গ্রীষ্মের প্রবল উত্তাপের মধ্যে হওয়া বৃষ্টিপাতে বৃহস্পতিবার আপাত স্বস্তি মিললেও বজ্রপাতে পূর্ব বর্ধমান জেলায় মৃত্যু হল চার জনের। জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দফতরের তরফে জানানো হয়েছে যে, মৃতরা হলেন- মনসুর আলি শেখ (৩৫), খোকন শেখ (৪০), বাসুদেব রায় (৫২) ও আপাল লোহার (৪১)। তাঁরা যথাক্রমে ভাতার, কালনা, খণ্ডঘোষ ও মঙ্গলকোটের বাসিন্দা। এছাড়াও গুরুতর আহত হয়েছেন একজন। বজ্রপাতে একই দিনে জেলায় এত জনের মৃত্যুতে শঙ্কিত কৃষক মহল।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত মনসুর আলি শেখের বাড়ি ভাতারের বেলেণ্ডা গ্রামে। তাঁর বাবা আসগর আলি জানান, এদিন দুপুরে ছেলে মাঠ থেকে গরুর গাড়িতে ধান চাপিয়ে বাড়ির দিকে নিয়ে আসছিলেন। তখনই দূরে মেঘ ডাকার আওয়াজ হয়। মাঠ থেকে কিছুটা আসার পর আচমকাই তাঁর মনে হয় মাথার ওপর বজ্রপাত হল। ওই অবস্থার মধ্যে খানিকটা এগিয়ে পিছন দিকে তাকিয়েই দেখতে পান, ছেলে মনসুর উলটে পড়ে গেছে। ছুটে গিয়ে দেখেন, ছেলের শরীরে আর কোনও সার নেই।
আক্ষেপ প্রকাশ করে আসগর আলি বলেন, 'আমার ছেলে মনসুরের শুক্রবার ব্যাঙ্গালোর চলে যাওয়ার কথা ছিল। চাষের কাজে আমার কষ্ট দেখে ছেলে নিজেই বলল জমির ধান কেটে ঘরে ঢুকিয়ে দেবে। দু’বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। ছেলের সহযোগিতায় এক বিঘার মত জমির ফলন্ত ধান গাছ কেটে ঘরে ঢোকাতে পেরেছি। তারই মধ্যে বজ্রপাতে আমার ছেলের প্রাণ অকালে চলে গেল।'
অপর মৃত খোকন শেখের বাড়ি কালনা ১ ব্লকের কালীনগরের পশ্চিমপাড়া এলাকায়। পরিবারের সদস্যদের কথায়, 'এদিন খোকন বাড়ির কাছে থাকা পাটের জমিতে জল ধরানোর কাজ করছিলেন। ওই সময় বাজ পড়লে তিনি গুরুতর জখম হন। এরপর তাঁকে উদ্ধার করে কালনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত বলে জানান।'
একই ভাবে এদিন দুপুরে চাষের জমিতে ধান গাছ কাটার কাজ করছিলেন খণ্ডঘোষের তোরকোনা গ্রামের বাসিন্দা বাসুদেব রায়। পরিবারের সদস্যরা জানান, জমিতে ধান গাছ কাটার কাজ করার সময়েই বাসুদেব বজ্রাঘাতে জখম হয়ে জমিতে লুটিয়ে পড়েন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু, শেষ রক্ষা হয়নি। মঙ্গলকোটের জাঁহাপুর গ্রামের বাসিন্দা আপাল লোহারেরও এদিন মৃত্যু হয়েছে বজ্রাঘাতে।
আরও পড়ুন- গভীর পরিকল্পনা, স্কুলে তাণ্ডবে বন্দুক পেলেন কোথায়? নিজেই রহস্য ফাঁস বন্দুকবাজের
পাশাপাশি, বজ্রাঘাতে গুরুতর জখম হয়েছেন বর্ধমান থানার নতুনগ্রামের বাসিন্দা মফুজা বেগম। এদিন তিনিও চাষের জমি থেকে ধান তোলার কাজ করছিলেন। তখনই বজ্রাঘাতে গুরুতর জখম হন। প্রবল আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।