শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে নেমে একের পর এক রাঘববোয়ালকে জালে পুরে চলেছে সিবিআই। তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় জারি থাকার মাঝেই এবার এমবিবিএসে ভর্তির নামে প্রতারণার একটি বড়সড় চক্রের হদিশ পেল পুলিশ। বর্ধমান থানার পুলিশ ওই প্রতারণা চক্রের চারজনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে। চক্রের বাকিদের নাগাল পেতে পুলিশ জোরদার তৎপরতা শুরু করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের নাম বিক্রম ঠাকুর, রহমান শেখ ওরফে রাজু, শেখ সান্টু ও পীযূষকান্তি ঘড়াই। শক্তিগড়ের সিনেমাতলা এলাকায় বিক্রমের বাড়ি। উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর থানার বামনগাছির পূর্বপাড়ায় রহমানের বাড়ি, অন্যদিকে ধৃত সান্টুর বাড়ি কলকাতার কসবা থানার প্রসন্ন নস্কর লেনে এবং নরেন্দ্রপুর থানার তেঁতুলবেড়িয়ার নতুনপাড়ায় পীযূষের বাড়ি। শুক্রবার গভীর রাতে পুলিশ বাড়ি থেকে চারজনকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের কাছ থেকে কিছু আপত্তিকর নথিও পুলিশ পেয়েছে । তার মধ্যে গ্রুপ-ডি পদের একটি নিয়োগপত্রও রয়েছে বলে পুলিশের দাবি। ধৃতদের ব্যবহৃত একটি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রতারণা চক্রে আরও কয়েকজন জড়িত বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
এই চক্রের জাল জেলায় জেলায় ছড়িয়ে রয়েছে বলে পুলিশের অনুমান। পুলিশ জানিয়েছে, কেবল এমবিবিএসে ভর্তির নামে নয়, বিভিন্ন সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েও টাকা হাতানোয় এই গ্যাংটি জড়িত। চক্রের বাকি অভিযুক্তদের নাগাল পেতে এবং হাতানো টাকা
উদ্ধারের জন্য চার ধৃতকে শনিবার বর্ধমান আদালতে পেশ করে পুলিশ ১০ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। রবিবার থেকে চলছে জেরা পর্ব ।
আরও পড়ুন- ‘একটা বুথেও তৃণমূল হারলে সেটা…..বুথ’, সাগরদিঘির প্রচারে এ কী বললেন অভিষেক!
পুলিশ কর্তাদের কথায় জানা গিয়েছে, কলকাতার কসবা থানার রাজডাঙা মেন রোডের বাসিন্দা শুভাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এবছরের ৭ জানুয়ারি একটি ফোন আসে। তাঁর মেয়ে নিট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু, র্যাঙ্কের কারণে তিনি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাননি। তিনি কাউন্সেলিংয়েও হাজির হননি। ফোনে মেয়েকে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। নমিনি কোটায় তাঁর মেয়েকে ভর্তি করে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয় তাঁকে।
ভর্তির জন্য সরকারি ফি ছাড়াও তাদের কমিশন দিতে হবে বলে জানানো হয়। প্রথমে প্রস্তাবে তিনি রাজি হননি। বেশ কয়েকবার ফোন আসার পর তিনি রাজি হন। ১৭ জানুয়ারি দুপুরে তাঁকে বর্ধমানে আসতে বলা হয়। সেইমতো তিনি বেলা দেড়টা নাগাদ মেয়েকে নিয়ে বর্ধমানে আসেন। বর্ধমান স্টেশনে শচীন নামে এক ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে।
আরও পড়ুন- আতঙ্ক বাড়াচ্ছে অ্যাডিনোভাইরাস! কলকাতায় একরত্তির মৃত্যুতে উদ্বেগ এবার চরমে
এরপর তাঁকে ও মেয়েকে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। শচীন কিন্তু কলেজের ভিতরে যায়নি। অন্য একজন তাঁদের কলেজের ভিতরে নিয়ে যায়। সেখানে কলেজের এক অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসারের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। কক্ষের বাইরে সেই প্রফেসারের নেমপ্লেট লাগানো ছিল। কক্ষের ভিতরে ডাক্তারের পোশাকে দু’জন ব্যক্তি ছিল। তাদের মধ্যে একজন তাঁর মেয়ের কাছ থেকে শিক্ষাগত যোগ্যতার সমস্ত নথিপত্রের আসল নেয়। এক সেট জেরক্সও নেওয়া হয়। এরপর তাঁদের কক্ষের বাইরে অপেক্ষা করতে বলা হয়।
কিছুক্ষণ পর প্রফেসার পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি বেরিয়ে আসেন। ওই ব্যক্তিই ভর্তির কাগজপত্র দেয়। ভর্তির নথিতে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের মতো সই করা ছিল। ভর্তির ফি বাবদ তাঁর কাছ থেকে ড্রাফ্ট নেওয়া হয়। ভর্তির জন্য তাঁর মেয়েকে ২৪ জানুয়ারি থেকে ২৯ জানুয়ারির মধ্যে কলেজে আসতে বলা হয়। পরে সেইসব নথিপত্র জাল বলে জানতে পারেন শুভাশিস। তিনি ঘটনার কথা জানিয়ে বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
আরও পড়ুন- নিশীথের বাড়ির কাছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপর গুলি চালানোর নিদান TMC-র? অডিও Viral
এমন বিস্ফোরক অভিযোগ পেয়েই জাল নথিপত্র তৈরি করে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ তদন্তে নামে । তদন্তে নেমে মেডিক্যাল কলেজের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পুলিশ সংগ্রহ করে । যে নম্বর থেকে প্রতারকরা ফোন করেছিল তার কল ডিটেলস রেকর্ডও পুলিশ সংগ্রহ করে। এই সবের সূত্রেই বিক্রমকে শনাক্ত করে পুলিশ। সেই গ্যাংয়ের অন্যতম মাথা বলে নিশ্চিত হন তদন্তকারীরা। তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকি তিনজনের নাম জানতে পারে পুলিশ। এরপর তাকে নিয়ে বাকিদের বাড়িতে হানা দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন- নিশীথের বাড়ি ঘেরাওয়ের প্রতিবাদে হুংকার BJP রাজ্য-জেলা সভাপতির, পাল্টা হুঁশিয়ারি তৃণমূলের