তার বাঁশির সুর যেন মন ছুঁয়ে যায়। ছেলেবেলা থেকে বাঁশি বাজানোর শখ! তাঁর বাঁশির সুর মুগ্ধ করেছে দেশের-বিদেশের অসংখ্য শ্রোতাকে। তিনি উত্তরপাড়ার সৌভিক পাল। দেশ-বিদেশে তিনি পরিচিত বাঁশুরিয়া হিসাবেই। কিন্তু তার আরও একটা দিক আছে। যে বাঁশের তৈরি বাঁশি আমরা সাধারণ ভাবে দেখে থাকি সেই বাঁশি দিয়ে তিনি সুর সৃষ্টি করেন না। তিনি পরিবেশ বান্ধব বাঁশিতে সুরের ঝড় তোলেন। বাঁশ কেটে তৈরি বাঁশি একদিন বিপন্ন করবে পরিবেশকে। তাই তিনি নিজের হাতে তৈরি করেছেন পিভিসি পাইপের তৈরি তাক লাগান বাঁশি।
জলের পিভিসি পাইপ দিয়েই নানান ডিজাইনের আকর্ষণীয় বাঁশি তৈরি করেছেন উত্তরপাড়ার সৌভিক। হঠাৎ করে পিভিসি পাইপ দিয়েই বাঁশি তৈরির ভাবনা কীভাবে সেই প্রশ্নে সৌভিক বলেন, ‘এক বান্ধবীর সঙ্গে গঙ্গাবক্ষে বেড়াচ্ছিলাম। ছোট থেকেই আমার বাঁশির প্রতি ভালবাসা সেটা ও জানত। হঠাৎ করেই নৌকার একটি বাঁশ দেখে ও আমাকে প্রশ্ন করে আচ্ছা বাঁশ ছাড়া বাঁশি কী কোন ভাবেই সম্ভব নয়? সেই উত্তরের খোঁজেই আজ পিভিসি পাইপের তৈরি বাঁশি গড়তে পেরেছি আমি”। তিনি আরও বলেন, ‘তার সেই প্রশ্ন সেদিন আমাকে ভাবিয়েছিল। আর ঠিক সেই সময় সৌভাগ্যবশত বাড়িতে জলের লাইনের কাজ হচ্ছিল। বাড়ি এসে চোখের সামনে পিভিসি পাইপ পড়ে থাকতে দেখে ইচ্ছা হয় এটা দিয়েই বাঁশি বানানোর। দীর্ঘ কয়েক বছরের প্রচেষ্টার পর পিভিসি পাইপে সুর আসে। আমার ইচ্ছাপূরণ হয়। সেই সঙ্গে পরিবেশ-বান্ধব বাঁশির ধারণাটাও ধীরে ধীরে সমাজে ছড়িয়ে পড়ে”।
বিষয়টা রীতিমত চ্যালেঞ্জিং ছিল সৌভিকের কাছে। কিন্তু তাতে কোনভাবেই দমে যাওয়ার পাত্র তিনি নন। সব থেকে যেটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল তাঁর কাছে তা হল পিভিসি পাইপের তৈরি বাঁশিতে অবিকল বাঁশের তৈরি বাঁশির মত সুর আনা। দীর্ঘ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শেষমেশ আসে সাফল্য। শিল্পী বলেন, ‘এটা ভাবা দরকার সব বাঁশ থেকে বাঁশি হয় না তার জন্য তালদা বাঁশ প্রয়োজন। একটা বাঁশ গাছ থেকে একটা বা দুটো বাঁশি তৈরি করা যায়। এখন প্রচুর মানুষ বাঁশি বাজাতে ভালবাসেন। এভাবে চলতে থাকলে একটা সময় পরিবেশ থেকে বাঁশ গাছ উধাও হয়ে যাবে’। পিভিসি পাইপ থেকে তৈরি বাঁশির গুনাগুণ তাক লাগাতে বাধ্য।
সৌভিক এই পিভিসি পাইপের তৈরি বাঁশি প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘আমার এই আর আমার এই বাঁশিতে যেমন তাপমাত্রার বৃদ্ধি বা হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে কোন প্রভাব পড়ে না। পাশাপাশি ফাঙ্গাস পড়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। হাত থেকে পড়ে যাক বা জলে ভিজে যাক এই পিভিসি পাইপের তৈরি এই বাঁশি সব সময়ের জন্যই নিরাপদ। এই বাঁশি পরিষ্কার করাও অনেক সহজ’।