Museum: সাড়াজাগানো কর্মকাণ্ডে অভূতপূর্ব নজির! বাংলার সোনালী অতীত ছুঁয়ে দেখতে ভিড় বিদেশিদেরও
Chandernagore College Museum: একদল বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ তাঁদের অভূতপূর্ব দক্ষমতায় এমন অবাক একটি ক্ষেত্র গড়ে তুলেছেন। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন বাংলার সোনালী ইতিহাস সামনে থেকে চাক্ষুস করতে। এমন এক নজিরবিহীন কর্মকাণ্ডের খবর পৌঁছে গিয়েছে বিদেশেও। কলকাতায় পা রেখেই বিদেশি পর্যটকদের একটি বড় অংশও এখন ভিড় জমাচ্ছেন বাংলার এই প্রান্তে। সব মিলিয়ে এ এক বিস্ময় কাণ্ড গড়ে ফেলেছেন একদল বাঙালি।
Chandannagar Museum: এরাজ্যের পর্যটকদের পাশাপাশি এখানে ভিড় বিদেশিদেরও।
Chandernagore College Museum: কলেজে নতুন মিউজিয়াম। স্বাধীনতার লড়াইয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে চন্দননগরবাসীর সংগ্রাম কিংবা যেভাবে এই পুণ্যভূমি একের পর এক বিপ্লবীর জন্ম দিয়েছে তদুপরি তাঁদের কর্মকাণ্ডের ইতিহাস সংরক্ষণ করা রয়েছে এখানে। চন্দননগর কলেজের (Chandernagore College) এই মিউজিয়ামে এখন বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকদের (Tourists) ভিড় বাড়ছে। বলা যেতেই পারে বাংলার পর্যটনের মানচিত্রে এই মিউজিয়াম নতুন একটি পালক যোগ করেছে। আনন্দের বিষয় হল এই যে, এখন বহু বিদেশি পর্যটকও আসছেন এই মিউজিয়াম (Museum) দেখতে। হুগলি নদীর পশ্চিম তীরে অর্ধচন্দ্রাকৃতি আকারে সুন্দর ছিমছাম এক নগরে আষ্ঠেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে ইতিহাস আর বনেদিয়ানার সংমিশ্রণ।
Advertisment
চন্দননগর (Chandannagar) মানে শুধুই ফরাসি উপনিবেশ বা বিখ্যাত জগদ্ধাত্রী পুজো (Jagadhatri Puja) নয়, প্রাচীন এই শহরেই জন্মভূমি ও কর্মভূমি ছিল তৎকালীন পরাধীন ভারতবর্ষের তাবড় তাবড় বিপ্লবীদের। কিন্তু অনেকেরই সোনালী সেই তথ্য অজানা। সেই পুরোনো ইতিহাস বাংলার নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার একটা তাগিদ দীর্ঘদিন ধরে নিজের অন্তরে পুষছিলেন একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। তিনি চন্দননগর কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ ড. দেবাশিস সরকার। বিগত কয়েক বছরের অক্লান্ত-অপরিসীম পরিশ্রমে তিনি বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য নথি, ছবি সংগ্রহ করে কলেজ প্রাঙ্গণে গড়ে তুলেছেন এক অসাধারণ সংগ্রহশালা।
এরাজ্যের পর্যটকদের পাশাপাশি মিউজিয়াম ঘুরে দেখছেন বিদেশিরাও।
Advertisment
এই কাজে তিনি বেশ কিছু পেশাদারি ভাবে দক্ষ মানুষজনকেও পাশে পেয়েছিলেন। কলেজেরই হেরিটেজ বিল্ডিংয়ে কয়েকটি ব্লকের মধ্যে এই অসাধারণ সংগ্রহশালাটি নির্মিত হয়েছে। বৈপ্লবিক থিমের সঙ্গেই একদা ফরাসি উপনিবেশ এই শহরের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের দুর্দান্ত সংরক্ষণ করা হয়েছে। মোট ৫ টি ঘরের মধ্যে আছে চন্দননগরের বিখ্যাত বিপ্লবী কানাইলাল দত্ত (Kanailal Dutta), রাসবিহারী বসু (Rash Behari Bose)-সহ বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীর প্রচুর দুষ্প্রাপ্য ছবি ও নথি। আছে আরেক মহান বিপ্লবী মোতিলাল রায়ের (Motilal Roy) সম্পর্কে বহু অজানা তথ্য। আছে তথ্যের পাহাড়।
চন্দননগরের রথ প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো। সেই সময়কার রথের সামনের দুটি ঘোড়া বহুদিন ধরে পরিত্যক্ত হয়ে কোন অখ্যাত মালখানায় পড়েছিল। দেবাশিস সরকার খুঁজে সেই মালখানা থেকে কাঠের ঘোড়া দুটি সংরক্ষণ করে সেগুলো সারিয়ে স্থান দিয়েছেন এই মিউজিয়ামে। মিউজিয়ামে আছে তৎকালীন সময়ের টাইপ রাইটার, তাঁতযন্ত্র। আছে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ব্যবহৃত ধুতি ও গামছা। সব কিছুই দেবাশিস সরকারের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল।
যদিও একাজের কৃতিত্ব একা নিতে নারাজ দেবাশিস সরকার। তাঁর কথায়, "একসময় এই কলেজেরই সহ অধ্যক্ষ চারু চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে সশস্ত্র বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের আখড়া হয়ে উঠেছিল চন্দননগর কলেজ। এই অপরাধে দীর্ঘ ২৩ বছর বন্ধ করা হয়েছিল কলেজটি। ভারতবর্ষের ইতিহাসে এটা বিরলতম ঘটনা। তারপরেও এই কলেজ আবার ফিরে এসেছে স্বমহিমায়। অনেকদিন ধরেই ইচ্ছা ছিল সেই ইতিহাস যদি আমরা কোনও সংগ্রহশালায় তুলে ধরতে পারি তাহলে আগামী প্রজন্ম অন্তত জানতে পারবে এই চন্দননগর স্বাধীনতা সংগ্রামে কীভাবে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল। এই কাজে সঙ্গে পেয়েছি সেইসব মানুষদের দের যাঁরা এই ধরণের কর্মকাণ্ড আগেও বিভিন্ন জায়গায় সুনামের সঙ্গে করেছেন।"
তিনি আরও জানান, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে এই চন্দননগরের এই মিউজিয়াম স্থান পেয়েছে। যার জন্য কলকাতা থেকে প্রতি শনি ও রবিবার ক্রুজে চেপে যে সমস্ত বিদেশের পর্যটকরা চন্দননগর বেড়াতে আসেন তাঁরা এই মিউজিয়াম দেখে যান। পাশাপাশি কিছু হস্তশিল্পের নিদর্শন দেখা যায় ওই সংগ্রহশালার সামনে। নির্দিষ্ট মূল্যে অনেকেই তা কেনেন। শনিবার ও রবিবার দুপুর ৩ - ৫টা। এই মিউজিয়াম খোলা হয় সর্বসাধারণের জন্য। জনপ্রতি টিকিট মূল্য ৫ টাকা।