবী মনোজবাবুর।

Advertisment

১৫ বিঘের চা বাগানে শেড ট্রি (ছায়া দেয় এমন গাছ, যা চা চাষের পক্ষে অত্যন্ত জরুরি) হিসেবে ৬৫০ টি কমলা গাছ। ফলেছে হাজারে হাজারে কমলা। চা বাগানে কমলা চাষকে ঘিরে জোর হৈচৈ ক্ষুদ্র চা চাষীদের মধ্যে। পাহাড়ের দুই অর্থকরি ফসলের সমতলে একসঙ্গে চাষ হতে দেখে তাক লেগে গিয়েছে তাঁদের। খবর চাউর হতেই বাগানে পাইকারদের আনাগোনার পাশাপাশি হাজির ট্যুর অপারেটররাও। একই সাথে চা ও কমলা দেখাতে ইতিমধ্যেই তাঁরা 'ডে ভিসিটের' জন্য পর্যটক আনা শুরু করে দিয়েছেন।

মনোজবাবু জানান, "আমি বরাবর এক্সপেরিমেন্ট করতে ভালোবাসি। তাই চা বাগানের শেড ট্রি হিসেবে প্রথমে লাগানো শিরীষ গাছ কেটে ঘোড়ানিম গাছ লাগিয়েছিলাম। পরে সেই গাছও কেটে নতুন করে তেজপাতা গাছ লাগিয়েছিলাম। বিগত কয়েক বছর ধরে দাম না পেয়ে গাছ কেটে ফেলি। এরপর তিন বছর আগে দেড় লক্ষ টাকা খরচ করে কালিম্পঙয়ের সিটং থেকে কমলার চারা নিয়ে এসে বাগানে লাগাই। পরের বছর থেকেই তাতে অল্প করে কমলা ফলে। এই বছর অভাবনীয় ফলন পাই।"

publive-image এই প্রথম সমতলে একসঙ্গে চা ও কমলার চাষ

আরও পড়ুন: চায় পে চর্চা: তন্দুরি থেকে মোঘলাই, নানা ঘরানার চুমুকে চমক

তিনি আরও বলেন, "নভেম্বর মাসে চা বাগানে লাস্ট ফ্লাশ। এরপর ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু হয় চায়ের লিন পিরিয়ড। এই সময় আর চাপাতা হয় না। ডিসেম্বর শুরুর সাথে সাথে শুরু হয় চা গাছের প্রুনিং বা গাছ ছাঁটার কাজ। এরপর চলে চা গাছ পরিচর্যার কাজ। এই সময় বৃষ্টি হয় না, ফলে স্প্রিঙ্কলার ইরিগেশনের ব্যবস্থা করতে হয়। ফলে মার্চ পর্যন্ত শুধু শ্রমিকদের হাজিরা দিতেই প্রচুর টাকা লাগে। এই সময়ে কমলা চাষ নতুন করে বাড়তি আয়ের পথ দেখাবে।"

ওই বাগানের শ্রমিক জীবন রায় জানান, "আগে ডিসেম্বর মাস পড়তেই আর কাজ থাকত না। দারুণ অভাবের মুখে পড়ত সংসার। গত দু'বছর ধরে এই সময়ে কমলাগাছ দেখাশোনা ছাড়াও অন্যান্য কাজ নতুনভাবে তৈরি হওয়ায় সেই সমস্যা দূর হয়েছে। আমরা এখন সারাবছর কাজ পাচ্ছি। আমরা চাই, এবার সরকার একটু এই চাষের দিকে দৃষ্টি দিক। এই চাষের সুফল প্রচারে আনুক। তবে আরো উপকৃত হবে শ্রমিক ও মালিক উভয় পক্ষই। পাশাপাশি এই এলাকার মানুষ কম দামে কমলা খেতেও পারবেন।"

চা বাগানে কমলা চাষকে স্বাগত জানিয়েছেন ক্ষুদ্র চা চাষীদের সর্বভারতীয় সংগঠন কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (CISTA) সর্বভারতীয় সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী। তাঁর মতে, লেবুগাছের দুটি প্রধান সুফল। "আমরা চা চাষীদের বাগানে ফেনসিং হিসেবে লেবুগাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়ে থাকি। কারণ লেবুগাছে কাঁটা থাকায় গবাদি পশু বাগানে ঢোকে না। ফলে সেই পশু থেকে কোনো পোকামাকড় বাগানে ঢুকতে পারে না। আর লেবুতে ভিটামিন সি থাকায় বাগানে পোকার আক্রমণ কম হয়, ও লেবু বিক্রি করে বাড়তি আয়ও হয়," বলেন তিনি। কিন্তু সভাপতি মহাশয়ও স্বীকার করলেন, শেড ট্রি হিসেবে কমলাগাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত এক নতুন দিগন্ত খুলে দিলো। তিনি বলেন, "এর ফলে লিন পিরিয়ডে একটা নতুন আয়ের পথ হবে। আমরা জলদি এই প্রকল্প আমাদের সভা সমিতির মাধ্যমে প্রোমোট করব।"

north bengal north bengal tourism
Advertisment